সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি পদক্ষেপ আলোচনা করো | প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করার গৃহীত উদ্যোগগুলি কী কী?

সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভারত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এক বিশেষ প্রকল্পের সূচনা করে, সেটি হল জেলানুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা প্রকাশ DPEP District Primary Education Project

প্রতিটি জেলার জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলি হল

(১) অর্থ বরাদ্দ: সর্বশিক্ষা অভিযানের কর্মসূচি কে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সরকারি তরফ থেকে প্রতিটি প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে যথাক্রমে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ এবং ২.৫ লক্ষ পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।

(২) আইনগতভাবে : সংবিধানের ৪৫ নং ধারা অনুযায়ী ৬-১৪ বছর বয়সী সকল শিশুকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।

(৩) Village Education Committee : প্রতিটি গ্রামে Village Education Committee-র মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচিকে বাস্তবে রূপদান করা শুরু হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে নতুন বিদ্যালয় স্থাপন ও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।

(৪) সেতু পাঠক্রম : সরকারি ঘােষণা অনুযায়ী প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দুই বছরের মধ্যে পাঠক্রম সমাপ্ত করার উদ্দেশ্যে ও সরাসরি নবম শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য ‘সেতু পাঠক্রম’ বা ‘ব্রিজ কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

(৫) সকলের জন্য সমান সুযোগ : তপশিলি জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সমন্বিত শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

(৬) উপযুক্ত বিদ্যালয় কাঠামো : প্রয়োজনীয় কক্ষ নির্মাণ, মেরামত, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, প্রয়োজনীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে।

(৭) গ্রামাঞ্চলে বিদ্যালয় বৃদ্ধি : গ্রামাঞ্চলে আরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানাে হয়েছে।

(৮) মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় : মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে ও যেসব মেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষা নিতে পারেনি তাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

(৯) ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি : অপচয় ও অনুন্নয়ন রােধের জন্য প্রাথমিক এবং বার্ষিক পরীক্ষার বদলে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করার কথা বলা হয়েছে।

(১০) বিধি মুক্ত শিক্ষার প্রসার : আমাদের দেশে প্রচুর ছেলেমেয়ে সামাজিক, পারিবারিক বা আর্থিক কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতেই পারে না, তাদের জন্য সরকার বিধি মুক্ত শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে।

যে সকল শিশুরা কর্মরত, যে সকল মেয়েরা সামাজিক কোনে সমস্যা প্রভৃতি কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারে না, সমাজে আর্থিক অনটনে পিছিয়ে পড়া শিশু ইত্যাদি সকলের জন্য বিধি মুক্ত শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার জন্য মিড-ডে-মিলের (Midday Meal) ব্যবস্থা করা হয়েছে। পােশাক সরবরাহ, আঞ্চলিক চাহিদা অনুযায়ী পাঠক্রম তৈরি এবং অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ ছাড়া রয়েছে No Detention Policy (আটকে না রাখার নীতি)। অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড, শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা, পাঠক্রমের পুনর্নবীকরণ ইত্যাদি রয়েছে।