সংখ্যালঘুদের শিক্ষা প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে।

ভারতীয় সংবিধানে সংখ্যালঘুদের শিক্ষা

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত ধারাগুলি নিম্নলিখিত -

(১) ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষণ: ভারতের যে-কোনাে শ্রেণির নাগরিক, যাদের নিজস্ব একটি সুস্পষ্ট ভাষা, লিপি বা সংস্কৃতি আছে, তাদের তা সংরক্ষণ করার মৌলিক অধিকার সংবিধানে প্রত্যাভূত হয়েছে [অনুচ্ছেদ ২৯(১)] অর্থাৎ, যদি কোনাে সংখ্যালঘু শ্রেণি তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রাখতে চায়, তাহলে রাষ্ট্র বিধি দ্বারা তাদের উপর সংখ্যাগুরুর বা ওই অঞ্চলের অন্য কোনাে সংস্কৃতি চাপাতে পারবে না।। এই ব্যবস্থায় কেবল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরই নয়, ভাষাগত সংখ্যালঘুদেরও রক্ষা করা হয়েছে।

(২) মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের সুবিধা : সংবিধানে প্রত্যেক রাজ্যকে ভাষাগত সংখ্যালঘু গােষ্ঠীসমূহের শিশুদের প্রাথমিক স্তরে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের পর্যাপ্ত সুযােগসুবিধা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতিকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে, তিনি যে-কোনাে রাজ্যকে এ ব্যাপারে যথােপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন [অনুচ্ছেদ ৩৫০(ক)]।

(৩) ভাষাগত সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ আধিকারিক নিয়ােগ : সংবিধানে বলা হয়েছে, ভাষাগত সংখ্যালঘুদের জন্য রাষ্ট্রপতি একজন বিশেষ আধিকারিক নিযুক্ত করবেন। সংবিধানে ভাষাগত সংখ্যালঘুদের যেসব রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে সেইসব রক্ষাকবচ সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপার অনুসন্ধান করে সেই বিশেষ আধিকারিক রাষ্ট্রপতির কাছে রিপাের্ট পেশ করবেন [অনুচ্ছেদ ৩৫০(খ)]।

(৪) রাষ্ট্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে বৈষম্য নয় : সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালিত বা রাষ্ট্রের সাহায্যপ্রাপ্ত কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেবল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, ভাষা বা এর কোনাে একটির ভিত্তিতে কোনাে নাগরিককে ভরতি হতে দিতে অস্বীকার করা যাবে না [অনুচ্ছেদ ২৯(২)]। এর অর্থ রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত হয় বা রাষ্ট্রের অর্থসাহায্য পায় এমন কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভরতির ব্যাপারে কোনাে নাগরিকের বিরুদ্ধে ধর্ম, জাতি, বর্ণ বা ভাষার ভিত্তিতে বৈষম্য করা যাবে না। এই ব্যবস্থা অতি ব্যাপক, এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য কেবল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরই স্বার্থরক্ষা করা এবং যে মুহূর্তে কোনাে নাগরিকের বিরুদ্ধে কেবল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, ভাষা বা এর কোনাে একটির ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে সেই মুহূর্তে সংবিধান লঙ্ঘন করা হবে।

(৫) পছন্দমতাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অধিকার : ধর্মের ভিত্তিতেই হােক কিংবা ভাষার ভিত্তিতে, সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরই তাদের পছন্দমতাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করার ও পরিচালনা করার মৌলিক অধিকার আছে (অনুচ্ছেদ ৩০(১)]। ২৯(১) অনুচ্ছেদে যেমন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভাষা বা লিপি রক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে, ৩০(১) অনুচ্ছেদে তেমনি তাদের নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানাের অধিকার দেওয়া হয়েছে যাতে রাষ্ট্র তাদের এমন কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য করতে না পারে, যা তাদের পছন্দ নয়।

(৬) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে রাষ্ট্রের সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে বৈষম্য নয় : ভারতীয় সংবিধানের ৩০(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্র কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না যে, ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনাে সংখ্যালঘু কর্তৃক পরিচালিত তা সে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হােক বা ভাষাগত সংখ্যালঘু।

(৭) সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নয় : ১৬(২)২ এর নির্দেশ অনুযায়ী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোনাে রকম বৈষম্য থাকবে না।

উপরােক্ত বিষয়গুলির মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে সুবিধা প্রদানের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যার সঠিক প্রয়ােগ সংখ্যালঘুদের শিক্ষার প্রসার ঘটাবে।

ভারতীয় সংবিধানের শিক্ষা-সম্পর্কিত ধারা | ভারতীয় সংবিধানের কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও যৌথ তালিকার অন্তর্গত ধারা | ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত শিক্ষাসংক্রান্ত সুপারিশ


৪৫নং এবং ৪৬নং ধারা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের মতামত আলােচনা করাে।


তপশিলি জাতি (SC) এবং তপশিলি উপজাতি (ST)-র শিক্ষার উন্নয়নে কোঠারি কমিশন এবং জাতীয় শিক্ষানীতি, ১৯৮৬-এর অভিমত কী ছিল?