মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণ পদ্ধতি বিষয়ে সুপারিশ | নির্দেশনা ও পরামর্শদান সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি কি কি।

মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য কী ধরনের শিক্ষাক্রম গ্রহণ করা উচিত এবং কোন ধরনের শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে অনেক দূর অগ্রসর হতে পারবে, তা নিয়ে আলোচনাকালে নতুন ধরনের শিক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণে সচেষ্ট হয়েছিল। কমিশন কর্তৃক শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা ব্যবস্থা প্রচলনের সুপারিশও করা হয়েছিল।

শিক্ষণ পদ্ধতি সংক্রান্ত সুপারিশ

পাঠক্রম সুনির্বাচিত হলেই যে শিশুর শিক্ষা সফল হবে এমন কথা বলা যায় না। সফল শিক্ষার জন্য শিক্ষককে উপযুক্ত শিক্ষণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হবে। শিক্ষা পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ হলে শিক্ষা ব্যর্থ হতে বাধ্য। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন পাঠক্রম সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষণ পদ্ধতিরও পরিবর্তন সাধনের সুপারিশ করেছে। কমিশন বলে যে, শিক্ষণ পদ্ধতি হল, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার একটি জৈবিক সম্পর্ক। শিক্ষণ পদ্ধতি কার্যকর করতে হলে শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক ও প্রাক্ষোভিক চাহিদা পূরণ হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষণ পদ্ধতি যথাযথ না হলে শিক্ষায় সাফল্য আসা সম্ভব নয়। শিক্ষায় সাফল্য আনতে গেলে শিক্ষকদের নতুন নতুন শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে হবে, আর এজন্য প্রয়োজন আলােচনা সভা, কর্মশালা (Workshop), স্বল্পকালীন শিক্ষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।

(১) অনুসন্ধান মুখী: শিক্ষক প্রথমে বিষয়বস্তু সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপন করবেন, যাতে শিক্ষার্থীর কাজে আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে অনুসন্ধানমুখী স্পৃহা জাগ্রত হয়।

(২) শিক্ষার মানোন্নয়ন : কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে নিয়ে বিভিন্ন বিষয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা। যেখানে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের অংশগ্রহণ করবে এবং আধুনিক উন্নত প্রশিক্ষণ পদ্ধতিগুলির সঙ্গে তারা পরিচিত হবেন ও সেগুলো গ্রহণ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ঘটানাে।

(৩) অনুমান ভিত্তিক সমাধান : শিক্ষার্থীর বিভিন্ন সমস্যা থেকে শিক্ষক একটিকে বেছে নেবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার সাপেক্ষে সমস্যাটির সমাধান সম্পর্কে একটি অনুমান গঠন করবেন। এই অনুমানের ভিত্তিতে তারা সমস্যাটির সমাধানে অগ্রসর হরে।

(৪) কর্মপরিষদ গঠন : কর্মশালা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষাদান করার ব্যবস্থা করা। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর আত্ম সক্রিয়তার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে শিক্ষার্থীদের দ্বারা একটি সমস্যা নির্ধারণ করা হয়। এরপর সমগ্র পরিকল্পনাকে কার্যকরী করার জন্য একটি কর্মপরিষদ গঠন করা হয়। মূল সমস্যাটিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে এবং শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দলে ভাগ করে প্রত্যেক দলকে এক-একটি সমস্যা নিয়ে আলােচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সবশেষে প্রতিটি দলের প্রতিবেদন পাঠ করে আলােচনার পরে সামগ্রিক বিষয়ে চূড়ান্ত রিপাের্ট তৈরি করা হয়।

(৫) বাড়ীতে দেওয়া কাজ : শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে দেওয়া দৈনিক বাড়ির কাজের উপর গুরুত্ব আরোপ করে।

(৬) মূল্যবােধ সৃষ্টি : বিদ্যালয় শিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে এমন হবে যাতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। কর্ম প্রবণতা বিকশিত হয়।

(৭) শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার করবে।

(৮) গ্রন্থাগারের পরামর্শ : প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার অবশ্যই থাকবে এবং সেখানে উপযুক্ত গ্রন্থাগারিক রাখার কথা বলা হয়।

নির্দেশনা ও পরামর্শদান সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ

(১) চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা : বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা ও বিকাশ অনুযায়ী আত্মবিশ্বাস, স্বাধীনতা ও সক্রিয়তা চাহিদা পূরণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দান করেছে।

(২) সৃজনশীল কাজের পরামর্শদান : শিক্ষার্থীদের মধ্যে যৌন কৌতুহল পরিতৃপ্তির জন্য বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কাজে যুক্ত করার পরামর্শ দান করেছে।

(৩) নৈশবিদ্যালয় : বিদ্যালয় ছোট শিশুদের জন্য কমিশন নৈশ বিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে ১৪ বছরের শিক্ষা সমাপ্তির জন্য কমিশন বিশেষ নির্দেশ দান করেছে।

(৪) অগ্রগতির মূল্যায়ন : শিক্ষার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ এবং সর্বাঙ্গীণ বিকাশ, অগ্রগতির জন্য বিদ্যালয়ে সারা বছর শিক্ষার্থীর অগ্রগতির মূল্যায়নের পরামর্শদান করে।

(৫) কমিশনের নির্দেশ দান : মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুমোদন, শিক্ষকদের যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য কমিশন পর্ষদকে নির্দেশদান করে।

(৬) নির্দেশনার দায়িত্ব : শিক্ষা অধিকর্তাকে মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে নির্দেশনা দানের দায়িত্ব প্রদান করে।

(৭) শিক্ষক-শিক্ষণ : শিক্ষক-শিক্ষণের পৃথক সংস্থা রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে শিক্ষক-শিক্ষার মান উন্নয়নে সাহায্য করবে।

(৮) বোর্ড গঠন : বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য কমিশনের পরামর্শ ছিল, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে বোর্ড গঠন করা হবে। সেখানকার সদস্যরা অভিজ্ঞ ও প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বিদ্যালয়গুলিতে পরিদর্শনে যাবেন।

(৯) প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন : শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন ও উপযুক্ত শিক্ষাদান করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

(১০) আবাসিক বিদ্যালয় : গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করার নির্দেশনা দান করেছে।

(১১) গাইডেন্স অফিসার নিয়োগ : প্রত্যেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইডেন্স অফিসার এবং কেরিয়ার মাস্টার নিয়ােগের ব্যবস্থা থাকবে অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় অবস্থানরত বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে শিক্ষকদের।

মুদালিয়র কমিশনের প্রস্তাবিত মাধ্যমিক স্তরের ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে যা জানো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করো।


মুদালিয়র কমিশন প্রস্তাবিত বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধক বিদ্যালয় সম্পর্কে উদ্দেশ্যগুলি ব্যক্ত করাে। এই ধরনের ব্যবস্থা পরবর্তীকালে সফল হয়নি কেন?


মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন রূপ এবং সর্বার্থসাধক উচ্চ বিদ্যালয় প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত সংক্ষেপে লেখাে।