আগ্রহের বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করো।

আগ্রহ হল একটি মানসিক সংগঠন, যা ব্যক্তিকে কোনাে কাজে তার পছন্দের অনুভূতি বুঝতে, তাকে সেই কাজে মনােনিবেশ করতে এবং কার্য সম্পাদন করতে প্রেরণা জোগায়। এটি হল মনের স্থায়ী প্রবণতা। আগ্রহের ধারণা স্পষ্ট করতে এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল-

আগ্রহের বৈশিষ্ট্য

(1) বিকাশনির্ভর : ব্যক্তির আগ্রহ বিকাশধর্মী। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহের বিকাশ হতে থাকে। শৈশবে যে-সমস্ত বস্তুর প্রতি শিশুর আগ্রহ দেখা গিয়েছিল, কৈশােরে এসে সেই বস্তুর প্রতি তার আগ্রহ নাও থাকতে পারে। পৃথকীকরণের মাধ্যমে আগ্রহ কৈশােরে এসে পূর্ণতা লাভ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর আগ্রহের পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে।।

(2) চাহিদানির্ভর : শিশুর আগ্রহ তার চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণত কোনাে কিছুর অভাব চাহিদা সৃষ্টি করে। জন্মের সময় এই চাহিদা না থাকলেও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অভিজ্ঞতা ও শিখনের প্রভাবে ব্যক্তির মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। যেসকল ঘটনা বা বিষয়বস্তু শিশুর চাহিদাকে পরিতৃপ্ত করে সেগুলির প্রতি শিশুর আগ্রহ জন্মায় অর্থাৎ ব্যক্তির চাহিদা তার মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে।

(3) প্রেষণামূলক : আগ্রহ প্রেষণামূলক। কারণ বহুক্ষেত্রেই দেখা যায় শিক্ষার্থীর বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অজানা থাকে, ফলে এই বিষয়ের প্রতি তার আগ্রহ থাকে না। ওই সময় পরিবারের সদস্য বা শিক্ষকগণ প্রেষণা প্রক্রিয়াটির দ্বারা আগ্রহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। আগ্রহের কারণে মানুষ কর্মে উৎসাহ লাভ করে। এই আগ্রহ সৃষ্টি হলে কর্মসম্পাদন সম্ভব। তবে কর্মসম্পাদনের জন্য যে আন্তরিক তাগিদ প্রয়ােজন হয়, তাই হল প্রেষণা। সুতরাং প্রেষণা ব্যক্তির আগ্রহকে বাস্তবায়িত করে।

(4) অনুভূতিনির্ভর : অনেকসময়ই দেখা যায়, অনেক বিষয়ের উপর আগ্রহ প্রকাশ করা হয় যেখানে অনুভূতি থাকে। যেমন— প্রবাসী বাঙালির বাংলা সম্পর্কে আগ্রহ। আগ্রহ সৃষ্টি করে তৃপ্তি। যে বিষয়ের প্রতি শিশুর আগ্রহ রয়েছে সে বিষয় তার মধ্যে তৃপ্তি আনে; তবে যে বিষয়ে আগ্রহ নেই সেই বিষয় তার মধ্যে বিরক্তি তৈরি করে।।

(5) মনােযােগ : মনােবিজ্ঞানী ম্যাকডুগাল-এর কথায় ‘Interest is latent attention and attention is interest in action tefte আগ্রহ হল সুপ্ত মনােযােগ এবং মনােযােগ হল কর্মে আগ্রহ। সুতরাং | আগ্রহ ও মনােযােগ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

(6) অর্জিত : সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী নানাপ্রকারের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। অর্জিত অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ এনে দেয়।

(7) সামাজিক পরিবেশনির্ভর : শিশু যে সমাজ পরিবেশের মধ্যে বাস করে সেই পরিবেশ দ্বারা আগ্রহ নিয়ন্ত্রিত হয়। সমাজ পরিবেশের প্রভাবে শিশুর মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আগ্রহ গড়ে ওঠে।

(৪) সেন্টিমেন্ট : যে বস্তুর বা ব্যক্তির বা ধারণার জন্য সেন্টিমেন্ট গড়ে ওঠে, সেই বস্তুর বা ব্যক্তির বা ধারণার প্রতি শিক্ষার্থীর অনুরাগ জন্মায়। যেমন— মহাপুরুষের জীবনাদর্শের প্রতি সেন্টিমেন্ট গড়ে ওঠে।

(9) সক্রিয়তা : কোনাে ব্যক্তির মধ্যে অনুরাগ সৃষ্টি করতে হলে, ব্যক্তির সক্রিয়তা নিশ্চিত করা প্রয়ােজন। ব্যক্তির নিজস্ব সক্রিয়তা ছাড়া তার মধ্যে আগ্রহ বা অনুরাগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না।

(10) পরিমাপযােগ্য : আগ্রহ পরিমাপযােগ্য। আগ্রহ পরিমাপের জন্য বর্তমানে একাধিক অভীক্ষা ব্যবহৃত হয়।

সুতরাং উপরােক্ত আলােচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, আগ্রহ একটি বিকাশধর্মী প্রবণতা যা কৈশােরে পূর্ণতা লাভ করে। এই প্রবণতাটি সহজাত এবং অর্জিত দুই-ই হতে পারে। মনােযােগ ও চাহিদার দ্বারা এই মানসিক সংগঠনটি নিয়ন্ত্রিত হয়।