শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্যে কারিগরিবিদ্যার মুখ্য নীতি কীভাবে প্রয়ােগ করা হয় আলােচনা করাে।

কারিগরি কথাটির অর্থ হল শিক্ষাপ্রণালীর দক্ষতা অর্জন। যে বিশেষ শিক্ষার সাহায্যে কোনাে বিষয়ের দক্ষতার বিকাশ ঘটানাে হয়, তাকে বলে কারিগরি শিক্ষা। শিখন ও শিক্ষণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক কৌশলের প্রয়ােগই হল শিক্ষামূলক কারিগরিবিদ্যা। কারিগরিবিদ্যা বর্তমানে শিক্ষাবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলােচনার ক্ষেত্র।

শিক্ষায় কারিগরিবিদ্যার প্রয়ােগ

কারিগরিবিদ্যার বিভিন্ন ব্যাবহারিক জ্ঞান এবং যন্ত্রপাতি শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা হয়ে থাকে। মনােবিদগণ বলেন, কারিগরিবিদ্যা শুধুমাত্র কোনাে বস্তুধর্মী যান্ত্রিক কৌশল সৃষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কোনাে মানুষ তার বিশেষ কোনাে চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য তথাকথিত পরিচিত বস্তুধর্মী কৌশল ছাড়াও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে এবং উদ্দেশ্যমুখী প্রতিক্রিয়া করতে পারে।

আধুনিক শিক্ষাবিদগণ মনােবৈজ্ঞানিক ধারণা অনুসরণ করে শিক্ষা প্রক্রিয়া ও শিক্ষণ প্রক্রিয়া কারিগরি বিদ্যার অন্তর্গত এক ধরনের প্রক্রিয়া হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে।

তিনটি পর্যায়: প্রথাগত কারিগরিবিদ্যার ধারণা অনুযায়ী তার নির্মিত যে-কোনাে যান্ত্রিক কৌশলের তিনটি পর্যায় থাকে ―

(১) প্রারম্ভিক পর্যায় (Input) : এই পর্যায়ে যন্ত্রটিকে প্রারম্ভিক তথ্য প্রদান করা হয়।

(২) ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়া (Process) : প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে যন্ত্রটিকে ক্রিয়াশীল করে তােলা হয় যে পদ্ধতিতে, তাকে বলে যন্ত্রটির ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়া। এইক্ষেত্রে শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়।

(৩) প্রান্তীয় ফল (Output) : উল্লিখিত ক্রিয়ার দরুন কিছু ফল যন্ত্রটির মাধ্যমে পাওয়া যায়, যাকে বলে প্রান্তীয় ফল। শিক্ষার্থীর আচরণের পরিবর্তন হল প্রান্তীয় ফল।

আধুনিক শিক্ষাবিদগণ বলেছেন, যে-কোনাে পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রক্রিয়া কার্যকর করতে হলে ৩টি পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলির উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন। নিম্নে তা আলােচনা করা হল ―

➽ ইনপুট : শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর শিখন-পূর্ব বৈশিষ্ট্যগুলিকে বলা যেতে পারে ইনপুট বা প্রারম্ভিক বৈশিষ্ট্যাবলি। সাধারণভাবে শিক্ষার্থীর কতকগুলি বৈশিষ্ট্যকে তার প্রস্তুতি বা প্রারম্ভিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, যেমন一
  • ক্ষমতাবলি, প্রেষণা ইত্যাদি,
  • শিক্ষার্থীর পূর্ব অভিমত,
  • শিক্ষার্থীদের বােধগম্যতার স্তর,
  • ইতিপূর্বে প্রযুক্ত কৌশলের কার্যকারিতা,
  • পূর্বে ব্যবহৃত শিখন সহায়ক কৌশলের কার্যকারিতা।
➽ প্রক্রিয়া : শিক্ষাপ্রক্রিয়ার দ্বিতীয় পর্যায়ে শিখন ও শিক্ষণ সংঘটিত হওয়া প্রয়ােজন। শিখন ও শিক্ষণ প্রক্রিয়া দুটি পারস্পরিক সংযােগের মাধ্যমে কীভাবে সক্রিয় হতে পারে, সেই সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলি এক্ষেত্রে সঠিকভাবে নির্বাচন করা প্রয়ােজন। যেমন一
  • পাঠ্য বিষয়বস্তু উপস্থাপন উপযােগী পরিবেশ,
  • শিখনের উপযােগী যথার্থ পদ্ধতি ও কৌশল নির্বাচন,
  • উদ্দেশ্য অভিমুখী পরিবর্তিত আচরণযােগ্য উপকরণ প্রয়ােগ,
  • শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযােগ স্থাপন উপযােগী যান্ত্রিক কৌশল,
  • শিখনকে কার্যকর করার প্রেষণা সঞ্চারক ব্যবস্থা নির্বাচন,
  • শিক্ষা উপযােগী শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক।
➽ ফল : শিক্ষণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে শিখনের ফলশ্রুতিকেই প্রান্তীয় ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই প্রান্তীয় ফলের যথার্থতা হিসেবে শিক্ষার্থীর যে আচরণ বা বৈশিষ্ট্য গুলি বিবেচনা করা হয় সেগুলি হল一
  • বিষয়বস্তুর সার্থক বিশ্লেষণ পদ্ধতি গ্রহণ,
  • শিখনের মূল উদ্দেশ্য অভিমুখী আচরণ সম্পাদন,
  • প্রযুক্তি শিখন পদ্ধতি ও শিক্ষণ কৌশলের যথার্থতা গ্রহণ,
  • শিক্ষার্থীর নিজের আচরণগত পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ।
উল্লিখিত আলােচনা থেকে জানা যাচ্ছে, শিক্ষা একটি জটিল এবং বিস্তৃত প্রক্রিয়া। কারিগরিবিদ্যা বা তার যন্ত্র কীভাবে প্রবেশ করল এবং কতটুকু সেগুলি শিক্ষার্থীর শিখনকে প্রভাবিত করে সেইটুকুই সর্বশেষ বিচার্য বিষয় নয়, সেগুলির আগমন এবং ব্যবহার কত সার্থকভাবে কার্যকর করা গেছে সেটিই শিখন এবং শিক্ষণ উভয় প্রক্রিয়ারই মূল উদ্দেশ্য।