ভারতবর্ষের সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা লেখো।

কোন দেশের শিক্ষাদীক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি দেশের উন্নতিতে তুলে ধরে। শিক্ষা তাই জাতির মেরুদণ্ড। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা যা মানুষের ন্যূনতম যোগ্যতা প্রকাশ করে তা থাকা আবশ্যিক। প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে আধুনিক শিক্ষাবিদগণের মত, এটি হল বিদ্যালয় শিক্ষাস্তরের সেই স্তর, যেখানে প্রতিটি শিশু বিদ্যালয়ে আবশ্যিকভাবে উপস্থিত থাকে।

২০০০ খ্রিস্টাব্দ সেনেগালের রাজধানী ঢাকা শহরে আয়োজিত World Education Forum আন্তর্জাতিক কর্মসূচির দ্বারা সর্বজনীনভাবে শিক্ষার বিস্তার পরিকল্পনা করে।

ভারতীয় সংবিধান : স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচয়িতাগণ। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ৪৫ নং ধারায় উল্লেখ করেন সংবিধান কার্যকর হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে ১০-১৪ বছরের সমস্ত ছেলে মেয়েদের অবৈতনিক ভাবে বাধ্যতামূলক শিক্ষা দেওয়ার কথা। (কোন শিক্ষার্থীর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্পূর্ণ শিক্ষাকে বলা হয় প্রারম্ভিক শিক্ষা)।

ভারতবর্ষের সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

(১) প্রক্ষোভিক বিকাশ: শিশু তথা ব্যক্তির মধ্যে প্রক্ষোভ মূলক বিকাশ ঘটায় শিক্ষা।

(২) সর্বজনীন বিকাশ : দৈহিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক প্রভৃতির সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।

(৩) মৌলিক অধিকার : প্রাথমিক শিক্ষা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার অনুযায়ী দেশের প্রতিটি নাগরিক ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।

(৪) দারিদ্র্য দূরীকরণ : প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষালাভ, কাজের সুযোগ, যা দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তা করবে।

(৫) চিন্তাশক্তির বিকাশ : প্রাথমিক শিক্ষায় সাক্ষর ব্যক্তির চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে, যা তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। তারা যুক্তি দিয়ে বুঝতে শেখে।

(৬) হীনমন্যতা দূরীকরণ : নিরক্ষর ব্যক্তিদের মধ্যে একটি হীনম্মন্যতা বোধ কাজ করে। তারা শিক্ষিত মানুষের মধ্যে আলোচনায় অংশ নিতে কুষ্ঠিত বোধ করে। প্রাথমিক শিক্ষা মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

(৭) সচেতনতা বৃদ্ধি : শিক্ষা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বােধ বাড়ায়। তাদেরকে কেউ ঠকিয়ে নিতে পারে না। তারা লিখতে, পড়তে এবং দৈনন্দিন গাণিতিক হিসাবে সক্ষম হয় প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে।

বিশ্বের নিরক্ষর মানুষদের প্রায় অর্ধেক বাস করে ভারতবর্ষে, স্বাধীনতার পর শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। শিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রের পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহিংসতা বাড়বে। Universalization of Elementary Education-এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী 3R (Reading, Writing, Arithmetic) শেখে, যার ফলে সে সহজে পড়তে, লিখতে ও বলতে পারে। এইভাবে প্রত্যেক মানুষের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষাকে পৌছে দেওয়া যায়। এইসব কারণে প্রাথমিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।