সরকারি ভাষা সম্পর্কে সাংবিধানিক ধারাগুলি বর্ণনা করাে।

সরকারি ভাষা সম্পর্কিত সাংবিধানিক ধারাসমূহ

সংবিধানের অষ্টম তপশিলের অন্তর্ভুক্ত ২২টি ভাষাকে প্রধান ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল, যা দেশের মােট জনসংখ্যার ৯১% ব্যবহার করে। এর মধ্যে হিন্দি ও তার সমগােত্রীয় ভিন্ন নমুনা উর্দু এবং হিন্দুস্থানীভাষী ৪৬%-এর দাবিদার।

কেন্দ্রীয় সরকারি প্রয়ােজনে একটি ভাষা প্রস্তাবিত হলেও আঞ্চলিক ভাষাভাষী গােষ্ঠীগুলির সুবিধার্থে সংবিধান-রচয়িতারা সংশ্লিষ্ট রাজ্য বিধানসভাগুলি এবং রাষ্ট্রপতিকে হিন্দি ছাড়া কিছু ভাষা ও ভাষাসমষ্টি অথবা যে-কোনাে একটিকে আন্তঃরাজ্য সরকারি লেনদেনের জন্য স্বীকৃতিদানের সুযােগ দেন। এই সংস্থাগুলি অধিকাংশ রাজ্য বিধানসভা অথবা রাজ্যবিশেষের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠকে তাদের কথ্যভাষাকে রাজ্য অভ্যন্তরে সরকারি কাজে ব্যবহারের অধিকার দিয়েছে।

সরকারি ভাষা সংক্রান্ত যে সংস্থান সংবিধান করেছে তা ৩৪৩-৩৫১ নং ধারায় বর্ণিত হয়েছে, যা ভাষা সংক্রান্ত সপ্তদশ অংশের অন্তর্গত এবং এই অংশটি আয়েঙ্গার ও মুনসি কর্তৃক গণপরিষদে রচিত।

(১) ৩৪৩ নং ধারা: ৩৪৩নং ধারায় বলা হয়েছে, হিন্দি ভাষাই হবে ভারতীয় ইউনিয়নের সরকারি ভাষা। তবে কেন্দ্রের যেসব সরকারি কাজে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার হত সংবিধান চালু হওয়ার পর ১৫ বছর পর্যন্ত তা চালু থাকবে। তবে ১৫ বছর শেষ হওয়ার পর পার্লামেন্ট আইন তৈরি করে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে ব্যবস্থা করবে, এমনকি দেবনাগরী সংখ্যার ব্যবহারও করতে পারে।

(২) ৩৪৪ নং ধারা : ৩৪৪নং ধারায় বলা হয়েছে, সংবিধান চালু হওয়ার ৫ বছর এবং ১০ বছর পরে রাষ্ট্রপতি অষ্টম তপশিলে বর্ণিত ১৫টি আঞ্চলিক ভাষার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ভাষা কমিশন গঠন করবেন। এই কমিশনের কাজ হবে— কীভাবে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার কমিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কাজে হিন্দি ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি করা যায়, সে সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করা। সুপ্রিমকোর্ট ও রাজ্য আইনসভাগুলিতে কোন্ ভাষা ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে সুপারিশ করা।

(৩) ৩৪৫ নং ধারা : ৩৪৫ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোনাে রাজ্য আইনসভা আইন তৈরি করে রাজ্যে প্রচলিত এক বা একাধিক ভাষাকে অথবা হিন্দি ভাষাকে রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। তবে আইনসভার আইন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ইংরেজি ভাষার ব্যবহার যেমন আছে তেমনই থাকবে।

(৪) ৩৪৬ নং ধারা : ৩৪৬ নং ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের যােগাযােগের ক্ষেত্রে বা বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে যােগাযােগের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা সাময়িকভাবে ব্যবহৃত হবে। তবে দুই বা তার বেশি রাজ্য যদি নিজেদের মধ্যে যােগাযােগের জন্য হিন্দি ভাষা ব্যবহার করতে চায় তাহলে তা করতে পারবে।
 
(৫) ৩৪৭ নং ধারা : ৩৪৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোনাে রাজ্যের একটি অংশের মানুষ যদি একটি ভাষা ব্যবহার করে এবং সেই ভাষাকে রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাষ্ট্রপতিকে অনুরােধ করে, তাহলে রাষ্ট্রপতি রাজ্যকে তার করতে নির্দেশ দিতে পারে।

(৬) ৩৪৮ ও ৩৪৯ নং ধারা : ৩৪৮ ও ৩৪৯ নং ধারায় বলা হয়েছে, যতদিন পার্লামেন্ট আইন তৈরি করে অন্য কোনাে সিদ্ধান্ত না নেবে ততদিন সুপ্রিমকোর্ট এবং হাইকোর্টের কাজকর্ম ইংরেজি ভাষাতেই হবে।

(৭) ৩৫১ নং ধারা : সংবিধানে ৩৫০ ও ৩৫১নং ধারায় ভাষা সম্পর্কে বিশেষ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যথা— যে-কোনাে ব্যক্তি কেন্দ্রে বা রাজ্যের ব্যবহৃত যে-কোনাে ভাষাতেই অভিযােগ জানাতে পারবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ভারতে ভাষা সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। রাজনীতি ভাষাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। নানা আশ্বাস সত্ত্বেও ভাষা সমস্যার সমাধান হয়নি। রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে না এলে অদূর ভবিষ্যতে আঞ্চলিকতাবাদ তীব্র আকার নিয়ে জাতীয় সংহতিকে  বিনষ্ট করবে।

সমসুযােগ বলতে কী বােঝায় ? শিক্ষায় সমসুযােগের ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে।


সুযােগের সমতাবিধান বলতে কী বােঝায়? শিক্ষায় সুযােগের সমতাবিধানের জন্য করণীয় বিষয়গুলি উল্লেখ করো।


শিক্ষায় সমান সুযােগ সম্পর্কে কোঠারি কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলি আলােচনা করাে।