শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টিতে শিক্ষকের ভূমিকা

শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টিতে শিক্ষকের ভূমিকা

শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষিকার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিভার বিকাশ সম্ভব। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন-অভিমুখী প্রেষণা সৃষ্টিতে শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষালয়ে অর্থাৎ শ্রেণি শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণা সৃষ্টিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করবেন—

(১) পুরস্কার: প্রেষণা সৃষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগত (মূর্ত) মাধ্যম হল পুরস্কার। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টির জন্য শিক্ষক মহাশয় পুরস্কারের ব্যবস্থা করবেন। পুরস্কার মূর্ত বা বিমূর্ত-যাইহােক না কেন, শিক্ষকের লক্ষ রাখা উচিত সেই পুরস্কারকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীর অভ্যন্তরীণ প্রেষণা সৃষ্টি হচ্ছে কিনা। পুরস্কার শিক্ষার্থীর আত্মপ্রত্যয় এবং আত্মতৃপ্তি দান করে। এই প্রসঙ্গে মনােবিদ বার্নার্ড বলেছেন, "শিখনের জন্য পুরস্কার এরূপ হওয়া উচিত যাতে সেগুলি প্রাথমিক ভূমিকার পর শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীর শিখনের কার্যাবলিকে পরিচালিত করবে"। 

(২) লক্ষ্য স্থির : প্রেষণা লক্ষ্যের অভিমুখকে নির্দেশ করে প্রেষণা লক্ষ্যস্তরে পৌছােতে সাহায্য করে। শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত হবেন, তারপর সেই লক্ষ্যপথে চলার জন্য প্রেষণার জোগান দেবেন। 

(৩) প্রশংসা : প্রশংসাও একপ্রকার অমূর্ত পুরস্কার। প্রশংসা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রেষণা সঞ্চার করে। শিক্ষার্থীদের কাজের প্রশংসা করলে তারা উৎসাহিত হয় এবং তাদের কর্মমুখী প্রেষণা জাগ্রত হয়। পুরস্কারের মতাে প্রশংসাও শিক্ষার্থীদের আত্মশ্রদ্ধা ও আত্মস্বীকৃতির চাহিদাকে পরিতৃপ্ত করতে সাহায্য করে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক মহাশয় যদি শিক্ষার্থীদের ছােটো ছােটো সাফল্যের প্রশংসা করেন তাহলে তারা উজ্জীবিত হবে এবং যে-কোনাে কাজের প্রতি উৎসাহ দেখাবে। 

(৪) সহযােগিতা ও প্রতিযােগিতা : পারস্পরিক সহযােগিতা ও প্রতিযােগিতার মনােভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। দলগত কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এইসব সামাজিক গুণের অধিকারী হয়। তাই শিক্ষকের উচিত বিদ্যালয়ে দলগতভাবে কাজ করার সুযােগ বৃদ্ধি করা। এটি করতে পারলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযােগিতা ও প্রতিযােগিতার মনােভাব বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের কর্মের প্রতি উৎসাহ জোগাবে। এই প্রসঙ্গে মনােবিদ সাইমন্ড বলেছিলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিযােগিতা, সামাজিক বাস্তবের আঙিনায় মাধুর্যপূর্ণ সুযােগসুবিধা দান করে।  

(৫) শাস্তি ও নিন্দা : অনেকসময় শাস্তি অনেক খারাপ আচরণ থেকে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করে। কিন্তু নিন্দায় ব্যক্তিত্বের অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করা যায়। তাই শিক্ষক খুব সতর্কভাবে এইসকল উদবােধকগুলি ব্যবহার করবেন। 

(৬) সাফল্যলাভে সহায়তা : সাফল্যলাভের আগাম বার্তা শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রত্যয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীদের সাফল্য সম্পর্কে সুনিশ্চিত করা। আর শিক্ষার্থী যদি কাজে সাফল্য পায় তাহলে তার মধ্যে শিখনের প্রতি প্রেষণা জাগ্রত হয়। সাফল্য ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবােধের চাহিদাকে জাগিয়ে দেয়। সাফল্য প্রসঙ্গে মনােবিদ এম ব্রাউন বলেছেন, ‘বিদ্যালয়ের কাজকর্ম পর্যাপ্তভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ হওয়া উচিত, তাহলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার ক্ষমতা অনুযায়ী। সফল হতে পারে।

(৭) ঘাটতিপূরণ : কোনাে শিক্ষার্থীর যে বিষয়ে দুর্বলতা বা ঘাটতি লক্ষ করা যাবে সেই বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকার দ্বারা সৃষ্ট উদ্দীপনায় সঠিক সাড়া আসবে। 

(৮) মূল্যায়নের ব্যবস্থা : শিখনের প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রেষণা জাগ্রত করতে হলে বিদ্যালয়ে যথার্থ মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর মনােভাবকে উদ্দেশ্যমুখী করে। মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থী আত্মসংশােধনের সুযােগ পায়। তাই শিক্ষক যদি অল্প সময়ের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা দান করতে পারেন বা ধারাবাহিক উন্নতির মূল্যায়ন করতে পারেন তাহলে শিক্ষার্থীদের মনে প্রেষণার উন্মেষ ঘটে।

(৯) প্রতিলিপির ব্যবহার : শিক্ষার্থীদের নিকট উদাহরণ হিসেবে কোনাে ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতিলিপি ব্যবহারের মাধ্যমে (শ্রেণিকক্ষের মধ্যে) শিক্ষার্থীদের প্রেষণার সার ঘটে।


(১০) উচ্চাকাঙ্ক্ষা : উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়া জীবনে সাফল্য পাওয়া যায় না। তাই শিক্ষকের কাজ হবে শিক্ষার্থীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার স্তরটিকে উন্নীত করা। শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রেষণা জাগ্রত করতে হলে পাঠক্রমে এমন বিষয়বস্তু। নির্বাচন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত হয়।