শিক্ষকের মর্যাদা ও পেশাগত দক্ষতা অর্জন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতিতে কী বলা হয়েছে? শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য উল্লেখ করাে।

শিক্ষকের মর্যাদা ও পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য

জাতীয় শিক্ষানীতির নবম অধ্যায় শিক্ষকের মর্যাদা ও পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, শিক্ষক হলেন সমাজে সকল পেশার ঊর্ধ্বে। যে সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা যত বেশি সেই সমাজের অগ্রগতি তত বেশি। শিক্ষকের কর্মদক্ষতার উপর শিক্ষার মান নির্ভর করে। তাই প্রতিটি শিক্ষকের মধ্যে কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে।

(A) শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতি:

(১) মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়ােগ : শিক্ষকদের নিয়ােগ পদ্ধতি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। উন্নত মেধা সম্পন্ন আগ্রহী শিক্ষার্থীরাই যাতে এই পেশায় যুক্ত হতে পারে, এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

(২) বোতল ও চাকুরীর শর্তাবলী : চাকুরির বেতন ও শর্তাবলি তাদের সামাজিক ও পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে সংগতি রেখে ঠিক করতে হবে।

(৩) আচরণবিধি প্রণয়ন : জাতীয় সংস্থা গুলোর (Teacher Association) সহযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য একটি আচরণবিধি তৈরি করা হবে।

(৪) মুক্ত আলোচনা : শিক্ষকদের কাজের মূল্যায়নের জন্য খোলাখুলি আলােচনা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হবে।

(৫) পুরস্কার প্রদান : শিক্ষকদের কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পুরস্কারের ব্যবস্থা বা প্রমোশনের ব্যবস্থা থাকবে।

(৬) শিক্ষা সার্ভিস স্থাপন : সর্বভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস স্থাপন করা হবে। সারা দেশে শিক্ষকদের একইরকম বেতন হার, প্রভিডেন্ট ফান্ড, চাকুরির শর্ত, ছুটি ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকবে।

(B) শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা অর্জন সম্পর্কে যেসকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে :

(১) NCTE গঠন : শিক্ষক-শিক্ষণ হবে একটি নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি। এই উদ্দেশ্যে জাতীয় শিক্ষক-শিক্ষণ সংস্থা (National Council of Teacher Education, NCTE) গঠন করা হবে। এর কাজ হবে শিক্ষক-শিক্ষণ সংস্থাগুলির উন্নত মান বজায় রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা।

(২) DIET গঠন : প্রতিটি জেলায় একটি করে DIET বা District Institute of Education and Training প্রতিষ্ঠা করা হবে।  এই প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষক, প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের চাকরিরত অবস্থায় অথবা চাকরি-পূর্ব অবস্থায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। DIET প্রতিষ্ঠার পরে নিম্নমানের প্রতিষ্ঠানগুলিকে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

(৩) SCERT গঠন : প্রতিটি রাজ্যে একটি করে SCERT বা State Council of Educational Research and Training স্থাপন করা হবে। জেলার শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজগুলির সঙ্গে SCERT-এর কাজের সংযোগ থাকবে।

(৪) শিক্ষক সংঘের ভূমিকা : শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং পেশাগত সংহতির উন্নয়নে শিক্ষক সংঘ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

(৫) National Code of Professional Ethics (NCPE) : সরকারের হাতে হাত মিলিয়ে জাতীয় স্তরের শিক্ষক সংঘ শিক্ষকদের জন্য National Code of Professional Ethics প্রস্তুত করবে এবং সেই নীতি পালনের দিকে শিক্ষকরাও তাদের লক্ষ্য নির্দেশ করবেন।

(৬) NCTE-এর ক্ষমতা : শিক্ষক-শিক্ষণের জাতীয় পরিষদকে (NCTE) প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সামর্থ্য দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির সমতুল ক্ষমতা প্রদান করা হবে। এরা পাঠক্রম ও শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শদানের সামর্থ্য অর্জন করবে।

(৭) IES গঠন : জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য IES বা Indian Education Service গঠন করতে হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য

(১) শিক্ষার উদ্দেশ্য ও আদর্শগুলি পালনের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণ করা। 
(২) শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। জনগণের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদার সঙ্গে দেশের উন্নয়নের সমন্বয়সাধন করা।
(৩) বিকেন্দ্রীকরণ নীতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। 
(৪) শিক্ষা পরিচালনায় বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির যুক্ত করা।

(A) জাতীয় স্তর (National Level) :

জাতীয় স্তরে শিক্ষার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ বা Central Advisory Board of Education (CABE)-কে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই পর্ষদ মানবসম্পদ উন্নয়নের কর্মসূচির বিভিন্ন দিকের মধ্যে সমন্বয়সাধন করবে।

(B) রাজ্যস্তর (State Level) :

জাতীয় স্তরে CABE-এর মতে রাজ্যস্তরে একটি করে রাজ্য শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ (State Advisory Board of Education, SABE) গঠন করা হবে। এই পর্ষদ রাজ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন সংস্থা গুলোর কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা রচয়িতা, প্রশাসক এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের যথাযথ শিক্ষাদানের উপর বিশেষ মনােযােগ দিতে হবে। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ব্যবস্থা গৃহীত হবে।

(C) জোলা ও আঞ্চলিক স্তর (District and Local Level) :

উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা পরিচালনার জন্য জেলা শিক্ষা বোর্ড গঠিত হবে। শিক্ষার উন্নয়নের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে কেন্দ্র, রাজ্য, জেলা এবং আঞ্চলিক সংস্থাগুলি পরিকল্পনা রূপায়ণের সমন্বয়, পরিচালনা এবং মূল্যায়ন পর্যায়ে অংশগ্রহণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের উপর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের দায়িত্ব প্রদান করা হবে। বিদ্যালয়ের মিশ্র কর্মসূচিকে নমনীয় করতে হবে, যেন শিক্ষকগণ পেশাগত কাজকর্মে উৎসাহিত হন, যেন প্রত্যেকেই বিধিগুলি মেনে চলেন এবং প্রত্যেকেই যেন অভিজ্ঞতা ও সুযােগসুবিধার অংশীদার হতে পারেন।

(D) উপযুক্ত পরিকাঠামোর (suitable Structure) :

জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য একটি উপযুক্ত পরিকাঠামোর এবং যোগ্য ব্যক্তিদের প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে একটি সর্বভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস (Indian Education Service, IES) চালু করা হবে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নীতি, কার্যাবলি এবং কর্মী বাছাইয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

(E) প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা (Training System) :

উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে শিক্ষাপ্রশাসক, পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়কদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

(F) স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং অন্যান্য সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান :

উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক সংগতি থাকলে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলিকে শিক্ষার কাজে উৎসাহিত করা হবে। তবে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(G) ভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস :

শিক্ষায় উপযুক্ত পরিচালন কাঠামো অঙ্গ স্বরূপ সর্বভারতীয় সার্ভিস হিসেবে Indian Education Service প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এই সার্ভিসের মৌলিক নীতি, কার্যাবলী, কর্মী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রবর্তিত বয়স্ক শিক্ষা ও বিধিমুক্ত শিক্ষা | বয়স্ক শিক্ষা প্রসারের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬-এর বক্তব্য


দূরাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির (১৯৮৬ খ্রি:) নীতিগুলি উল্লেখ করো।


চ্যালেঞ্জ অফ এডুকেশন শিক্ষানীতিতে শিক্ষার বৃত্তিমুখী তা সম্পর্কে উল্লেখিত বিষয়গুলো উল্লেখ করো।