শিখন কৌশল বলতে কী বােঝাে | শিখনের বিভিন্ন কৌশল

শিখন কৌশল

শিখন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন আচরণকে আয়ত্ত করে থাকি। পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পূর্ব অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে অভিযােজনের মাধ্যমে শিখন সম্পন্ন করি।

মানুষের চাহিদাপূরণের ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তু লাভের উদ্দেশ্যে, পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকঅভিযােজনের জন্য এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আচরণধারার পরিবর্তনের জন্য মানুষ যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তাকে শিখন কৌশল বলে।

প্রাণী কীভাবে শেখে, তা নিয়ে মনােবিদগণ দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে চলেছেন। তাদের গবেষণালব্ধ ফল থেকে জানা যায় যে, উন্নত বুদ্ধির জীব হিসেবে মানুষ শিখনের জন্য নানা ধরনের জৈব মানসিক কৌশল অবলম্বন করে থাকে। এই কৌশল সম্পর্কে বিভিন্ন মনােবিদ ভিন্ন ভিন্ন ধারণা পােষণ করেন, যা তত্ত্ব আকারে আমাদের কাছে উপস্থাপিত হয়। মনােবিদদের দেওয়া এক-একটি শিখন তত্ত্বকে বলা হয় শিখন কৌশল

শিখনের বিভিন্ন কৌশল


জন্মের পর থেকে মানুষ যেসব  কৌশলের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেগুলি নিম্নরূপ一

শিখন কৌশল বলতে কী বােঝাে। শিখনের বিভিন্ন কৌশলগুলি সংক্ষেপে লেখা।
শিখনের বিভিন্ন কৌশল

(১) পর্যবেক্ষণমূলক শিখন কৌশল : শৈশব জীবনে ব্যক্তি প্রথম যে কৌশলে জ্ঞান অর্জন করে বা লক্ষ্যবস্তু লাভে সক্ষম হয়, তা হল পর্যবেক্ষণমূলক শিখন কৌশল। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিশু বিভিন্ন আকৃতির বস্তুকে চিনতে শেখে। বস্তুত পর্যবেক্ষণমূলক শিখনই সকলপ্রকার শিখনের মূল ভিত্তি।

(২) নিরীক্ষণমূলক শিখন কৌশল : শিশু যখন একটু বড়াে হয় তখন তার পর্যবেক্ষণমূলক শিখন অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। একে মনােবিজ্ঞানীরা নিরীক্ষণমূলক শিখন কৌশল বলেন। এর মাধ্যমে শিশুরা বিভিন্ন আকার বা আকৃতির বস্তু সম্পর্কে জানতে বা জ্ঞানার্জন করতে সমর্থ হয়।

(৩) অনুকরণমূলক শিখন কৌশল : ছােটো শিশুরা ভীষণ অনুকরণ প্রিয় হয়। তাদের সামনে বােরা যে ধরনের আচরণ করে এবং ছােটো শিশুরা যে পদ্ধতিতে সেই আচরণগুলি আয়ত্ত করে, তাকে অনুকরণমূলক শিখন কৌশল বলে।

(৪) অনুবর্তনমূলক শিখন কৌশল : স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যখন কোনাে বিকল্প উদ্দীপকের দ্বারা সৃষ্টি করা হয় এবং প্রাণী নতুন আচরণ আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়, তখন তাকে অনুবর্তনমূলক শিখন কৌশল বলে। অনুবর্তনমূলক শিখন কৌশল আবার দুই রকমের। যথা—
  • আপাত বা প্রাচীন অনুবর্তন : যে অনুবর্তনে নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়ার জন্য নির্দিষ্ট উদ্দীপক বর্তমান থাকে, তাকে আপাত বা প্রাচীন অনুবর্তন শিখন কৌশল বলে। প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন প্যাভলভ। তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে দেখান, স্বাভাবিক উদ্দীপকের উপস্থিতিতে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সংঘটিত হয়। কিন্তু সংযােগ স্থাপনের মাধ্যমে কৃত্রিম উদ্দীপকের প্রভাবেও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সংঘটিত হয়।
  • সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন : যে অনুবর্তনে নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়ার জন্য কোনাে নির্দিষ্ট উদ্দীপক নেই, যে-কোনাে উদ্দীপকের সঙ্গে প্রতিক্রিয়াকে সংযুক্ত করা যায় তাকে সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন বলে। অপারেন্ট অনুবর্তনের প্রবক্তা হলেন স্কিনার। তিনি দু-ধরনের আচরণের কথা বলেছেন। যথা—রেসপন্ডেন্ট ও অপারেন্ট। তিনি মূলত অপারেন্ট জাতীয় আচরণ নিয়েই গবেষণা করেছেন।

(৫) সমস্যাসমাধানমূলক শিখন কৌশল : লক্ষ্যবস্তুঅর্জন বা কাঙ্ক্ষিত চাহিদাপূরণের পথে শিক্ষার্থীর সামনে যে বাধা সৃষ্টি হয়, তাকে সমস্যা বলে। যেসকল উপায়ে এই সমস্যাকে অতিক্রম করা হয় তাকে সমস্যাসমাধানমূলক শিখন কৌশল বলে। এই শিখন কৌশল মূলত দুই রকমের হয়— 
  • প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখন : বারবার প্রচেষ্টা ও ভুলের মধ্য থেকে ভুল প্রচেষ্টাগুলিকে বাদ দিয়ে সঠিক প্রচেষ্টাগুলিকে নির্দিষ্ট করার প্রক্রিয়াকে প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখন বলে। এর মাধ্যমে সাধারণত স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণীর শিখন সম্ভব হয়।
  • অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যাম শিখনের : সমস্যামূলক পরিস্থিতির স্বরূপ সামগ্রিকভাবে উপলব্ধি করার পর প্রাণী হঠাৎ করেই সমস্যার সমাধান করে ফেলে; তার জন্য প্রচেষ্টা ও ভুলের প্রয়ােজন হয় না। একেই অন্তদৃষ্টির মাধ্যমে শিখন বলে। সাধারণত এই পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী তথা মানুষ তার নানাবিধ সমস্যার সমাধান করে।

শিখন কৌশল সম্পর্কে মনােবিদরা প্রচুর তত্ত্ব দিয়েছেন। তার ভিত্তিতে কিছু বৈশিষ্ট্য উপরে বর্ণিত হয়েছে এইসব শিখন কৌশলের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিবিধ তত্ত্ব উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ইতর প্রাণীর উপর পরীক্ষা করেছেন মনােবিদরা। আর সেই নিরিখে বর্তমানে এই সমস্ত শিখন তত্ত্বের প্রয়ােগ ঘটানাে হচ্ছে বিশেষত শিশুদের জীবনবিকাশে ও বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাসমাধানে।