সাক্ষরতা কাকে বলে | এই প্রসঙ্গে জাতীয় সাক্ষরতা কর্মসূচির সূচনা, লক্ষ্য ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করাে।

সাক্ষরতা

আভিধানিক অর্থে সাক্ষরতা হল অক্ষর পরিচিতি, লেখা ও পড়ার ক্ষমতা। অর্থাৎ যদি কোনাে ব্যক্তি কোনাে বিষয় পড়ে, সেটা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে সাক্ষর বলে। UNESCO-র বিশেষজ্ঞ কমিটি সাক্ষরতার সংজ্ঞা দিয়েছে, A literate person is one who can, with understanding, both read and write a short simple statement on his or her everyday life. একজন ব্যক্তির পাঠের ক্ষমতা অক্ষর পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পাঠের বিষয়ের বোধগম্যতা ও লিখে নিজের মনের ভাবপ্রকাশের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


সাক্ষরতা শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়—ব্যবহারিক সাক্ষরতা এবং আনুষ্ঠানিক সাক্ষরতা। ব্যবহারিক সাক্ষরতা বলতে বোঝায় লেখা, পড়া এবং গণিতের সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা আনুষ্ঠানিক সাক্ষরতা হল স্কুল, কলেজে পড়ে যে শিক্ষা পাওয়া যায়।

জাতীয় সাক্ষরতা কর্মসুচির সূচনা


সারা ভারতে সাক্ষরতা প্রসারকল্পে ভারত সরকারের অধীনে, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক কর্তৃক নতুন দিল্লিতে, ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় সাক্ষরতা মিশন’ (National Literacy Mission)।

জাতীয় সাক্ষরতা কর্মসূচির লক্ষ্য


জাতীয় সাক্ষরতা মিশনের লক্ষ্য ছিল ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেশের ৩ কোটি এবং ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৫ কোটি নিরক্ষর মানুষের স্বাক্ষর করে তোলা। এগুলো ছাড়াও অন্যান্য উদ্দেশ্য গুলি হল—

  • প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা।
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা।
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক বোধ গড়ে তোলা।
  • সমাজ তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নে সাহায্য করা।
  • জাতীয় সংহতি ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা।
  • সৌন্দর্য বোধের বিকাশ ঘটানো।
  • পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা।
  • ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১৫-৩৫ বছর বয়সি ৩০ মিলিয়ন ব্যক্তি এবং ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আরও ৫০ মিলিয়ন মােট ৮০ মিলিয়ন ব্যক্তিকে কার্যকরীভাবে স্বাক্ষর করে তোলা।
  • গ্রামীণ নিরক্ষর বয়স্কদের ও মহিলাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
  • অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করা।

জাতীয় সাক্ষরতা কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা


জাতীয় সাক্ষরতা মিশনের উদ্দেশ্যকে সফল করতে যেসকল ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়। তা হল


(১) অংশগ্রহণ: বিভিন্ন স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। যেমন— ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, মহিলা, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসমূহ, শিল্প মালিক প্রভৃতির সকলের অংশগ্রহণ আবশ্যিক।


(২) যােগাযােগ স্থাপন: বিভিন্ন সংস্থা গুলোর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলা।


(৩) উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ: এই কর্মসূচিতে যুক্ত ব্যক্তিগণ দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়া দরকার, যারা সাক্ষরতার ধারাকে অব্যাহত রাখবে।


(৪) কর্মীদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব: বিভিন্ন স্তরে নিযুক্ত কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্মসূচি নির্দিষ্ট করে দেওয়া।


(৫) মহিলাদের অন্তর্ভুক্তিকরণ: এই কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা।


(৬) অনুকূল পরিবেশ: সাক্ষরতা কর্মসূচির জন্য অনুকূল পরিবেশ রচনা করা।


(৭) শিক্ষণ পদ্ধতি: শিক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য আনা, যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ সঞ্চার করা যায়।


(৮) শিক্ষাসহায়ক উপকরণ: আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবহার করতে হবে।


(৯) প্রবহমান শিক্ষার সুযােগ: নব্যসাক্ষরদের জন্য প্রবহমান শিক্ষার জনশিক্ষা নির্ণায়ক সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কেন্দ্র প্রস্তুত করতে হবে।


(১০) নমনীয়তা: গ্রামীণ সাক্ষরতা প্রকল্প, জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি, রাজ্য শিক্ষা কর্মসূচি গুলো আরও নমনীয় ও শক্তিশালী করতে হবে।


প্রবহমান শিক্ষাকে কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে কী কার্যক্রম স্থির করা হয়েছে বিবরণ দাও।


কার্যকরী বা ব্যাবহারিক সাক্ষরতার উদ্দেশ্য গুলি লেখাে। আধুনিক ভারতে ব্যাবহারিক সাক্ষরতার পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করো।


নিরক্ষরতাকে অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেন। নিরক্ষরতা দূরীকরণ বিষয়ে ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা কোঠারি কমিশনের সুপারিশ গুলি উল্লেখ করো।