অপানুবর্তন । প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ার শিক্ষাগত তাৎপর্য

অপানুবর্তন

অনুবর্তন প্রক্রিয়ার পর যদি বিকল্প উদ্দীপকের সঙ্গে সাধারণ বা স্বাভাবিক উদ্দীপকের উপস্থাপন না করা হয়, তবে  প্রাণীর স্বভাবজাত আচরণ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনাকে অপানুবর্তন বলে

যেমন: প্যাভলভ তার পরীক্ষায় দেখেছেন কুকুরটির ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে লালাক্ষরণ। কিন্তু পরবর্তীকালে ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে খাদ্যের জোগান বন্ধ করে দিতে লক্ষ করলেন ঘণ্টাধ্বনি শুনে কুকুরটির লালাক্ষরণ ধীরে ধীরে লােপ পেতে পেতে বিলুপ্ত হল। অর্থাৎ অপানুবর্তন ঘটলে তখনই তিনি পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে দেখলেন আবার প্রতিক্রিয়াকে সজীব করা যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে গুণসংযােজন বলে

প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ার শিক্ষাগত তাৎপর্য

(১) শিশুর ভাষা বিকাশে: শিশুর ভাষা শেখানাের সময় কোনাে  একটি বিশেষ বস্তুর সঙ্গে বিশেষ শব্দকে যােগ করে দেওয়া হয়। যেমন কোনাে বিশেষ মহিলাকে দেখিয়ে মুখে ‘মা’ কথাটি বারবার বললে শিশু ‘মা’ শব্দটি অনুবর্তনের মাধ্যমে শিখে ফেলে। এইবাবে শিশু অনেক শব্দ শিখে নেয়।

(২) শিশুর আদর্শ অভ্যাস গঠনে: শিশুর সু-অভ্যাস গঠনে অনুবর্তন প্রক্রিয়া ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন— 
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠা, 
  • দাঁত মাজা, 
  • পড়তে বসা ইত্যাদি।
(৩) শিশুর খারাপ অভ্যাস দূর করতে: বানান ভুল, গালাগালি প্রভৃতি দূর করতে অনুবর্তন পদ্ধতি খুবই কার্যকরী।

(৪) শিশুর শিখন দক্ষতায়: লেখা, পড়া, বানান মুখস্থ করা, অঙ্ক ক্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিশুর শিখন দক্ষতা বাড়াতে অনুবর্তন পদ্ধতি খুবই কার্যকরী।

(৫) শিক্ষক-শিক্ষিকার আচরণের প্রভাব: শিক্ষক-শিক্ষিকার আচার-আচরণ, পােশাক-পরিচ্ছদ, বিভিন্ন অভ্যাস, কথা বলা, ভাষা ব্যবহার, রুচি, মার্জিত আচরণ এগুলি সব শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুবর্তিত হয়।

(৬) শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশে: শিশুর জীবনে প্রক্ষোভমূলক বিকাশ ঘটাতে বা জটিল প্রক্ষোভ সৃষ্টিতে অনুবর্তন প্রক্রিয়া সাহায্য করে।

(৭) শিশুর আগ্রহ বা অনাগ্রহসৃষ্টি করতে: অনুবর্তনের মাধ্যমে শিশুর মধ্যে আগ্রহ বা অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রতি ভালােবাসা তিনি যে বিষয় পড়ান তাতে অনুবর্তিত হয়।

(৮) পূনরাবৃত্তিমূলক শিখনের ক্ষেত্রে: ছােটো শিশুদের নতুন ছড়া শেখানাে, কোনাে অভ্যাস গঠন, নামতা মুখস্থ করানাে, বানান শেখানাে ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তনের প্রভাব রয়েছে।

(৯) মানসিক রােগ সারানাের ক্ষেত্রে: প্রাচীন অনুবর্তন কৌশল অবলম্বন করে মনােরােগের ডাক্তাররা অনেক মানসিক রােগের চিকিৎসা করে থাকেন।

(১০) ইতিবাচক মানসিকতার সৃষ্টি: কোনাে বিষয়ে ইতিবাচক ভাবনা চিন্তা গড়ে তুলতে বা আত্মবিশ্বাস জাগাতে এই কৌশল সাহায্য করে।