মনোযোগ আকর্ষণের উপায় | মনােযােগের কয়েকটি বিকর্ষক | শিক্ষায় মনােযােগের ভূমিকা

মনোযোগ আকর্ষণের উপায়

(1) অনুকূল পরিবেশ: মনােযােগ স্থিতিকরণের জন্য দরকার শান্ত পরিবেশ যাতে মন চঞ্চল না হয়।

(2) শিক্ষার উদ্দেশ্য তুলে ধরা: শিক্ষার্থী যে শিক্ষা গ্রহণ করছে তার উদ্দেশ্য, তার সুবিধা ইত্যাদি বিষয়গুলি উল্লেখের মাধ্যমে শিক্ষার উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে তুলে ধরা।

(3) শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার: শ্রেণিকক্ষে পাঠের সময় শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে শ্রাব্য ও দৃশ্য শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করবেন। তার ফলে শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে।

(4) বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষা পাঠক্রম: পাঠদানের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে হবে, গ্রন্থ ও পাঠক্রম নির্বাচন হবে বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ  শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি করবে।

(5) জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষা: বাস্তবজীবন, দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা শিক্ষা পাঠক্রমে স্থান পাবে, যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠের সঙ্গে বাস্তব জীবনের মিল খুঁজে পায়।

মনােযােগের বিকর্ষক

যখন কোনাে বিষয়ে আমরা মনােযােগ দিতে চাই তখন অনেক সময় কিছু বিকর্ষক আমাদের মনঃসন্নিবেশে বাধা সৃষ্টি করে, যেমন—পড়াশােনার সময় রাস্তার মাইকের জোরালাে শব্দ আমাদের মনােযােগ নষ্ট করে। মনােযােগ সৃষ্টিতে যা বাধার সৃষ্টি করে, তাকে মনােযােগের বিকর্ষক বলা হয়।

মনােযােগের কয়েকটি বিকর্ষক


(1) বাহ্যিক উদ্দীপক: বাহ্যিক উদ্দীপক যেমন— অতি জোর শব্দ, কানের কাছে অনেকক্ষণ ধরে ধ্বনিত হওয়া যে-কোনাে শব্দ মনােযােগের বিকর্যক হিসেবে কাজ করে।

(2) বিভিন্ন প্রক্ষোভ: ব্যক্তির মনে দুশ্চিন্তা, অহেতুক ভয় এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মনােযােগ নষ্ট করে দেয়।

(3) মানসিক অতৃপ্তি: বিভিন্ন প্রকার অভাববােধ, চাহিদা এবং অতৃপ্ত বাসনা আমাদের মনােযােগে বাধা সৃষ্টি করে।

(4) শারীরিক দুর্বলতা: শারীরিক অসুস্থতা মনােযােগের বিকর্ষক হিসেবে কাজ করে।

(5) শারীরিক ক্লান্তি: অতিরিক্ত পরিশ্রম, মানসিক চাপ, শারীরিক অক্ষমতা মনােযােগ নষ্ট করে।

(6) অপরিকল্পিত চিন্তা: কোনাে কাজে যদি পরিকল্পনা না নেওয়া হয় তাহলে অপরিকল্পনার কারণে, অগােছালাে কাজকর্মের জন্য মনােযােগ বিনষ্ট হয়।

শিক্ষায় মনােযােগের ভূমিকা

মনােযােগই শিখন প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসূ করে। তাই সাফল্যের অন্যতম মাপকাঠি হল মনােযােগ। শিক্ষার্থীর মনঃসংযোেগ যাতে ব্যাহত না হয়, সে ব্যাপারে শিক্ষককে সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে মনােযােগের গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষাক্ষেত্রে মনােযােগের ভূমিকা নিম্নরূপ  -

(1) ব্যক্তিগত বৈষম্য: মনােযােগ ছাড়া সকলপ্রকার মানসিক দিকে সাফল্য পাওয়া দুষ্কর। শিক্ষণ-শিখণ প্রক্রিয়ায় মনােযােগ দেওয়া একান্তভাবে প্রয়ােজন। তবে মনােযােগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়, তাই ব্যক্তিগত বৈষম্যের নীতি অনুসরণে বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হবে।

(2) মনােযােগের নির্ধারকের ব্যবহার: মনােযােগের বিভিন্ন নির্ধারকসমূহকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকা কাজে লাগাবেন। যেমন—রঙিন পাঠ্যপুস্তকের ব্যবহার, বাের্ডে বড়াে হরফে লেখা, শিক্ষা সহায়ক চার্ট বা প্রদীপনের ব্যবহার, বিষয়বস্তু উপস্থাপন পদ্ধতির আধুনিকতা ইত্যাদি।

(3) উন্নত বিদ্যালয় পরিবেশ: শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ করতে হলে উন্নত বিদ্যালয় পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। মনােরম পরিবেশ মনােনিবেশের অন্যতম হাতিয়ার, মনােরম পরিবেশ মনকে আরও সক্রিয় করে। বিদ্যালয় পরিবেশে যেসকল উদ্দীপক মনােযােগের অন্তরায় সেগুলি দূর করতে হবে।

(4) ইচ্ছাসাপেক্ষ মনােযােগ ও শিক্ষা: শিখনের উদ্দেশ্য ও ব্যাবহারিক প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করে, সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি করে, উপদেশ দিয়ে, প্রয়ােজন হলে লঘুশাসনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মনােযােগ আকর্ষণে সচেষ্ট হতে হবে শিক্ষককে। শিক্ষার্থী তাদের কৌতূহল, আত্মপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদির তাড়নায় যেসব বস্তুতে আগ্রহী হয় শিক্ষক-শিক্ষিকা সে বিষয়ে আগ্রহী করে তুলবেন।

(5) বিষয়বৈচিত্র্য: শিক্ষাদানের সময় পাঠ্যসূচির বিষয়টি নীরস হওয়ার জন্য বা অন্য কোনাে কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনােযােগের ঘাটতি দেখা যায়। তাই নিরবচ্ছিন্নভাবে কোনাে কিছু দীর্ঘ সময় ধরে আলােচনা না করে, মাঝে মাঝে শিক্ষক অন্য বিষয়ে চলে যাবেন। কঠিন ও নীরস পাঠে মনােযােগ আসে না।

(6) প্ৰক্ষোভ অনুসরণ: মনােযােগের ব্যক্তিগত নির্ধারক যেমন শিক্ষার্থীর প্রক্ষোভ, প্রবণতা, কৌতূহল প্রভৃতির দিকে লক্ষ রেখে শিক্ষাদান করা হলে শিক্ষার্থীরা মনােযােগী হয়, ফলে শিক্ষার ইতিবাচক দিকগুলির বিকাশ ঘটে, শিক্ষা ফলপ্রসূ হয়।

(7) বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে মনােযােগ : বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাপ্রণােদিত মনােযােগ সৃষ্টি হয়। এই অনুযায়ী শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিমূর্ত ভাবনার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। এই ইচ্ছাপ্রণােদিত মনােভাবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করবেন।

(8) মনােযােগের ক্ষেত্রসীমা: শিশুর মনােযােগের পরিসীমা যেহেতু সীমিত তাই শিক্ষক-শিক্ষিকা লক্ষ রাখবেন যাতে পাঠক্রম দীর্ঘ না হয় এবং বিষয়বস্তুকে খণ্ডীকরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন।

পরিশেষে বলা যায়, মনােযােগ পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান শর্ত। শিক্ষার্থীর জৈব-মানসিক সংগঠনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষককে শিক্ষণ প্রচেষ্টা চালাতে হবে, যাতে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর প্রতি তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক মনােযােগ সৃষ্টি হয়।