শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক আলােচনা করাে।

শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক

শিক্ষা হল এমন একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীকে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে ও পরিবর্তনশীল। পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বুদ্ধি হল এমন একটি ক্ষমতা যা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ করতে, যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করতে এবং সার্থকভাবে পরিবেশের সঙ্গে  অভিযােজনে করতে সাহায্য করে।

শিক্ষার সঙ্গে বুদ্ধির একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কেননা ব্যক্তির বুদ্ধি না থাকলে শিক্ষা সার্থক হতে পারে না। বুদ্ধি ও শিক্ষা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত সে বিষয়ে নীচে আলােচনা করা হল一

(1) বিদ্যালয়ে ছাত্র ভরতির ক্ষেত্রে: বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভরতি নেওয়ার সময় তাদের বুদ্ধিবিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া অবশ্যই প্রয়ােজন। অনেকসময় দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের একবিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে ভরতি হতে হয়। কিন্তু দেখা যায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান একই প্রকার হয় না। তাই বুদ্ধির পরিমাপের পর ভরতির ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে অসুবিধায় পড়তে হয় না।

(2) পাঠক্রম নির্দেশনার ক্ষেত্রে : শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রম লক্ষ করা যায়। কোন্ শিক্ষার্থী কী ধরনের পাঠক্রম গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে সাফল্য পাবে, তাঁ বুদ্ধি পরিমাপের দ্বারা নির্ধারণ করা উচিত। সুতরাং বলা যায় শিক্ষার পাঠক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীর বুদ্ধির সম্পর্ক বর্তমান।

(3) শিক্ষকদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে : শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বুদ্ধি অভীক্ষা প্রয়ােগ করা হয়। বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উন্নত ধরনের পঠনপাঠনের সাহায্যে মেধাবীদের সমপর্যায়ে পৌঁছােতে উপযুক্ত সহায়তা দিয়ে থাকেন।

(4) বৃত্তিগত নির্দেশনার ক্ষেত্রে : মানুষের বৃত্তিমূলক সফলতাও তার বুদ্ধি তথা মানসিক ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। সেই কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বুদ্ধ্যঙ্ক যাচাই করা হয়। শিক্ষার্থীদের সফলতার উপর নির্ভর করে বহু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের Scholarship বা বৃত্তি দেওয়া হয় যা শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনে আরও আগ্রহী করে।

(5) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে : বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোন প্রকার সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি গ্রহণ করবে তার প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বর্তমান বুদ্ধি অভীক্ষার প্রচলন ঘটেছে।

(6) মানসিক রােগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে : ব্যক্তির মানসিক ব্যাধির সঙ্গে তার বুদ্ধির একটা সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। এর দ্বারা মানসিক রােগের শ্রেণিকরণ সম্ভব হয়েছে। এইসকল শ্রেণিকরণের মাধ্যমে শিখন পদ্ধতির বিভিন্নতা দেখা যায়। বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়ােগ করে শিক্ষা দেওয়া হয়, পাঠক্রম নির্ণয় করা হয়। মানসিক ব্যাধির চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনােচিকিৎসকগণ রােগীর অন্যান্য আচরণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি বুদ্ধির পরিমাপও করে থাকেন। বুদ্ধির স্বল্পতা মানসিক ব্যাধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এটি পরীক্ষালব্ধ উপায়ে জানা গেছে।

(7) শিক্ষামূলক অগ্রগতি : শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষামূলক অগ্রগতি তাদের বুদ্ধির দ্বারা নির্ধারিত হয়। তাই বিদ্যালয়ে ছাত্র ভরতির সময় শিক্ষার্থীর বুদ্ধির অভীক্ষা গ্রহণ করা হয়। আগে থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা যদি শিক্ষার্থীদের বুদ্ধির পরিমাপ করতে পারেন তাহলে তাদের সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা গঠন ও উপযােগী শিক্ষার পরিকল্পনা করতে পারেন। যেমন—৭০-এর নীচে যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক তারা ১০-১১ বছর বয়স অবধি প্রথম শ্রেণিতেই পড়ে। ৭০-৮৫-এর মধ্যে বুদ্ধ্যঙ্ক যাদের, তাদের শিক্ষার শেষসীমা অষ্টম শ্রেণি।