স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ আলােচনা করাে | ইন্দ্রিয়জাত স্মৃতি, ইচ্ছাজাত স্মৃতি,

স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ

স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়া সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়ে প্রাচীন মনােবিদরা বলেছিলেন, স্মরণক্রিয়ার কোনাে শ্রেণিভাগ হয় না। তবে আধুনিক মনােবিদদের মতে, এই স্মরণক্রিয়াকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

(১) ইন্দ্রিয়জাত স্মৃতি 

ইন্দ্রিয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা স্মৃতিকে ইন্দ্রিয়জাত স্মৃতি বলে। প্রত্যক্ষণের বিভিন্নতা অনুযায়ী স্মৃতিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—

(1) দর্শন স্মৃতি: দর্শন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা স্মৃতিকে দর্শন স্মৃতি বলে। এইপ্রকার স্মৃতি দর্শনগত প্রত্যক্ষণের প্রভাবে ঘটে। যাদের দর্শনগত স্মৃতি প্রখর তারা দর্শন ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

(2) শ্রবণগত স্মৃতি: শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা স্মৃতিকে শ্রবণ স্মৃতি বলে। এই ধরনের স্মৃতি শ্রবণগত প্রত্যক্ষণের প্রভাবে ঘটে থাকে
(3) ঘ্রানজাত স্মৃতি: ঘ্রানেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা স্মৃতিকে ঘ্রাণজাত স্মৃতি বলে। এই জাতীয় স্মৃতি ঘ্রাণগত প্রত্যক্ষণের প্রভাবে ঘটে থাকে।

(4) স্পর্শগত স্মৃতি: এই জাতীয় স্মৃতি স্পর্শগত প্রত্যক্ষণের প্রভাবে ঘটে থাকে।

(5) স্বাদমূলক স্মৃতি: এই জাতীয় স্মৃতি স্বাদেন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণের প্রভাবে ঘটে থাকে।

(২) ইচ্ছাজাত স্মৃতি 

(1) সক্রিয় স্মৃতি: যখন শিক্ষার্থী মনে রাখার জন্য তার নিজস্ব মানসিক ইচ্ছাশক্তিকে প্রয়ােগ করে, তখন তাকে সক্রিয় স্মৃতি বলে।

(2) নিষ্ক্রিয় স্মৃতি: যখন মনে রাখার জন্য শিক্ষার্থীর মানসিক প্রচেষ্টার প্রয়ােজন হয় না, তখন তাকে নিষ্ক্রিয় স্মৃতি বলে। 

(৩) অভিজ্ঞতা অনুযায়ী 

(1) ব্যক্তিগত স্মৃতি: এই জাতীয় স্মৃতি ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রত্যক্ষণের প্রভাবে ঘটে থাকে। 

(2) নৈর্ব্যক্তিক স্মৃতি: বস্তুগত প্রত্যক্ষণের প্রভাবে গড়ে ওঠা স্মৃতিকে নৈর্ব্যক্তিক স্মৃতি বলে।

(৪) স্থায়িত্ব অনুযায়ী স্মৃতি

(1) তাৎক্ষণিক স্মৃতি: শিখনের পর অল্প সময়ের ব্যবধানে স্মরণ করাকে তাৎক্ষণিক স্মৃতি বলে। এই প্রকার স্মৃতিতে সংরক্ষণের স্থায়িত্ব করাকে তাৎক্ষণিক স্মৃতি বলে। এইপ্রকার স্মৃতিতে সংরক্ষণের স্থায়িত্ব কয়েক সেকেন্ড মাত্র। পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা এইরূপ স্মৃতির আশ্রয় গ্রহণ করে। এর ফলে পরীক্ষা দেওয়ার পর এটি বিস্মৃত হয়।

(2) দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি: পূর্ব অভিজ্ঞতা যখন দীর্ঘ সময় ধরে স্মৃতিতে সঞ্চিত থাকে, তখন তাকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি বলে।

(৫) সংগঠনগত

(1) ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি: এইপ্রকার স্মৃতি কোনাে মানসিক সংগঠন গড়ে তােলে না। এই স্মৃতির মাধ্যমে সংরক্ষিত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে সচেতন থাকে।

(2) স্থায়ী স্মৃতি: এই স্মৃতির অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিন মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়। এই স্মৃতির অভিজ্ঞতা ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি থেকে আসে। 

(৬) শিখন কৌশলগত স্মৃতি

মনােবিদ Bargson (বার্গস) কৌশলগত স্মৃতিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা— 

(1) অভ্যাসগত স্মৃতি বা যান্ত্রিক স্মৃতি: অভ্যাসবশত আমরা যখন কোনাে ঘটনাকে স্মরণ করি তখন তাকে অভ্যাসগত স্মৃতি বলে। পুনঃপুনঃ চর্চার মাধ্যমে ব্যক্তি এই স্মৃতি যখন আয়ত্ত করে না বুঝে তখন বারবার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শিখন হয় বলে এটিকে যান্ত্রিক স্মৃতি বলে।

(2) প্রকৃত বা যৌক্তিক স্মৃতি: অন্যদিকে বিষয়বস্তুর অর্থ উপলদ্ধি করে মানসিক কল্পনার সাহায্যে আমরা যখন কল্পনা করি তখন তাকে প্রকৃত স্মৃতি বা যৌক্তিক স্মৃতি বলে। এই কারণে যুক্তিশক্তিরও প্রয়ােজন হয়। অবশেষে আলােচনা থেকে এটা বলা যায় যে, আমরা যেভাবেই বিষয়বস্তু আয়ত্ত করি না কেন, প্রয়ােজনে যথােপযুক্ত বিষয়বস্তু সঠিক সময়ে মনের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে পারলে শিক্ষা সফল হবে।