অ্যানালফাবেটিজম কি | ভারতে শিক্ষার বিভিন্ন সংস্থাগুলি সম্পর্কে আলােচনা করাে।

অ্যানালফাবেটি জম

(অ্যানালফাবেটিজম) বা সাক্ষর ব্যক্তি— আভিধানিক অর্থে সাক্ষরতা হল অক্ষর পরিচিতি, লেখা ও পড়ার ক্ষমতা। যদি কোন ব্যক্তি কোন বিষয় পড়ে সেটিকে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়, তাকে অ্যানালফাবেটিজম (সাক্ষর ব্যক্তি) বলে।

ভারতে শিক্ষার বিভিন্ন সংস্থা

(১) জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও শিক্ষা পর্ষদ (NCERT) : এই সংস্থাটি সারাদেশ জুড়ে বয়স্কশিক্ষার জন্য নানা ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে ও তা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের নির্দেশিকা দেয়।

(২) সাক্ষরতাকেন্দ্র : সাক্ষরতা কেন্দ্রগুলো 3R অর্থাৎ লেখা, পড়া ও সাধারণ গণিতের শিক্ষা দেয়, যার মাধ্যমে বয়স্ক মানুষরা দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজগুলি সহজে করতে পারে।

(৩) নৈশ বিদ্যালয় : কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আর্থিক সচ্ছলতায় সারা দেশে প্রায় এক লক্ষেরও বেশি নৈশ বিদ্যালয়ের মাধ্যমে সাক্ষরতা প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগেও বহু নৈশ বিদ্যালয় পরিচালিত হয়।

(৪) জনশিক্ষা নিলয় : সাক্ষরতা প্রসারে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক একটি জাতীয় সাক্ষরতা মিশন গঠন করে। সেই অনুযায়ী ১৯ টি রাজ্যের ৪০ টি জেলা নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে সাক্ষরতার কাজ শুরু হয় মূলত ১৫-৩৫ বছরের নিরক্ষরদের জন্য। এই জেলাগুলিতে জনশিক্ষা নিলয় তৈরি হয়। স্থির হয়, সাক্ষরতা কেন্দ্র গুলি এই নিলয়ের অধীনে কাজ করবে। এখানে প্রয়ােজনমতাে শিক্ষক থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাঠরত শিক্ষার্থীরা অন্তত ১০ দিন করে পাঠদান করবে। এখানে লেখা, পড়া, সহজ গণিত শেখানো হয়।

(৫) কমিউনিটি সেন্টার : এখানে মূলত হাতের কাজ শেখানো হয়, সেই সঙ্গে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন ধরনের খবর আদান প্রদানের ব্যবস্থা থাকে।

(৬) মহিলা সমিতি : এখানে পরিবারকল্যাণ, শিশুপালন ছাড়া আর্থিক সহযোগিতার জন্য সেলাই করা, উল বোনা, দর্জির কাজ, গার্হস্থ্য শিক্ষা ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে।

(৭) জনতা কলেজ : পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং, এছাড়া ত্রিপুরা, মণিপুরে এই ধরনের কলেজ আছে। এইসব স্থানে সমাজের প্রয়ােজন ও শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী উৎপাদনমূলক কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

(৮) যুব সমিতি : যুব সমিতির গুলিতে খেলাধুলা, ব্যায়াম, সাহিত্য আলোচনা, গল্প বলা, নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলোকে বলা ইত্যাদি করা হয়।

(৯) জাতীয় সেবা প্রকল্প : এটি বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় গুলিতে থাকে। বয়স্ক শিক্ষা, জনশিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা ও তার মোকাবিলা এই ধরনের সংস্থার কাজের অন্তর্ভুক্ত।

(১০) গ্রামের বয়স্কশিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন : সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাক্ষরতার জন্য প্রায় সাত লক্ষ গ্রামীণ বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।

(১১) জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি (NAEP) : এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২ অক্টোবর। এর উদ্দেশ্য হল বয়স্কাদের সাক্ষর করে তােলা, কুসংস্কার দূর করে সমাজের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করা।

(১২) জাতীয় সাক্ষরতা মিশন (NLM) : এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে। এর উদ্দেশ্য হল ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১৫-৩৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের স্বাক্ষর করে তোলা।

(১৩) সবশিক্ষা অভিযান : ২০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৬-১৪ বছর বয়সি সকল শিশুর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রারম্ভিক শিক্ষা সমাপ্ত করা।

(১৪) পূর্ণ সাক্ষরতা অভিযান (TLC) : ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে পূর্ণ সাক্ষরতা অভিযানের কাজ শুরু হয়। এর উদ্দেশ্য হল বয়স্কশিক্ষা বা সামাজিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরােপ করা। এদের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ তহবিল গঠন করা।

(১৫) প্রবহমান কর্মসূচি : ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি থেকে প্রবাহমান শিক্ষা কর্মসূচি শুরু হয়। এর উদ্দেশ্য হল জীবনযাত্রার মানকে আরও উন্নত করা এবং নব্য সাক্ষর এর পেশাগত দক্ষতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

(১৬) সাক্ষরোত্তর কর্মসূচি : এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হল নব্যসাক্ষরদের অর্জিত শিক্ষার মানকে আরও উন্নত করা।

(১৭) মুক্ত বিদ্যালয় : মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজে যুক্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে পারে অপ্রথাগতভাবে।