থর্নডাইকের বুদ্ধির প্রকারভেদ | বুদ্ধির শিক্ষাগত তাৎপর্য বা শিখনে মানসিক ক্ষমতার ভূমিকা

থর্নডাইকের বুদ্ধির প্রকারভেদ


মনােবিদ থর্নডাইক বুদ্ধিকে ৪টি বিভাগে বিভক্ত করেছেন। সেগুলি নীচে আলােচনা করা হল— 

  • মূর্ত বুদ্ধি : হাতেকলমে কাজের ক্ষেত্রে প্রয়ােজন হয় মূর্ত বুদ্ধির।


  • বিমূর্ত বুদ্ধি: ভাষার ব্যবহার, সংখ্যার ব্যবহার, চিন্তা, কল্পনা, যুক্তি নির্ণয় ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই বুদ্ধির প্রয়ােজন হয়।


  • সামাজিক বুদ্ধি: দৈনন্দিন জীবনে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার ক্ষেত্রে এই বুদ্ধি প্রয়ােজন হয়।


  • প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি: প্রাক্ষোভিক আচরণের ক্ষেত্রে এই বুদ্ধির প্রয়ােজন হয়।

বুদ্ধির শিক্ষাগত তাৎপর্য বা শিখনে মানসিক ক্ষমতার ভূমিকা


শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মানসিক ক্ষমতার গুরুত্ব অসীম। শিখনে মানসিক ক্ষমতার ভূমিকা নিম্নে আলােচনা করা হল— 


(1) সংগতিবিধান : মানসিক ক্ষমতা অতীত অভিজ্ঞতাকে কর্মক্ষেত্রে প্রয়ােগ করে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সংগতিবিধানে সমর্থ করে।


(2) জ্ঞানমূলক অগ্রগতি : শিক্ষার্থীর জ্ঞানমূলক অগ্রগতির সঙ্গে তার মানসিক ক্ষমতা তথা বুদ্ধির সম্পর্ক বর্তমান। শিক্ষার্থীর জ্ঞানমূলক অগ্রগতি কতটা হবে তা নির্ধারণ করে দেয় তার বুদ্ধি। 


(3) বৃত্তিমূলক নির্দেশনা : শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দানের ক্ষেত্রে মানসিক ক্ষমতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার্থীর বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয় করে বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দেওয়া দরকার, যাতে শিক্ষার্থী তার ক্ষমতা অনুযায়ী সঠিক বৃত্তি নির্বাচন করতে পারে।


(4) শিক্ষামূলক নির্দেশনা : শিক্ষামূলক নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এমন বিষয়বস্তু এবং পাঠক্রম নির্বাচনে সহায়তা করা যার মাধ্যমে তার জীবনে পরিপূর্ণ শিক্ষাগত সফলতা আসে। এই সফলতার মূলে থাকে মানসিক ক্ষমতা।


(5) দ্রুত কর্মসম্পাদন : মানসিক ক্ষমতা কোনাে মানসিক কাজ দ্রুত সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।


(6) সৃজন ক্ষমতার বিকাশ : মানসিক ক্ষমতা শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত  সৃজনক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করে। যেমন— ছবি আঁকা, মডেল তৈরি করা ইত্যাদি।


(7) মানসিক প্রক্রিয়ার সমন্বয় : মানসিক ক্ষমতার সাহায্যে শিখনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি তার কল্পনা, বিচারক্ষমতা, যুক্তি ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলির উন্নততর ব্যবহার ঘটাতে পারে।


(8) বাস্তব অভিজ্ঞতার গুরুত্ব নির্ণয় : মানসিক ক্ষমতা বিচারবিশ্লেষণ, যুক্তি ইত্যাদির দ্বারা যে-কোনাে বস্তুর অভিজ্ঞতার গুরুত্ব নির্ণয় করতে পারে।


(9) ভাষাবোেধ বিকাশ : মানসিক ক্ষমতা শব্দভাণ্ডার গঠন, ভাষাবােধ সৃষ্টি, তার সঠিক প্রয়ােগ তথা উন্নত ভাষাবােধের বিকাশ ঘটায়।


(10) সমস্যাসমাধান : শিখন পদ্ধতিতে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় মানসিক ক্ষমতার দ্বারা।


(11) উদ্দেশ্যসাধন : মানসিক ক্ষমতা মানুষের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তা করে।


(12) সম্বন্ধ স্থাপন : মানসিক ক্ষমতার সহায়তায় বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে এবং তার অংশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হয়, যা শিখনে সহায়তা করে।


(13) কর্মী নির্বাচন : বুদ্ধির অভীক্ষা ভবিষ্যৎ কর্মী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


(14) শিশু পরিচালনা : শিশুদের পরিচালনার ক্ষেত্রেও বুদ্ধির অভীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধির স্বল্পতা অনেক সময় শিশুদের অন্যায় আচরণের কারণ।