গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি কীরকম ছিল—তা আলােচনা করে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে কী জানো।

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি

উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সমান অধিকারের দাবিতে বাস্তবায়িত করার জন্য রাধাকৃষ্মণ কমিশন গ্রামজীবনের সঙ্গে উচ্চশিক্ষাকে যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর ভারতের হাজার হাজার গ্রামের বিশেষ প্রয়ােজন মেটানাের উপযােগী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয় এবং তা থেকেই গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনাটি সৃষ্টি হয়। যেসব ছেলেমেয়েরা গ্রামে বাস করে এবং শহরে এসে পড়ার সুযােগ পায় না, তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য রাধাকৃষ্মণ কমিশন গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় নামে এক নতুন শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। গ্রামের মানুষ যাতে গ্রামেতেই নিম্নস্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত শিক্ষালাভ করতে পারে সেদিকে লক্ষ রেখে রাধাকৃষ্মণ কমিশন গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে কিছু আদর্শ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে।

আদর্শ

ডেনমার্কের জনতা কলেজ ও গান্ধিজির বুনিয়াদি শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা গৃহীত হয়।

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্য

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্যগুলি হল-
  • (১) গ্রামের শিক্ষার্থীদের গ্রামেই উচ্চশিক্ষার সুযােগ করে দেওয়া। 
  • (২) গ্রামের প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার করা।
  • (৩) গ্রামীণ অর্থনীতিকে উন্নত করা।
  • (৪) গ্রামীণ শিক্ষা ও সংস্কৃতির মান উন্নয়ন ঘটানাে।

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের প্রস্তাব নিঃসন্দেহে প্রগতিশীল এবং যুগােপযােগী। বর্তমান ভারতবর্যে ১৪টি গ্রামীণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল বিশ্বভারতীর শ্রীনিকেতন। কিন্তু কমিশন যুগােপযােগী প্রস্তাব সম্পর্কে কোনাে সঠিক বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা দেয়নি। তার ফলে গ্রামীণ জীবনের উপযােগী শিক্ষা প্রবর্তনের যে স্বপ্ন কমিশন দেখেছিল, সেটিকে বাস্তবে রূপদান করা সম্ভব হয়নি। কারণ কার্য উপযােগী উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাব ছিল।

গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী অবস্থা: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের প্রস্তাব সরকার সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেনি। তাই গ্রামীণ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভারত সরকারকে পরামর্শদানের জন্য ১৯৫৬খিষ্টাব্দে 'National Council of Rural Higher Education' গঠন করা হয়। NCRHE-এর সুপারিশ অনুযায়ী আমাদের রাজ্যে বােলপুরের শ্রীনিকেতনে একটি Rural Institute ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে ১৪-১৫টি এইরূপ Institute গঠন করা হয়।

NCRHE-এর সুপারিশে গ্রামীণ অর্থনীতি সমবায়, সমাজবিজ্ঞান ও সমষ্টি উন্নয়ন বিষয়ে পঠনপাঠন ও ডিগ্রি প্রদানের কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে মাত্র কয়েকটি ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স চালু হয়। যেমন—
  • গ্রামীণ বিজ্ঞানে সাটিফিকেট কোর্স— ২ বছর। 
  • গ্রামসেবা বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা কোর্স ৩ বছর। 
  • কৃষিবিজ্ঞানে সার্টিফিকেট কোর্স— ২ বছর।। 
  • সিভিল ও রুরাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সার্টিফিকেট কোর্স ৩ বছর।
  • সেনেটারি ইনস্পেক্টর কোর্স—১ বছর। 
  • ডিগ্রি কোর্সে ভরতি হওয়ার জন্য বিদ্যালয় শিক্ষা শেষ করার পর প্রস্তুতি কোর্স– ১ বছর ইত্যাদি।

ধর্মশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, ছাত্র কল্যাণ ও শরীরচর্চা সম্পর্কে রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে।


গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা সম্পর্কে আলােচনা করাে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সুপারিশগুলি আলােচনা করাে।


রাধাকৃষ্মণ কমিশনের প্রতিবেদনকে ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে একটি মূল্যবান দলিল’ বলা হয় কেন— তা লেখাে।