আগ্রহ সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

আগ্রহ সৃষ্টিকারী উপাদান

আগ্রহ যেমন জন্মগত বা সহজাত, তেমনই অর্জিত। আগ্রহ সৃষ্টিকারী উপাদানকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— (1) ব্যক্তিগত উপাদান, (2) পরিবেশগত উপাদান। নীচে আগ্রহ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল— 

ব্যক্তিগত উপাদান

(1) দৈহিক স্বাস্থ্য ও দৈহিকবিকাশ: শিশুর দৈহিক বিকাশ বা দৈহিক সুস্থতা আগ্রহ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, যে ব্যক্তির দৈহিক স্বাস্থ্য ভালাে সে সবসময়ই খেলাধুলা করতে ভালােবাসে।

(2) মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশ : ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশ আগ্রহ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যে ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত, সেই ব্যক্তির বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়।

(3) প্রবৃত্তি : ব্যক্তির প্রবৃত্তি বা ইচ্ছা যে বিষয়ের প্রতি সে বিষয়ে আগ্রহী হয়। যেমন— ভালাে পােশাকের প্রতি আগ্রহ।

(4) বয়স : আগ্রহ বয়সের উপর নির্ভর করে সৃষ্টি হয়। ছােটো বয়সে যে বিষয়গুলির উপর শিশুদের আগ্রহ থাকে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহগুলি পরিবর্তিত হয়ে অন্য বিষয়ের উপর নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়।

(5) লিঙ্গ : আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে লিঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ দেখা যায়, ছেলেদের যে ধরনের বিষয়গুলির উপর আগ্রহ থাকে, মেয়েদের আগ্রহের বিষয়বস্তু তার থেকে বহুলাংশে পৃথক হয়।

(6) অন্যান্য উপাদান : ব্যক্তির ক্ষমতা, প্রেষণা, আদর্শ, প্রক্ষোভ, ইচ্ছা প্রভৃতিও আগ্রহ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন শিশুর যদি টিভি দেখতে ইচ্ছা হয় তাহলে দেখা যায় টিভি চালানাে বা টিভির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে।

পরিবেশগত উপাদান

(1) পরিবারের আর্থসামাজিক মর্যাদা : আগ্রহ সৃষ্টিতে পারিবারিক পরিবেশ ও সামাজিক মর্যাদা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেমন— উচ্চ পরিবারের শিশুদের বা ব্যক্তিদের মধ্যে পিয়ানাে বাজানাের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে যা নিম্নবিত্তদের পক্ষে কখনও সম্ভব নয়।

(2) সাংস্কৃতিক মর্যাদা : যেসব বাড়িতে উন্নতমানের সংস্কৃতিচর্চার পরিকাঠামাে রয়েছে সেইসব বাড়ির ছেলেমেয়েরা সাহিত্যচর্চা, গানবাজনা, বিশেষত উচ্চাঙ্গ সংগীত প্রভৃতিতে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়।

(3) প্রশিক্ষণ : আগ্রহ সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়। যেমন পর্বতারােহণ বা Rock Climbing!

(4) অধিক সুযােগসুবিধা : কোনাে বিষয়ে যদি বেশি সুযােগসুবিধা দান করা হয় তাহলে সে বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। যেমন— প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার শিক্ষার সুযােগ সৃষ্টির ফলে এর প্রতি সকল শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

(5) সামাজিক খেতাব : যেসকল কাজে সামাজিক খেতাব খুব বেশি সেসকল বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অধিক মাত্রায় আগ্রহী হয়। যেমন— 
  • চিকিৎসাবিদ্যা, 
  • শিক্ষকতা, 
  • অধ্যাপনা, 
  • চার্টার অ্যাকাউনটেন্ট ইত্যাদি।

সবশেষে বলা যেতে পারে, ব্যক্তিগত উপাদান এবং পরিবেশগত উপাদানগুলি শিশুকে বিশেষ বিশেষ বিষয়ে আগ্রহী করে তোেল। ওই আগ্রহ পরবর্তীকালে তাকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে।