বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণা প্রসঙ্গে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে, তা আলােচনা করাে।

স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ

কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা ও গবেষণা প্রসঙ্গে সুপারিশ। স্নাতকোত্তর স্তরের উন্নয়ন ঘটাতে গেলে কয়েকটি বিষয়ের উপর বেশি করে আলােকপাত করা দরকার, যার মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষণ পদ্ধতি এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা প্রসঙ্গ।

কমিশনের এই স্তরে শিক্ষার মানােন্নয়ন ঘটাতে গেলে শিক্ষকদের পড়ানাের পদ্ধতি এবং উন্নয়নমূলক পাঠক্রম একান্ত প্রয়ােজন। কমিশন এই সংক্রান্ত কতকগুলি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে। সেগুলি হল— 

শ্রেণি শিক্ষণ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ

শ্রেণি শিক্ষণের আগে অধ্যাপক তার অধ্যাপনার বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা করবেন, কী পড়াবেন, কীভাবে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করবেন ইত্যাদি। যদি কোনাে উপকরণ ব্যবহার করেন সেগুলি কীভাবে করবেন তাও তিনি ঠিক করে নেবেন। তারপর ক্লাসে গিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে সেই বিষয়বস্তু উপস্থাপন করবেন। বক্তৃতা ও আলােচনার মাধ্যমে উপস্থাপিত বিষয়বস্তু অবশ্যই বাস্তবসম্মত হওয়া প্রয়ােজন। শিক্ষার্থীরা যেন ভালােভাবে তা বুঝতে সক্ষম হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

শ্রেণি শিক্ষণ পর্যায় প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ

শ্রেণি শিক্ষণের ক্ষেত্রে অধ্যাপকগণ কতকগুলি পর্যায় অনুসরণ করবেন। প্রথমত, বিষয়বস্তুকে উদাহরণ সহযােগে বক্তৃতা দানের মাধ্যমে উপস্থাপিত করবেন। দ্বিতীয়ত, আলােচনা ও প্রশ্ন-উত্তরদানের মাধ্যমে বিষয়ের গভীরতা সম্পর্কে বােঝাবেন। তৃতীয়ত, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ওই বিষয়ের উপর বিভিন্ন গ্রন্থ বা রেফারেন্স সহযােগে রচনা তৈরি করবে।

এই শ্রেণি শিক্ষণের উন্নয়নের মধ্য দিয়েই স্নাতকোত্তর স্তর ও গবেষণামূলক ক্ষেত্রের শিক্ষার মানােন্নয়ন সম্ভব।

স্নাতকোত্তর শিক্ষণ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্মণ কমিশন স্নাতকোত্তর শিক্ষণ প্রসঙ্গে যে-সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলি করে, সেগুলি হল- 

(১) কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য আবর্তিত নিয়মবিধির মধ্যে সংগতি থাকবে। নিয়মিত লেকচার, সেমিনার ও ল্যাবরেটরির কাজের মাধ্যমে শিক্ষাদান কর্ম পরিচালনা করতে হবে।

(২) এম এ, এম এস সি প্রভৃতি ডিগ্রি অর্জনের জন্য পাস কোর্সের স্নাতকদের দু-বছর এবং অনার্স কোর্সের স্নাতকদের তিন বছর পড়াশােনা করতে হবে।

(৩) পি এইচ ডি ডিগ্রির শিক্ষণকাল হবে অন্তত দু-বছর। এই ডিগ্রির জন্য থিসিস (Thesis) ছাড়াও মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। অতি সাবধানে অথচ সর্বভারতীয় ভিত্তিতে পি এইচ ডি কোর্সে ছাত্র ভরতি করা হবে।

(৪) প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পি এইচ ডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রিসার্চ ফেলােশিপের ব্যবস্থা থাকবে।

(৫) এম এস সি এবং পি এইচ ডি স্তরে মেধাবী ছাত্র সংগ্রহের জন্য নির্বাচনি সংস্থা গঠন করতে হবে এবং ছাত্রদের বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৬) জৈব রসায়ন, জীব-পদার্থবিদ্যা, জিওকেমিস্ট্রি, জিওফিজিক্স প্রভৃতি সীমানাগত বিজ্ঞান শিক্ষাদান ও গবেষণা করার জন্য অধিক সুযােগ সৃষ্টি করা প্রয়ােজন।

(৭) পি এইচ ডি ডিগ্রিধারী ব্যক্তি উচ্চমানের মৌলিক গবেষণা করলে কলাবিভাগের জন্য তাকে ডি লিট এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য তাকে ডি এস সি ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

(৮) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিজ্ঞান বিভাগকে অধিক শক্তিশালী করার জন্য উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়ােগ করতে হবে।

(৯) শিক্ষক নিয়ােগের ক্ষেত্রে কেবল সংখ্যাবৃদ্ধির পরিবর্তে প্রতিভাবান ও গুণী শিক্ষক নিয়ােগের ব্যবস্থা করতে হবে।

(১০) প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

গবেষণামূলক শিক্ষণ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন গবেষণামূলক শিক্ষণের জন্য যে-সমস্ত সুপারিশ করেছে, সেগুলি হল—

(১) যে-সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের কাজ চলে, সেখানে প্রতিটি শাখাতে গবেষণামূলক শিক্ষণের জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাে গড়ে তুলতে হবে।

(২) অনুমােদনধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধীরে ধীরে স্নাতকোত্তর গবেষণার জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাে গড়ে তুলতে হবে।

(৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতি এবং ধারণা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করবেন।

(৪) বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলিক গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

(৫) কেবল ডিগ্রি অর্জনের পরিবর্তে নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য যাতে গবেষকরা কাজ করেন, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।

(৬) বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ মঞ্জুর করতে হবে।

(৭) কমিশনের মতে, ভারতে ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, ললিতকলা প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণার জন্য অফুরন্ত উপাদান রয়েছে। গবেষকরা এই উপাদানকে কাজে লাগিয়ে গবেষণায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে।

(৮) জীববিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণার জন্য কমপক্ষে ৫টি সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

(৯) জৈব রসায়ন, জীব-পদার্থবিদ্যা, জিওকেমিস্ট্রি, জিওফিজিক্স প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাে গড়ে তুলতে হবে।

স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন কবে গঠিত হয়? এই কমিশনের সদস্য কারা ছিলেন? ওই কমিশনের সদস্যবৃন্দ নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যে যেসব উপায় অবলম্বন করেছিলেন, তা উল্লেখ করাে।


বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষ্মণ কমিশনের (১৯৪৮-৪৯ খ্রি:) মূল সুপারিশগুলি কী ছিল ?


পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ বর্ণনা করাে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার কাঠামাে প্রসঙ্গে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের বক্তব্য কী। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি আলােচনা করাে।