সাধারণ মানসিক ক্ষমতা কাকে বলে | স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্ব

সাধারণ মানসিক ক্ষমতা 

স্পিয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার উপর সমীকরণের জটিল পরিসংখ্যানগত কৌশল বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, জিনগতভাবে যে ক্ষমতা নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করে তাকে সাধারণ মানসিক ক্ষমতা বলে। এই মানসিক উপাদানের সহায়তায় মানুষ বিভিন্ন রকমের বৌদ্ধিক কাজকর্ম করে। এই মানসিক ক্ষমতা পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সংগতিবিধান করে চলে। এই মানসিক ক্ষমতা সমস্তরকম বৌদ্ধিক কাজের ক্ষেত্রে সর্বজনীনভাবে বর্তমান বলে স্পিয়ারম্যান এর নাম দিয়েছেন G উপাদান, যা General factor। এটি গুণগতভাবে এক; কিন্তু বিভিন্ন কাজে পরিমাণগতভাবে বিভিন্ন।

স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্ব

ব্রিটিশ মনােবিদ চার্লস ম্পিয়ারম্যান ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে American Journal of Psychology Us General intelligence objectively determined & measured প্রবন্ধে ‘দ্বি-উপাদান তত্ত্ব প্রকাশ করেন।

➽ মূল বক্তব্য: ম্পিয়ারম্যান তাঁর দ্বি-উপাদান তত্ত্বে বলেছেন, যে-কোনাে রকমের বৌদ্ধিক কাজ দুটি ভিন্ন জাতীয় ক্ষমতা বা শক্তির দ্বারা সম্পন্ন হয়। যথা—
  • G factor (General Mental Ability) বা সাধারণ মানসিক ক্ষমতা।
  • S factor (Special Mental Ability) বা বিশেষ মানসিক ক্ষমতা।

➽ জ্যামিতিক ব্যাখ্যা : স্পিয়ারম্যান দ্বি-উপাদান তত্ত্বটির জ্যামিতিক চিত্রের বৃত্তটিতে G হল সাধারণ উপাদানের ভাণ্ডার।


G বা সাধারণ ক্ষমতাকে বলে বুদ্ধি। দুটি কাজের মধ্যে G-এর পরিমাণ যত বেশি থাকবে ততই কাজ দুটির মধ্যে সহগতির মান বেশি হবে। জটিল কাজের জন্য সাধারণ মানসিক ক্ষমতার প্রয়ােজনীয়তা বেশি।

➽ গাণিতিক ব্যাখ্যা :

(১) সহগতির বিভিন্ন রূপ : স্পিয়ারম্যান বিভিন্ন বৌদ্ধিক কাজের পরীক্ষানিরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে আসেন যে, সমস্ত বৌদ্ধিক কাজের ক্ষেত্রে সাধারণ উপাদান ও বিশেষ উপাদানের মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। এই সম্পর্ককে গাণিতিক ভাষায় তিনি নাম দেন সহগতি। তিনি দুটি উপাদানের সম্পর্কের প্রকৃতি অনুযায়ী তিন ধরনের সহগতির কথা বলেন। যেমন一
  • ধনাত্মক সহগতি: কতকগুলি ক্রিয়া আছে যারা পরস্পর পরস্পরকে সহযােগিতা করে। অর্থাৎ একটির ক্ষেত্রে পরিবর্তন হলে অপরটির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে, এগুলি হল ধনাত্মক সহগতি। যেমন— অনুশীলনের সঙ্গে গণিতের পারদর্শিতা বিশেষভাবে যুক্ত। তাপমাত্রার সঙ্গে থার্মোমিটারের পারদের উচ্চতার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।
  • ঋণাত্মক সহগতি: যে ক্রিয়াগুলি পরস্পর পরস্পরকে সহযােগিতা করে না, সেগুলি হল ঋণাত্মক সহগতি অর্থাৎ একটির ক্ষেত্রে পরিবর্তন হলে অপরটির ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। যেমন– বইয়ের চাপ যত কমবে, শিশুর শিক্ষাগ্রহণে স্বতঃস্ফূর্ততা তত বাড়বে।
  • শূন্য সহগতি: পৃথিবীতে এমনও দুটি বিষয় আছে যাদের মধ্যে কোনাে সম্পর্ক নেই। যেমন— শারীরিক ক্ষমতার সঙ্গে স্মৃতির কোনাে সম্পর্ক নেই। এই ধরনের সম্পর্ককে বলা হয় শূন্য সহগতি।

➽ টেট্রাড সমীকরণ : সহগতির প্রকৃতি ও পরিমাণকে প্রকাশ করার জন্য এক ধরনের সংখ্যামান ব্যবহার করেন স্পিয়ারম্যান। এই সংখ্যামানকে প্রকাশ করা হয় যে পদ্ধতিতে তাকে বলে সহগতির সহগাঙ্ক (Co-efficient of Correlation)। যাকে ইংরেজি ‘r’-এর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। যেমন— দুটি বিষয় ইতিহাস (h) এবং ভূগােল (g)-এদের সহগতি নির্ণয় করতে চাইলে সহগাঙ্ককে আমরা rnhg-এর মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি। ম্পিয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেন, বিভিন্ন প্রকার সামর্থ্যের মধ্যে সহগতি আছে। এই সহগতি সদর্থক হলে তাদের মধ্যে সাধারণ সামর্থ্য আছে অর্থাৎ সদর্থক সম্পর্ক রয়েছে। তবে সেগুলি সহযােগিতা করে না, তাদের ঋণাত্মক সম্পর্ক তৈরি হয়।

স্পিয়ারম্যান-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, বৌদ্ধিক ক্রিয়াগুলির মধ্যে শুধুমাত্র ধনাত্মক সম্পর্ক থাকে। তিনি সম্পর্কের দৃঢ়তাকে একটি রাশিবৈজ্ঞানিক সূত্রের দ্বারা প্রকাশ করেছেন।



স্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্বের শিক্ষাগত গুরুত্ব অনেক। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৌদ্ধিক আচরণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব। বুদ্ধি সংক্রান্ত নানান আলােচনা, বুদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে এই তত্ত্বের সাহায্যে।