গিলফোর্ডের ত্রিমাত্রিক ধীশক্তির মাত্রাগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

গিলফোর্ডের ত্রিমাত্রিক ধীশক্তি


দক্ষিণ আমেরিকায় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গিলফোর্ড এবং তার সহকর্মীরা বুদ্ধির প্রকৃতি সম্পর্কে প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করেছেন। গিলফোর্ড প্রথমে বুদ্ধি এবং ধীশক্তি— এই দুই ধারণাকে তার তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।


গিলফোর্ডের মতে, ধীশক্তি হল মানুষের সকল প্রকার বৌদ্ধিক শক্তির সামগ্রিক আধার, যার প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন ধরনের মানসিক ও অন্যান্য ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু পরিবেশগত কারণে এই ধীশক্তি সবটা বাইরে প্রকাশ পায় না বা কাজে লাগানাে যায় না। অন্যদিকে, বুদ্ধি হল ধীশক্তির সেই অংশটি, যে অংশটা কাজে লাগানাে হয় বা প্রকাশ পায়। মােট কথা বুদ্ধি হল ধীশক্তির অংশবিশেষ।


১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে জে পি গিলফোর্ড বুদ্ধি সংক্রান্ত সাধারণ মানসিক উপাদানের ধারণাটিকে বর্জন করে ধীশক্তিকে ত্রিমাত্রিক বিশ্লেষণ করেছেন। এই তিনটি হল—

  • প্রাথমিক মানসিক প্রক্রিয়া সংক্রান্ত উপাদান। এই মাত্রাকে তিনি নাম দিয়েছেন প্রক্রিয়াগত (Operation) মাত্রা।
  • বিষয়বস্তু সংক্রান্ত উপাদান। অর্থাৎ বুদ্ধিমূলক কাজে বিষয়বস্তুর বিভিন্নতা লক্ষ করা যায়। এই মাত্রাকে তিনি বলেছেন বিষয়বস্তুগত (Content) মাত্রা।
  • জ্ঞানের প্রকৃতি সংক্রান্ত উপাদান। বুদ্ধির ক্রিয়ার ফলে ব্যক্তির কাছে জ্ঞাতব্য বিষয়বস্তু বিশেষ প্রকৃতিতে আসে। এই মাত্রাকে তিনি বলেছেন, ফলাফলের (Product) মাত্রা।


তিনটি মাত্রার মিথস্ক্রিয়ার সমন্বয় হল বুদ্ধি। গিলফোর্ডের ধীশক্তির ত্রিমাত্রিক তত্ত্বে পাঁচ প্রকার বিষয়বস্তুগত মাত্রা, ছয় প্রকার ফলাফলের মাত্রা এবং পাঁচ প্রকার প্রক্রিয়াগত মাত্রার কথা বলা হয়েছে। গিলফোর্ডের মতে, প্রতিটি বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রত্যেক প্রকার প্রতিক্রিয়া যুক্ত হয় এবং তার ফলে যে-কোনাে উৎপাদন গঠিত হতে পারে। অর্থাৎ আমাদের ধীশক্তি হল— ৫x৬x৫ অর্থাৎ ১৫০টি উপাদানের সমন্বয়।

গিলফোর্ডের ত্রিমাত্রিক ধীশক্তির মাত্রার বিশদ ব্যাখ্যা


(১) বিষয়বস্তুগত মাত্রার ভাগগুলি হল: (1) দর্শনধর্মী (Visual) বিষয়বস্তু, (2) শ্রবণধর্মী (Auditory) বিষয়বস্তু, (3) সাংকেতিক (Symbolic) বিষয়বস্তু, (4) বিমূর্ত ভাষামূলক (Semantic) বিষয়বস্তু, (5) আচরণমূলক (Behavioural) বিষয়বস্তু। বিষয়বস্তু সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা অর্জনে এই প্রক্রিয়াই প্রধান।


দর্শনগত উপাদানটি দেখার সঙ্গে সম্পর্কিত ইন্দ্রিয়ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে। শ্রবণগত উপাদান শােনার সঙ্গে সম্পর্কিত। সাংকেতিক বিষয় কোনাে তথ্যকে সংকেতের আকারে প্রকাশ করে। ভাষামূলক তথ্যাবলির সম্বন্ধ ভাষামুলক চিন্তন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। মানুষের প্রক্ষোভমুলক আচরণের সঙ্গে যুক্ত আচরণগত উপাদান।


(২) ফলাফলের মাত্রার ভাগগুলি হল: (1) একক (Unit), (2) শ্রেণি (Class), (3) সম্পর্ক  (Relation), (4) প্ৰণালী  (System), (5) রূপান্তর (Transformation), (6) তাৎপর্য (Implication)।


কোনাে বস্তুর বিচ্ছিন্ন অংশের মধ্যে একক অংশকে নির্বাচন করে একক উপাদান। শ্রেণিকরণের বৈশিষ্ট্য সাধারণ লক্ষণ নির্ণয় করা। একাধিক বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্যগত সম্পর্ক নির্ণীত হয় সম্পর্ক উপাদানের দ্বারা। প্রণালীর দ্বারা বিভিন্ন তথ্য ও বস্তুর বিভিন্ন অংশের বিন্যাস ঘটে, রূপান্তরের দ্বারা তথ্যের পরিবর্তন ও নতুনভাবে বর্ণনা সম্ভব হয়। তাৎপর্যের দ্বারা প্রাপ্ত তথ্যের সম্ভাব্যতা নির্ণয় করা হয়।


(৩) প্রক্রিয়াগত মাত্রার ভাগগুলি হল: (1) প্রত্যভিজ্ঞা (Cognition), (2) স্মৃতি (Memory), (3) অভিসারী চিন্তন (Divergent Thinking), (4) অপসারী চিন্তন (Convergent Thinking), (5) মূল্যায়ন (Evaluation)।


প্রত্যভিজ্ঞার দ্বারা কোনাে বস্তুকে চিনে নেওয়া হয়, স্মরণের দ্বারা অভিজ্ঞতাকে মনে করা হয়। অভিসারী চিন্তন অর্থাৎ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অপসারী চিন্তনের রূপ হল অভিসারী চিন্তনের বিপরীত, যেখানে মানসিক প্রক্রিয়ার উপাদানটি কেন্দ্রাতিগ প্রক্রিয়া। প্রাপ্ত তথ্যের যথার্থতা বিচার করা হয় মূল্যায়নের দ্বারা।


গিলফোর্ডের এই তত্ত্বে যে ১৫০টি উপাদানের কথা বলা হয়েছে। সেগুলির সবকটিকে এখনও আবিষ্কার করা যায়নি। তার ধারণা, আগামী দিনে অবশিষ্ট উপাদানগুলি আবিষ্কৃত হবে।


জৈবিক ও সামাজিক প্রেষণার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।


শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক আলােচনা করাে।


মনােযােগের প্রকৃতি লেখাে। বুদ্ধির বন্টন সম্পর্কে কী জানাে ?