যুগ্ম তালিকা সম্বন্ধে সাংবিধানিক শিক্ষাসংক্রান্ত সুপারিশটি আলােচনা করাে।

যুগ্ম তালিকা সম্পর্কিত সাংবিধানিক সুপারিশ

ভারতবর্ষের সংবিধানে শিক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারসমূহ এবং আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষগুলির উপর অর্পণ করা হয়েছে। সংবিধানের সপ্তম তপশিলে শিক্ষা সম্পর্কিত তিনটি তালিকা রয়েছে—
  • প্রথম তালিকা বা কেন্দ্রীয় তালিকা (Union List), 
  • দ্বিতীয় তালিকা বা রাজ্য তালিকা (State List) ও 
  • তৃতীয় বা যুগ্ম তালিকা (Concurrent List)!
যুগ্ম তালিকায় সপ্তম তপশিলে ৬টি শিক্ষা সম্পর্কিত তালিকা আছে। যথা— ২০, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৯, ৪০ নং ধারা। সংবিধান প্রবর্তিত হওয়ার সময় থেকে প্রায় ২৬ বছর ধরে শিক্ষা ছিল রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়। কিন্তু সংবিধানের ৪২তম সংশােধনীতে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর শিক্ষা যুগ্ম তালিকাভুক্ত হয়। এই তালিকায় ৪৭টি বিষয়ের মধ্যে ৬টি বিষয় শিক্ষার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে যুক্ত। ২০নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিকল্পনা যুগ্ম তালিকার অন্তর্গত।

২৫নং ধারার : ১নং উপধারায় বলা আছে, বৃত্তিগত ও কারিগরি প্রশিক্ষণ। ২নং উপধারায় বলা আছে, দাতব্য প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ। ৩ নং উপধারায় বলা আছে, আইন ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত পেশার নিয়ন্ত্রণ। ৪নং উপধারায় বলা আছে, সংবাদপত্র, ছাপাখানা ও বিভিন্ন প্রকার পুস্তকের উপর নিয়ন্ত্রণ। ৫নং উপধারায় বলা আছে, আইন পরিষদ দ্বারা ঘােষিত নয় এমন কোনাে জাতীয় সৌধ যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত হবে।

এ ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে যে-সমস্ত ধারা, উপধারা উল্লিখিত আছে সেগুলি হল—

(১) ১৫নং ধারার ১নং উপধারা: শিক্ষার ব্যাপারে নারীদের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে।

(২) ১৭নং ধারা : সমাজে বিদ্যালয়ে শিক্ষার অধিকার থাকবে সবশ্রেণির মানুষের।

(৩) ২৪নং ধারা : ১৪ বছরের নীচে কোনাে শিশুকে শিক্ষা ছাড়া অন্য কোনাে উপার্জনমূলক কাজে লাগানাে যাবে না।

(৪) ২৪নং ধারার ১নং উপধারা : সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কোনাে বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাবে না।

(৫) ২৪ নং ধারার ২নং উপধারা : ট্রাস্ট (Trust) দ্বারা ও সরকার অনুমােদিত প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাবে না।

(৬) ২৪নং ধারার ৩নং উপধারা : সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনাে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে শিক্ষার্থীকে ধর্মীয় শিক্ষা বা নির্দেশনামা গ্রহণে বাধ্য করতে পারবে না।

(৭) ২৭নং ধারার ১নং উপধাৱা : ভারতের যে-কোনাে অঞ্চলে, যে-কোনাে জনগােষ্ঠীর তাদের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা এবং সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করার অধিকার থাকবে।

(৮) ২৯নং ধারার ২নং উপধারা : সরকারি অর্থে পরিচালিত কোনাে প্রতিষ্ঠানে ভরতির ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার কারণে বাধাদান করতে পারবে না।

(৯) ৩০ নং ধারার ২নং উপধারা : যে-কোনাে ব্যক্তির নিজ পছন্দ অনুসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করার অধিকার থাকবে।

(১০) ৩০নং ধারার ১নং উপধারা : ধর্মীয় অথবা ভাষাগত সংখ্যালঘু যে-কোনাে ব্যক্তির নিজ পছন্দ অনুসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করার অধিকার থাকবে এবং ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিকে সরকারি সাহায্যের ব্যাপারে কোনাে বিভেদ করা চলবে না।

(১১) ৪১নং ধারার ১নং উপধারা : ভারতের সমস্ত নাগরিককে শিক্ষার অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

(১২) ৪৫নং ধারা : সংবিধান কার্যকরী হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে রাষ্ট্রকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত শিশুকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

(১৩) ৪৬নং ধারা : সমাজের দুর্বলতর শ্রেণির মানুষের শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

(১৪) ৪৯নং ধারা : ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সৌধগুলিকে রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ন্যস্ত হয়েছে জাতীয় কৃষ্টি সংরক্ষণের জন্য।

(১৫) ৩৩৭নং ধারা : শর্তসাপেক্ষে অ্যাংলাে-ইন্ডিয়ান সমাজের শিক্ষার উন্নয়নকল্পে অনুদানের কথা বলা হয়েছে।

(১৬) ৩৫০নং ধারার ১নং উপধারা : ভারতবর্ষের যে-কোনাে ভাষায় কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারকে কোনাে বিষয়ে অভিযােগ জানানাে যাবে।

(১৭) ৩৫০নং ধারার ২নং উপধারা : ভাষাগত সংখ্যালঘুদের জন্য রাষ্ট্রপতি একজন অফিসার নিয়ােগ করবেন। যিনি সমস্ত অভিযােগ নিয়মিত রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদকক্ষে প্রেরণ ও সমাধানের বন্দোবস্ত করবেন।

(১৮) ৩৫১নং ধারা : হিন্দি রাষ্ট্রীয় ভাষা হওয়ার কারণে এই ভাষার উন্নতিকল্পে দায়িত্ব থাকবে কেন্দ্রের। উল্লিখিত ধারা ও উপধারাগুলির মাধ্যমে নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পথ প্রসারিত করা হয়েছে।

কত খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় সংবিধান রচিত হয়েছিল? সংবিধান রচনার প্রেক্ষাপট কী ছিল? 


ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় কী বলা হয়েছে? সংবিধান-এর শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের অভিমত কী?


ভারতীয় সংবিধানে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা বণ্টনের জন্য যে তালিকাব্যবস্থা রয়েছে, তা আলােচনা করাে। ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্যগুলি কী কী?