উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রি.)-তে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় | উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৯৮৬ ও ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের সুপারিশ গুলি কী কী ছিল?

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতিতে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে পৃথক উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দু-ধরনের, যেমন গুণগত এবং সংখ্যাগত দিকের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষানীতিতে পঞ্চম অধ্যায়ে উচ্চশিক্ষা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় নির্বাচন বা প্রবেশকে সীমিত রেখে গুণগত মান বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রি.)-র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

(১) দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি: উচ্চশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে সাহায্য করা।

(২) সমস্যার সমাধান : উচ্চশিক্ষা মানুষকে জটিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে।

(৩) জ্ঞান বিকাশ : জ্ঞানের বিকাশ ও সম্প্রসারণে উচ্চশিক্ষা সাহায্য করে।

(৪) শিক্ষক সরবরাহ : শিক্ষা পিরামিডের সর্বোচ্চ স্তর থেকে অন্যান্য স্তরের যোগ্য শিক্ষক সরবরাহ করায় উচ্চ শিক্ষার অবদান অনস্বীকার্য।

(৫) সচল শিক্ষা ব্যবস্থা : সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রাখা এবং তার গতিপথ নির্ণয় করে দেয় উচ্চশিক্ষা।

(৬) বহুমুখী পাঠক্রম : এই উদ্দেশ্যগুলোকে সফল করে তোলার জন্য পাঠক্রমের পরিবর্তন করা প্রয়োজন এবং বহুমুখী পাঠক্রমের ব্যবস্থা থাকা একান্ত আবশ্যক।

(৭) গবেষণায় উৎকর্ষ সাধন : উচ্চশিক্ষার নতুন নতুন গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে হবে এবং তার উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গবেষণার উৎকর্ষের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় সংস্থা গঠিত হবে। এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত হবে সাধারণ উচ্চশিক্ষা, কৃষি, ভেষজ, কারিগরি, আইন ও অন্যান্য পেশাগত শিক্ষা।

(৮) বিবিধ ব্যবস্থাপনা : উচ্চশিক্ষাকে সচল রাখার জন্য যেসকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেগুলি হল—
  • গুরুত্ব প্ৰদান: বর্তমানে সারা ভারতে ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রায় ৫০০০টি কলেজ আছে। নতুন কলেজ না খুলে, যেগুলো আছে এগুলো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
  • স্বয়ংশাসিত কলেজ: কলেজগুলোর অনুমোদনের যে রীতি বর্তমানে প্রচলিত আছে, সেগুলি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আশানুরূপ নয়। কলেজগুলির দায়বদ্ধতা বাড়ানাের জন্য স্বয়ংশাসিত কলেজগুলির (Autonomous College) প্রশাসন ব্যবস্থার যত শীঘ্র সম্ভব পরিবর্তন করা হবে। তবে স্বশাসন ও স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত হবে বাধ্যবাধকতা পালনের দায়িত্ব।
  • পাঠক্রম পুনর্বিন্যাস: উচ্চশিক্ষাস্তরে পাঠক্রমে বিশেষীকরণ উপর জোর দেওয়া হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠক্রম পুনর্বিন্যাস করতে হবে। পাঠক্রম কে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।
  • ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি: পাঠক্রমে ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
  • যোগাযোগ স্থাপনে: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার ক্ষেত্রে গবেষণার সমন্বয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য গবেষণা সংস্থার সঙ্গে যােগাযােগ রাখা প্রয়োজন।
  • প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষা: শিক্ষণ পদ্ধতি হবে বাস্তব প্রয়োগভিত্তিক। প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তির ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হবে। শিক্ষা পদ্ধতির প্রয়োগভিত্তিক রুপান্তরের বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে।
  • শিক্ষক-শিক্ষণ: শিক্ষকদের জন্য চলমান শিক্ষণের সুযোগ (Continuing Education) সৃষ্টি করা হবে এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে। উৎকর্ষতার ভিত্তিতে সবকটি শিক্ষক পদ পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • গবেষণায় গুরুত্ব প্ৰদান: উচ্চশিক্ষায় ভারততত্ত্ব, নানা মানবিক বিষয় ও সমাজবিজ্ঞানের গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়া হবে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নতুন গবেষণা এবং তার উচ্চমান বজায় রাখার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
  • Council ও UGC: উচ্চশিক্ষা ও সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য প্রত্যেক রাজ্যে উচ্চশিক্ষা সংসদ (Council of Higher Education) স্থাপন করতে হবে। এর মাধ্যমে রাজ্য স্তরের পরিকল্পনা এবং উচ্চ শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়সাধনের ব্যবস্থা করা হবে। UGC এবং এই Council শিক্ষার উচ্চমান বজায় রাখার জন্য সমন্বয় সাধক পদ্ধতির উন্নয়নে মনোনিবেশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (University Grants Commission- UGC) এবং উচ্চশিক্ষা সংসদ উভয়েই উচ্চশিক্ষার মান বজায় রাখতে সচেষ্ট হবে।