মনােবিদরা ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাসের কারণ

মনােবিদরা ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাসের কারণ

বিভিন্ন কারণে প্রেষণা হ্রাস পেতে পারে। মনােবিদগণ প্রেষণা হ্রাসের যে কারণগুলি চিহ্নিত করেছেন সেগুলি হল—

(১) উদবেগ বা উৎকণ্ঠা: মনােবিদগণের প্রেষণা হ্রাসের জন্য চিহ্নিত কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল উদবেগ বা উৎকণ্ঠা। উদবেগ প্রেষণার উপর প্রভাব বিস্তার। করে প্রেষণার গতিবেগ কমিয়ে দেয়। প্রেষণার সঙ্গে উদবেগের সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ উদবেগ বাড়লে প্রেষণা কমে, উদবেগ কমলে প্রেষণা বাড়ে। কোনাে ব্যক্তির মধ্যে কোনাে বিষয়ে যদি উদবেগ সৃষ্টি হয় তাহলে ওই বিষয়ে ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাস পাবে।

(২) উৎসাহ বা আগ্রহের অভাব : প্রেষণা হ্রাসের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল উৎসাহ বা আগ্রহের অভাব। প্রেষণার সঙ্গে আগ্রহের নিবিড় সমানুপাতিক সম্পর্ক বর্তমান। অর্থাৎ আগ্রহ হ্রাস পেলে প্রেষণা হ্রাস পাবে আবার আগ্রহ বৃদ্ধি পেলে প্রেষণা বৃদ্ধি পাবে। যেমন - কোনাে ছাত্রের ইংরেজি শেখার বিষয়ে উৎসাহ না থাকলে ওই বিষয়ে প্রেষণা হ্রাস পাবে।

(৩) অনুকূল পরিবেশ : শিক্ষার্থীর কর্মের পরিবেশ যদি যথােপযুক্ত না হয় তাহলে সে কাজের প্রতি প্রেষণা হারাবে। পারস্পরিক বিশ্বাস, সহযােগিতা, সহানুভূতি প্রভৃতির অভাবে শিক্ষার্থীর মধ্যে কর্মাভিমুখী প্রেষণা বৃদ্ধি পায় না।

(৪) বিষয়বস্তুর কাঠিন্যমাত্রা : এটা পরীক্ষিত সত্য যে, অতি সহজ বস্তু বা অতি কঠিন বিষয় ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাসের কারণ। অর্থাৎ কোনাে বিষয় যদি খুব সহজ হয় বা খুব কঠিন হয় তাহলে শিক্ষার্থীর অনুকূল পরিবেশ শিক্ষার্থীর কর্মের পরিবেশ যদি যথােপয়র প্রেষণা হ্রাস পায়।

(৫) কৌতুহলের অভাব : কৌতূহল ব্যক্তির নব নব সৃষ্টিতে উৎসাহিত করে বা প্রেরণা জোগায়। আর কৌতূহলের অভাব ব্যক্তিকে কর্মে বাধা দান করে। কোনাে বিষয়ে যদি ব্যক্তির কৌতুহল না থাকে তাহলে সে এই বিষয়ের প্রতি আগ্রহ দেখাবে না। এর অর্থ হল উক্ত বিষয়ে ব্যক্তির প্রেষণা বৃদ্ধি পাবে না।

(৬) বারংবার ব্যর্থতা : কোনাে শিক্ষার্থী যদি কোনাে একটি কাজে বার বার ব্যর্থ হয় তাহলে ওই কাজের প্রতি তার উৎসাহ একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে তার মধ্যে ওই বিষয়ের প্রতি প্রেষণ হ্রাস পায়।

(৭) নিরাপত্তার অভাব : ব্যক্তি সর্বদা নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে চায়। কোনাে কারণে সে নিরাপত্তার অভাববােধ করলে তার মধ্যে প্রেষণা হ্রাস পায়।

(৮) প্রক্ষোভজনিত কারণ : অনেক সময় প্রক্ষোভজনিত কারণে শিক্ষার্থীর প্রেষণা হ্রাস পায়। লজ্জা, ঘৃণা, ভয় প্রভৃতি আবেগগুলি কখনাে কখনাে শিক্ষার্থীর প্রেষণা সৃষ্টির পথে অন্তরায় হয়ে দাড়ায়।

(৯) আত্মসম্মানের চাহিদাপূরণ না হওয়া : মনােবিদ ম্যাসলাে (Maslow)-র মতে, আত্মশ্রদ্ধার চাহিদা ব্যক্তির আত্মসম্মানের প্রেষণার উন্মেষ ঘটায়। অর্থাৎ ব্যক্তির আত্মশ্রদ্ধার চাহিদা ঠিকমতাে পূরণ না হলে সে পরবর্তী পর্যায়ে চাহিদাপূরণে উৎসাহী হবে না। ফলে তার মধ্যে প্রেষণা জাগ্রত হবে না।

(১০) শারীরিক এবং মানসিক অক্ষমতা : শারীরিক এবং মানসিকভাবে দুর্বল ব্যক্তি সর্বদা হীনম্মন্যতায় ভােগে। হীনম্মন্যতায় ভুগতে ভুগতে তারা নিজেদের যােগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে এবং একসময় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। ফলে এরা সমস্ত কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। তখন কোনাে কাজের প্রতি এরা উৎসাহ দেখায় না।

(১১) লক্ষ্যের অভাব : লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট না হলে শিক্ষার্থী যেরকম সঠিক বিষয়ে আলােকপাত করতে পারে না, তেমনি আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যায়।

(১২) অত্যধিক কাজের চাপ : কাজের চাপ অতিরিক্ত হলে সেই বিষয়ের প্রতি ক্রমশ আগ্রহ কমতে থাকলে প্রেষণার মাত্রাও হ্রাস পেতে থাকে।

(১৩) খারাপ ব্যবহার : কাজের স্থানে কর্মকর্তার খারাপ ব্যবহার বা শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষিকার খারাপ ব্যবহার প্রেষণার মাত্রা হ্রাস করে।