বুদ্ধির আধুনিক ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে।

বুদ্ধির আধুনিক ধারণা 

শিক্ষা মনস্তত্ত্বে সর্বাপেক্ষা অধিক আলােচিত মানসিক ক্ষমতাটি হল বুদ্ধি। সম্ভবত বুদ্ধির অস্পষ্টতাই এর প্রধান কারণ। সুদূর অতীতে বুদ্ধি ভিন্ন ভিন্ন নামে আলােচিত হত। যদিও আলােচনাগুলি বিজ্ঞানভিত্তিক ছিল না। বর্তমানে বুদ্ধির সংজ্ঞা এবং এর ব্যাখ্যা বহুল পরিমাণে বিভাজনভিত্তিক হলেও মনােবিদগণ এ ব্যাপারে সহমত হতে পারেননি। কারণ বুদ্ধি সম্পর্কে প্রাক-অনুমান বুদ্ধির সংজ্ঞাদাতাদের প্রভাবিত করে। আভিধানিক অর্থে বুদ্ধি হল— "The capacity to acquire and apply knowledge" অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন ও প্রয়ােগ করার ক্ষমতা হল বুদ্ধি।

হেব ও ক্যাটেল-এর মতে

(A)  বুদ্ধি/তরল বুদ্ধি : বুদ্ধি হল জন্মগতরূপ বা জেনােটাইপের অনুরূপ, যা পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জন্মগতসূত্রে পাওয়া যায়। এই ধরনের বুদ্ধি বাইরে থেকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। এই ধরনের বুদ্ধি মানুষের বিভিন্ন আচরণ নির্ধারণ করে।

(B)  বুদ্ধি/কেলাসিত বুদ্ধি : ফেনােটাইপের অনুরুপ হল ক্যাটেলের কেলাসিত বুদ্ধি বা হেব-এর B বুদ্ধি। এই বুদ্ধি জন্মগত, অর্জিত কোনােটিই নয়। এই বুদ্ধিকে বিভিন্ন মানসিক কাজের মধ্যে প্রত্যক্ষ করা যায়।

মনােবিদ ভার্নন-এর মতে 

মনােবিদ ভার্নন C বুদ্ধির কথা বলেছেন, যা A ও B বুদ্ধি থেকে আলাদা। এর ফলে দেখা যায়, বুদ্ধ্যঙ্ক একই হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতিভা ভিন্ন।

মনােবিদ থনডাইকের মতে 


(A ) বিমূর্ত বুদ্দ্বি : শব্দ, অক্ষর, সংখ্যা, কল্পনা ইত্যাদি বিমূর্ত চিন্তনের জন্য যে বুদ্ধির দরকার তাই হল বিমূর্ত বুদ্ধি। 

(B ) মূর্ত বুদ্ধি / কার্যকরী  বুদ্ধি : দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে চলার জন্য প্রত্যক্ষভাবে কোনাে কাজ করতে যে বুদ্ধির দরকার, তাকে বলে মূর্ত বুদ্ধি।

(C ) সামাজিক বুদ্ধি : দৈনন্দিন জীবনে সমাজে বসবাস ও অভিযােজনের প্রেক্ষিতে যে বুদ্ধির প্রয়ােজন হয়, তাকে বলে। সামাজিক বুদ্ধি।

 মনােবিদ গার্ডনার-এর মতে


(A )ভাষাগত বুদ্ধি : ভাষামূলক দক্ষতায় প্রয়ােজন এই বুদ্ধি।

(B ) যৌক্তিক বুদ্ধি : যুক্তি, তর্ক, গণিত ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই বুদ্ধি প্রয়ােজন।

(C )স্থান সংক্রান্ত বুদ্ধি : স্থান সম্পর্কিত জ্ঞান ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই বুদ্ধি প্রয়ােজন। 

(D) শরীর সংক্রান্ত বুদ্ধি : শরীরের বিভিন্ন অংশ দক্ষতামূলক ও উদ্দেশ্যমূলক কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে যে বুদ্ধির প্রয়ােগ ঘটে তাকে বলে শরীর সংক্রান্ত বুদ্ধি। 

(E) সংগীতধর্মী বুদ্ধি : সংগীতের সঙ্গে এই বুদ্ধি সম্পর্কিত।

(F) আন্তঃব্যক্তি বুদ্ধি : ব্যক্তির স্বতন্ত্র ক্ষমতার প্রকাশ ঘটায়। এর মাধ্যমে কোনাে ব্যক্তি তার অন্তর্নিহিত ক্ষমতাকে জানতে পারে।

(G) আন্তর্ব্যক্তিত্ব বুদ্ধি : কোনাে ব্যক্তির অন্যান্য ব্যক্তিদের বােঝার জন্য এই বুদ্ধির দরকার।

বুদ্ধি সম্পর্কে উপরােক্ত সংজ্ঞাগুলিকে বিশ্লেষণ করে বুদ্ধির একটি সামগ্রিক এবং গ্রহণযােগ্য সংজ্ঞা দেওয়া হয়। বুদ্ধি হল এমন এক ধরনের মানসিক শক্তি যা মানসিক বা জ্ঞানমূলক ক্ষমতার রূপ পায় এবং যার সাহায্যে ব্যক্তি নতুন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ মাত্রায় কার্যকরী অভিযােজনে সক্ষম হয়।