নারী শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে NCWE-1959-এর সুপারিশ | ভারতীয় নারীশিক্ষা পরিষদ, নারীশিক্ষার সম্পর্কে সুপারিশ | ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের শ্রীমতী দুর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটি সম্পর্কে আলােচনা করাে।

শ্রীমতী দুর্গাবাঈ দেশমুখ কমিটি

ভারতীয় সংবিধানে যে-সমস্ত মৌলিক অধিকারের কথা বর্ণিত হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হল নারীর অধিকার। সংবিধান-প্রণেতাগণ। উপলব্ধি করেছিলেন যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের পুরুষদের সমকক্ষ করে তুলতে না পারলে স্বপ্নের ভারতবর্য কখনােই গঠন করা সম্ভব হবে না। তার জন্য সবার আগে দরকার নারীশিক্ষা

নারী শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে NCWE-১৯৫৯-এর সুপারিশ

স্বাধীনতার পরবর্তীকালে আমাদের দেশের নেতারা নারীশিক্ষা প্রসারের দিকে বিশেষ নজর দেন। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অংশের ১৪, ১৫ ও ১৬নং ধারায় সকলের জন্য সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। আইনের চোখে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিক সমান বলা হয়েছে। সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রেও কোনাে তারতম্য করা চলবে না। সরকারও নারীদের শিক্ষার অগ্রগতির দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। ১৯৪৮-৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠিত রাধাকৃষ্মণ কমিটি ও ১৯৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দে গঠিত মুদালিয়র কমিশন নারীশিক্ষার উন্নতিকল্পে বিবিধ সুপারিশ করে। এইসব সুপারিশের ফলে নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও নারীশিক্ষার সমস্যার সমাধান সেভাবে হয়নি। তাই ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার নারীশিক্ষার জন্য জাতীয় কমিটি (National Committee for Women Education) নিয়ােগ করল। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীমতী দুর্গাবাঈ দেশমুখ-এর সভাপতিত্বে এই কমিটি যেসব সুপারিশ করে তা হল—

(১) কেন্দ্রে National Council for the Education of Girls and Women গঠন করতে হবে।

(২) নারীশিক্ষার দায়িত্ব একজন যুগ্ম শিক্ষা পরামর্শদাতার (Joint Education Advisor) বা হাতে দেওয়া উচিত।

(৩) প্রত্যেক রাজ্যে যুগ্ম আধিকারিক (Joint Director) পদে একজন মহিলা নিযুক্ত হবেন। তার হাতে থাকবে নারীশিক্ষার দায়িত্ব। 

(৪) মেয়েদের শিক্ষার জন্য আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। 

(৫) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেখানে শিক্ষিকা নেই সেখানে School mother নিয়ােগ করতে হবে। 

(৬) প্রাথমিক স্তরে ছেলে ও মেয়েদের একই ধরনের পাঠক্রম থাকবে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের পাঠক্রম ছেলেদের থেকে পৃথক হবে।

(৭) Girls' School বা Co-ed School গুলিতে আংশিক সময়ের জন্য শিক্ষিকা নিয়ােগ করা যেতে পারে যাতে গৃহকাজ ও শিক্ষকতার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা সম্ভব হয়।

(৮) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের জন্য বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়ােজনে বৃত্তিশিক্ষার পৃথক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। 

(৯) দূরের ছাত্রীদের জন্য ছাত্রীনিবাস বা Hostel-এর ব্যবস্থা করতে হবে।

(১০) বিদ্যালয়ে থাকার জন্য যাতায়াতের সুব্যবস্থা ও বিনামূল্যে টিফিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 

(১১) বয়স্ক মহিলাদের জন্য স্বল্প সময়ের কোর্স চালু করতে হবে।

(১২) NCWE কমিটির সুপারিশের দ্বিতীয় ধারা অনুসারে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার শ্রীমতী দুর্গাবাঈ দেশমুখের নেতৃত্বে জাতীয় নারীশিক্ষা পরিষদ গঠন করে। নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য এবং নারীদের বিভিন্ন সমস্যাসমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অধীন একটি বিশেষ বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। নারীশিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন, গবেষণার সুযােগ সৃষ্টি করার জন্য প্রত্যেক রাজ্যে স্ত্রীশিক্ষা পরিষদ গঠিত হয় এবং কেন্দ্রীয় পরিষদের পরামর্শে গঠিত হয় নারীশিক্ষা প্রসঙ্গে জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে অবহেলিত নারীজীবনের আঙিনা যাতে সাধারণভাবে প্রত্যক্ষ সহযােগিতায় দীপ্ত হয়ে ওঠে, সেটাই ছিল  প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

দীর্ঘদিন ধরে নারীশিক্ষা তথা অবস্থার উন্নতি ঘটানাের চেষ্টা করলেও এখনও বিদ্যালয়ছুট, অল্প বয়সে বিবাহ, মাতৃত্ব প্রভৃতি কারণে প্রচুর মেয়েরা শিক্ষা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশেষ ভাতা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করে নারীশিক্ষাকে ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

শিক্ষায় সমান সুযােগ সম্পর্কে কোঠারি কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলি আলােচনা করাে।


সরকারি ভাষা সম্পর্কে সাংবিধানিক ধারাগুলি বর্ণনা করাে।


নারী প্রয়ােজনীয়তা কী? স্বাধীন ভারতে নারী শিক্ষা বিষয়ে রাধাকৃষ্মণ কমিশন, মুদালিয়র কমিশন ও কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে।