তপশিলি জাতি (SC) এবং তপশিলি উপজাতি (ST)-র শিক্ষার উন্নয়নে কোঠারি কমিশন এবং জাতীয় শিক্ষানীতি, ১৯৮৬-এর অভিমত কী ছিল?

তপশিলি জাতি (SC) এবং তপশিলি উপজাতি (ST)-র শিক্ষার উন্নয়নে কোঠারি কমিশনের অভিমত

ভারতে তপশিলি সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা মােট জনসংখ্যার ১৫% এবং উপজাতির সংখ্যা সমগ্র জনসংখ্যার ৪%। এই বিরাট অংশের জনগণের জন্য শিক্ষার সুযােগ খুবই কম। এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ  তাই শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়েও আছে। তাই কোঠারি কমিশন এই সম্প্রদায় দটির শিক্ষার প্রসারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তপশিলি জাতি এবং  তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষার উন্নতিকল্পে কোঠারি কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলি হল—

(১) সুযােগসুবিধা টিকিয়ে রাখা : তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত সম্প্রদায়গুলি শিক্ষার ব্যাপারে যেসব সুযােগ সুবিধা বর্তমানে পাচ্ছে সেগুলি বহাল থাকবে এবং এইসব সুবিধা আরও বাড়াতে হবে।

(২) প্রাথমিক স্তরে সুযােগ বৃদ্ধি: প্রাথমিক স্তরে অনুন্নত শ্রেণির জন্য সুযােগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। জনবিরল অঞ্চলগুলিতে বহুসংখ্যক আশ্রম-বিদ্যালয় স্থাপন করা দরকার।

(৩) ছাত্রাবাস ও Day School Centre: অনুন্নত শ্রেণির ছেলেমেয়েদের জন্য ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করতে হবে ও Day School Centre-এর ব্যবস্থা করতে হবে।

(৪) শিক্ষার প্রসার: তপশিলি উপজাতিদের মধ্যে যাতে উচ্চ-প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার ঘটে তার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।

(৫) শিক্ষা সহায়ক উপকরণ: শিক্ষার দ্রুত প্রসারের জন্য শিক্ষাসহায়ক উপকরণগুলি উপজাতিদের ভাষায় তৈরি করতে হবে।

(৬) সংগঠন পরিচালনা: তপশিলি উপজাতিদের উন্নতিকল্পে এমন একটি সংগঠন তৈরি করতে হবে যেখানে প্রথম দিকে উপজাতি নয়, অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত ব্যক্তি সংগঠনটির পরিচালনায় থাকবেন। পরে শিক্ষিত উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষই সংগঠনটি পরিচালনা করবেন। উচ্চ মেধাসম্পন্ন উপজাতীয় যুবকদের বিভিন্ন অনুন্নত এলাকায় কাজের জন্য পাঠাতে হবে।

(৭) যাযাবর ও অর্ধযাযাবরদের শিক্ষার সুযােগ: যাযাবর ও অর্ধযাযাবর (Nomadic and Semi-nomadic) শ্রেণির জন্য শিক্ষার সুযােগ আরও বৃদ্ধি করা দরকার।

তপশিলি জাতি (SC)-র শিক্ষার উন্নয়নে জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬)-র অভিমত


জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬)-র মূল বক্তব্য হল, শিক্ষার সর্বস্তরে তপশিলি জাতি ও তপশিলি বহির্ভূত জাতির মধ্যে কোনাে পার্থক্য থাকবে না। এদের অগ্রগতির জন্য কয়েকটি কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে— 

(১) বাধ্যতামূলক শিক্ষা: ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের যাতে নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠানাে হয় তার জন্য পরিবারগুলিকে উৎসাহ প্রদান।

(২) শিক্ষায় বৃত্তিপ্রদান: ঝাড়ুদার, শ্মশানকর্মী প্রভৃতি চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পরিবারের শিশুদের প্রত্যেকের জন্য প্রথম শ্রেণি থেকে উচ্চশ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করা।

(৩) শিক্ষাগত পরিকল্পনা: বিদ্যালয়ে তপশিলি জাতিভুক্ত শিশুদের পড়াশােনার মান যাতে নেমে না যায় তার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাগত পরিকল্পনা গ্রহণ।

(৪) ছাত্রবাসের ব্যবস্থা: তপশিলি জাতিভুক্ত ছাত্রদের জন্য ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করা।

(৫) তপশিলি শিক্ষক: বিভিন্ন বিদ্যালয়ে তপশিলি জাতিভুক্ত উপযুক্ত ব্যক্তিকে বেছে নিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়ােগ– যা তপশিলি ছাত্রছাত্রীদের কাছে উৎসাহব্যঞ্জক হবে।

(৬) শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা: তপশিলি শ্রেণির সুবিধামতাে স্থানে বিদ্যালয়, শিশুদের অঙ্গনওয়াড়ি এবং বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রগুলি প্রতিষ্ঠা করা।

তপশিলি উপজাতি (ST)-র শিক্ষার উন্নয়নে জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬)-র অভিমত


জাতীয় শিক্ষানীতিতে (১৯৮৬)- আদিবাসীদের শিক্ষার মান অন্যান্যদের সমতুল করে তােলার জন্য কয়েকটি প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে— 

(১) প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন: তপশিলি উপজাতিদের এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

(২) ভাষার গুরুত্ব: তপশিলি উপজাতিদের ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষাকে শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।

(৩) উপজাতীয় ভাষায় পাঠক্রম: তপশিলি উপজাতিদের জন্য পাঠক্রম উপজাতীয় ভাষায় রচনা করা প্রয়ােজন।

(৪) আবাসিক ও আশ্রম বিদ্যালয়: তপশিলি উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বহুসংখ্যক আবাসিক বিদ্যালয় ও আশ্রম-বিদ্যালয় স্থাপন করা প্রয়ােজন।

(৫) কারিগরি শিক্ষা: তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের দৈনন্দিন প্রয়ােজন ও জীবনধারণের প্রয়ােজনের দিকে লক্ষ রেখে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৬) পেশাগত শিক্ষায় বৃত্তি: কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা প্রসারের জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন।

(৭) নারী শিক্ষা: তপশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজন বিশেষত মেয়েরা যাতে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে শামিল হতে পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।

(৮) প্রথাবর্হিভূত ও বয়স্ক শিক্ষা: শিক্ষার স্বচ্ছ পরিমণ্ডল গড়ে তোলার জন্য তপশিলি উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কার্যক্রম, প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৯) উপজাতীয় কৃষ্টি: শিক্ষার সর্বস্তরের পাঠক্রম এমন হবে যাতে উপজাতীয় কৃষ্টি সম্পর্কে চেতনা জাগ্রত হয় ও সম্ভাব্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে।

(১০) আদিবাসী যুবকদের শিক্ষকের চাকুরি: মেধামুক্ত সম্ভাবনাপূর্ণ আদিবাসী যুবকদের শিক্ষাকতা করার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।

যুগ্ম তালিকা সম্বন্ধে সাংবিধানিক শিক্ষাসংক্রান্ত সুপারিশটি আলােচনা করাে।


ভারতীয় সংবিধানের শিক্ষা-সম্পর্কিত ধারা | ভারতীয় সংবিধানের কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও যৌথ তালিকার অন্তর্গত ধারা | ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত শিক্ষাসংক্রান্ত সুপারিশ


৪৫নং এবং ৪৬নং ধারা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের মতামত আলােচনা করাে।