মনোেযােগ কাকে বলে | মনােযােগের স্বরূপ বা প্রকৃতি আলােচনা করাে।

মনােযােগের সংজ্ঞা

কোনাে বিষয়ের সঙ্গে মনের যােগকে মনােযােগ বলে। উদ্দেশ্যপূরণের জন্য যখন কোনাে বস্তুকে আমরা চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে হাজির করি তখন তাকে মনােযােগ বলে। অর্থাৎ কোনাে বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে মনকে নিবিষ্ট করার দৈহিক-মানসিক প্রক্রিয়াকে মনােযােগ বলে।

অন্যভাবে বলা যায় যে, নির্বাচনধর্মী মানসিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে অনেকগুলি বিষয়ের মধ্য থেকে কোনাে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মনােনিবেশ করতে পারাকে মনোেযােগ বলে। মনােবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে মনােযােগের সংজ্ঞা দিয়েছেন一
  • মনােবিদ স্টাউট (Stout): স্টাউট-এর মতে, মানুষের জ্ঞান প্রক্রিয়ার পেছনে যে মানসিক সক্রিয়তা কাজ করে তাকে মনােযােগ। বলে। মানুষের সক্রিয়তা যত বেশি হবে মনােযােগ তত বেশি হবে।
  • মনােবিদ রস (Ross): রস-এর মতে, কোনাে চিন্তার স্পষ্ট চেতনাই হল মনােযােগ।
  • মনােবিদ ফ্লেচার (Fletcher): ফ্লেচার-এর মতে মনােযােগ হল এমন এক প্রক্রিয়া যা ইন্দ্রিয়কে উদ্দীপিত করে পরিবেশের পর্যবেক্ষিত বিষয়গুলি থেকে কিছু বিষয়কে গ্রহণ ও বাকিগুলিকে বর্জন করে।

মনোযোগের স্বরূপ  বা প্রকৃতি

মনােযােগ হল নির্বাচনধর্মী মানসিক প্রক্রিয়া, সংরক্ষণ বা ধারণক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। মনােযােগের স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, মনােযােগ একটি অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া যা মানুষের মধ্যে সর্বদাই বর্তমান থাকে। কোনাে কিছু জানতে গেলে, বুঝতে গেলে বা বিচার করতে গেলে মনােযােগের প্রয়ােজন হয়। তাই কোনাে কোনাে মনােবিদ মনোেযােগকে সচেতন প্রক্রিয়ার মস্তিষ্ক বলে আখ্যা দিয়েছেন। নীচে মনােযােগের প্রকৃতি বিশদভাবে আলােচনা করা হল—

(1) জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়া : মনােযােগের মাধ্যমে আমরা জ্ঞানলাভ করে থাকি। তাই এটি জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়া।

(2) কর্মমূলক প্রক্রিয়া : মনােযােগের সাহায্যে কোনাে বস্তু বা ব্যক্তির প্রতি আমাদের চেতনাকে নিবদ্ধ করি এবং সক্রিয় হই। তাই এটি কর্মমূলক প্রক্রিয়া।

(3) সংরক্ষণের শর্ত : সংরক্ষণের বা ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল মনােযােগ। যেসকল বিষয়ে আমরা মনােযােগ দিই না সেইসকল বিষয় আমরা ধারণ করতে পারি, তবে যেসকল বিষয়ে আমরা মনােযােগ দিই , সেইসকল বিষয় আমরা সংরক্ষণ করতে পারি না।

(4) অনুভুতিমূলক : মনোেযােগ কোনাে বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে মানবমনে বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করে, আত্মসচেষ্ট হতে সাহায্য করে, তাকে বলে অনুভূতিমূলক প্রক্রিয়া।

(5) নির্বাচনধর্মী : মনােযােগ একপ্রকার নির্বাচনধর্মী মানসিক প্রক্রিয়া। মনােযােগের বিষয়টি থাকে চেতনার কেন্দ্রে।

(6) নির্ধারক : মনােযােগের বস্তুগত ও ব্যক্তিগত এই দু-ধরনের নির্ধারক রয়েছে।

(7) জ্ঞানার্জনের কৌশল : মনােযােগ এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আমরা জ্ঞান অর্জন করে থাকি।

(8) ইচ্ছাধীন মানসিক প্রক্রিয়া : মনােযােগ ব্যক্তির ইচ্ছাধীন একটি মানসিক প্রক্রিয়া। ব্যক্তি ইচ্ছা করলে তবেই বিশেষ দিকে তার মনােযােগকে চালিত করতে পারে।

(9) অস্থির প্রকৃতির : মনােযােগ সর্বদা অস্থির প্রকৃতির হয়। অর্থাৎ এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে মনােযােগ বিক্ষিপ্ত হয়।

(10) ক্ষেত্রসীমা : মনােযােগের ক্ষেত্রসীমা সংকীর্ণ, কারণ কোনাে একটি সময় কোনাে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি মনােযােগ কেন্দ্রীভূত হয়।

(11) শর্তসাপেক্ষ : মনােযােগ কতকগুলি শর্ত বা নির্ধারকের দ্বারা পরিচালিত হয়। এগুলি সুকৌশলে প্রয়ােগ করলে শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মনােযােগ বৃদ্ধি করা যায়। মনােযােগের নির্ধারকগুলিকে ব্যক্তিগত এবং বস্তুগত এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

(12) দুই স্তরবিশিষ্ট : মনােযােগের দুটি স্তর আছে। যথা—
  • কেন্দ্রীয় স্তর ও
  • প্রান্তীয় স্তর।
(13) ইন্দ্রিয়গত পরিবর্তন : মনােযােগের সময় দৈহিক ইন্দ্রিয় গত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ আমরা যার প্রতি মনােযােগ দিই সেইদিকেই আমাদের চোখ, কান চলে যায়।

মনােযােগের প্রকৃতি থেকে বােঝা যায়, যে-কোনাে জিনিসের থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন বা জ্ঞানার্জন করতে গেলে মনােযােগ বা একাগ্রতা দরকার। এই মনােযােগ কেন্দ্রীয় স্তর বা অংশ থেকে প্রান্তীয় স্তরের দিকে যায়। আবার প্রান্তীয় স্তর থেকে কেন্দ্রীয় স্তরের দিকে যায়।