প্রেষণার নির্ধারক বলতে কি বোঝো | প্রেষণার উল্লেখযােগ্য শর্ত আলোচনা করো

প্রেষণার নির্ধারক

কতকগুলি শর্ত বা উপাদানের উপর প্রেষণা নির্ভরশীল। ওই শর্ত বা উপাদানগুলিকে প্রেষণার নির্ধারক বলে। প্রেষণার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বা নির্ধারকগুলি হল— অনুরাগ, কৌতূহল, জীবনাদর্শ, মূল্যবােধ, উৎকণ্ঠা, অভ্যাস প্রভৃতি। মনােবিদগণ গবেষণার মাধ্যমে দেখেছেন, কতকগুলি শর্ত রয়েছে যাদের বলে প্রেষণার নির্ধারক। নীচে এগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল—

প্রেষণার শর্ত

(1) অনুরাগ বা আগ্রহ: প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক বা শর্ত হল আগ্রহ বা অনুরাগ। অর্থাৎ প্রেষণা সৃষ্টিতে আগ্রহ বিশেষভাবে সাহায্য করে। যে বস্তু কোনাে-না-কোনাে চাহিদা পরিতৃপ্তিতে সাহায্য করে সেই বস্তুর প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ জন্মায়। এর অর্থ হল ওই বস্তুকে কেন্দ্র করে ব্যক্তির প্রেষণা জাগ্রত হয়। যেমন— প্রাচীন ঐতিহাসিক উপাদান। মুদ্রা, অলংকার সংগ্রহ করা প্রভৃতি।

(2) উদ্‌বােধক : বিভিন্ন ধরনের উদবােধক লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করে, ব্যক্তির মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টি করে। এই উদবােধক বিমূর্ত বা মূর্ত দু-প্রকারেই হয়।

(3) কৌতুহল : ব্যক্তির প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হল কৌতূহল। কৌতুহল হল জানার আকাঙ্ক্ষা। কোনাে বিষয় বা বস্তুর প্রতি ব্যক্তির কৌতূহল সৃষ্টি হলে সেই বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভ না হওয়া পর্যন্ত তার মধ্যে একপ্রকার অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়। তা থেকে একধরনের প্রেষণার সৃষ্টি হয়।

(4) পরিবেশ : কোনাে কাজে প্রেষণা সৃষ্টিতে ব্যক্তির চারপাশের পরিবেশ অনুকূল থাকা দরকার। প্রতিকূল পরিবেশে প্রেষণা সৃষ্টি হতে পারে না।

(5) উৎকণ্ঠা বা উদবেগ : উদবেগ বা উৎকণ্ঠাও একপ্রকার অস্বস্তিকর অনুভূতি। বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যক্তি কখনাে কখনাে উদবিগ্ন হয়। এর ফলে তার মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টি হয়। উদবেগ প্রেষণাবর্ধক উপাদান। অর্থাৎ উদবেগ বাড়লে প্রেষণা বাড়ে, আবার উদবেগ না থাকলে প্রেষণা কমে যায়।

(6) জীবনাদর্শ : প্রত্যেকের জীবনে একটি আদর্শ থাকা উচিত, যাকে জীবনাদর্শ বলে। উপযুক্ত জীবনাদর্শই ব্যক্তির আচরণকে লক্ষ্যাভিমুখী করে। কোনাে ব্যক্তির জীবনাদর্শ তার প্রেষণা সৃষ্টির অন্যতম নির্ধারক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(7) সাফল্য : জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তি সাফল্য আশা করে। ব্যক্তি কোনাে কাজে সাফল্যলাভ করলে সেই কাজের প্রতি তার অনুরাগ বা ভালােবাসা জন্মায়। পরবর্তীকালে ওই কাজটি আরও ভালাে করে সম্পাদন করার ইচ্ছা জন্মায়। অর্থাৎ এই কাজকে কেন্দ্র করে ব্যক্তির মধ্যে প্রেষণার সঞ্চার হয়। তাই বলা যায়, সাফল্য প্রত্যক্ষভাবে ব্যক্তির  প্রেষণা ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।

(8) আত্মবিশ্বাস : নিজের দক্ষতা সম্পর্কে বিশ্বাস রাখাই হল আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাস ব্যক্তির মধ্যে প্রেষণা জাগ্রত করে।

(9) অবচেতন মনের ক্রিয়া : উদ্দেশ্যমুখী আচরণ অবচেতন মনের ইচ্ছার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কোনাে বিষয়ের প্রতি প্রবৃত্তি অন্তর্নিহিত উদ্দীপনার উৎস।

(10) মূল্যবােধ : মূল্যবােধ কোনাে অর্থমূল্য নয়। যা কিছু ভালাে, যা আমাদের প্রয়ােজনীয়, যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ এমন বস্তুর প্রতি মূল্য আরােপ করাকেই মূল্যবােধ বলে। অর্থাৎ সমাজে প্রচলিত ধ্যানধারণা, ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, সত্য-মিথ্যা বােধকেই মূল্যবােধ বলা যেতে পারে। মূল্যবােধ প্রেষণা ক্রিয়াকে কমবেশি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই ব্যক্তিজীবনে মূল্যবােধ প্রেষণার একটি তাৎপর্যপূর্ণ নির্ধারক।

শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক । শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব


প্রেষণার সংজ্ঞা নিরপণ করাে। সংক্ষেপে প্রেষণার চক্র বর্ণনা করো


প্রেষণার বৈশিষ্ট্যগুলি । প্রেষণার প্রকারভেদ