সামাজিক প্রেষণা কী? যে-কোনাে ছয় প্রকার সামাজিক প্রেষণা সম্পর্কে আলােচনা করাে।

সামাজিক প্রেষণা

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। অর্থাৎ দলবদ্ধভাবে বাস করার প্রবণতা মানুষের জন্ম থেকেই প্রাপ্ত হয়। এই কারণে নিরাপত্তা, ভালােবাসা, আত্মপ্রতিষ্ঠা, খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি সামাজিক চাহিদাগুলি তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। এই সামাজিক চাহিদাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির মধ্যে যেসব প্রেষণার উদ্রেক ঘটে তাকে সামাজিক প্রেষণা বলে।

এই ধরনের প্রেষণা যেমন- নিরাপত্তা (Safety), ভালােবাসা (Love), সংযুক্তি (Belongingness) ইত্যাদি। এইসকল প্রেষণা ব্যক্তিকে সামাজিক আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আচরণ সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে। শিশুর জীবনে সামাজিক প্রেষণা পরিবারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষেত্র বিস্তারলাভ করতে থাকে, তখন তা বৃহত্তর সমাজের আদর্শগুলিকে লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে প্রেষণার জাগরণ ঘটায়।

ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রেষণা হল

(1) খ্যাতি: খ্যাতি বা মর্যাদার প্রেষণাটি ব্যক্তির বংশগতি, ব্যক্তিত্ব এবং তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। খ্যাতির আকাক্ষা মানুষকে অধিক পরিশ্রমী করে তােলে। মনােবিজ্ঞানীদের মতে, বিভিন্ন বয়সে ব্যক্তির খ্যাতির প্রকাশ বিভিন্ন হয়।

(2) স্বীকৃতি: মানুষ স্বীকৃতি পেতে চায়। অর্থাৎ সব বয়সের সকল ব্যক্তিই সমাজের কাছ থেকে স্বীকৃতি আশা করে। সামাজিক প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল স্বীকৃতির চাহিদা। স্বীকৃতি বা প্রশংসা ব্যক্তির কর্মে উৎসাহ বৃদ্ধি করে।

(3) নিরাপত্তা: নিরাপত্তার অভাববােধ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক চাহিদা। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ নিরাপত্তার প্রয়ােজনে যে ধরনের চাহিদা অনুভব করে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট প্রেষণাকে নিরাপত্তার প্রেষণা বলে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, জল, বায়ু প্রভৃতি শিশুর দৈহিক নিরাপত্তামূলক প্রেষণা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভয় পেলে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দ্রুত পা চালাতে শুরু করে।

(4) যূথবদ্ধতা বা দলবদ্ধতা: পূর্বেই বলা হয়েছে মানুষ দলবদ্ধ জীব। সকল প্রাণীর মতাে মানুষও নিজ নিজ দলের সঙ্গে যুথবদ্ধভাবে থাকতে ভালােবাসে। এই যূথবদ্ধভাবে থাকার প্রয়ােজনে ব্যক্তির মধ্যে যে ধরনের সামাজিক প্রেষণার সৃষ্টি হয় তাকে দলবদ্ধতার প্রেষণা বা যূথবদ্ধতার প্রেষণা বলে। যূথবদ্ধতা হল একটি অর্জিত সামাজিক প্রেষণা। যেমন— বিদ্যালয়ে প্রবেশের পর শিক্ষার্থী বন্ধু খোঁজে এবং তাদের সঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবােধ করে।

(5) সাফল্য: পঞ্চম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রেষণা হল সাফল্যলাভের প্রেষণা। কেবল জৈবিক চাহিদা মেটানাে মানুষের শেষ কথা নয়। সে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এইরূপ ইচ্ছাকে সাফল্যলাভের প্রেষণা বলে। খ্যাতিলাভের মতাে সাফল্যলাভের প্রেষণাও মানুষকে অধিক পরিশ্রমী করে তােলে। সাফল্যলাভের প্রেষণা একদিকে যেমন ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে তেমনি সমাজেরও সার্বিক মঙ্গল হয়।

(6) আক্রমণাত্মক প্রেষণা: ষষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রেষণা হল আক্রমণাত্মক প্রেষণা। কোনাে ব্যক্তি যখন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছােতে ব্যর্থ হয় তখন তার মধ্যে একপ্রকার অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এর ফলে যে ধরনের প্রেষণার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তাকে আক্রমণাত্মক প্রেষণা বলে। অনেকসময় এই ধরনের প্রেষণা অন্য ব্যক্তির সাফল্যের ক্ষেত্রে বাধাপ্রদানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।