ভাষা নীতি এবং ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ উল্লেখ করো।

কোঠারি কমিশন ভাষানীতি ও ভাষা শিক্ষার বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করেছে। কমিশন মনে করেছিল, আদর্শগত, সামাজিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় ক্ষেত্রে সম্প্রীতি ও সংহতি বজায় রাখার জন্য ভাষা হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই ভারতের জাতীয় শিক্ষা কাঠামোকে সুসংগঠিত করে তোলার জন্য নির্দিষ্ট ভাষানীতি গ্রহণ একান্ত প্রয়োজনীয়।

ভাষানীতি

কমিশন মনে করে, সামাজিক ও জাতীয় সংহতির জন্য সঠিক ভাষানীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(১) মাতৃভাষার দাবি : বিদ্যালয় শিক্ষা এমনকি কলেজ শিক্ষার ক্ষেত্রেও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার দাবিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আঞ্চলিক ভাষার উন্নয়ন করার জন্য ১০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য UGC (University Grants Commission) এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করতে হবে।

(২) গ্রন্থ রচনা: বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন বা UGC এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আঞ্চলিক ভাষার গ্রন্থ, সাহিত্য বিশেষ, বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থাবলি রচনায় সাহায্য করতে হবে।

(৩) ইংরেজি ভাষা শিক্ষা: সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে ইংরেজি মাধ্যম চালু রাখা এবং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার বিভিন্ন কাজে এই ভাষার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার কথা। কমিশন বলে। এ ছাড়া পঞম শ্রেণি থেকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা শুরু করতে হবে।

(৪) হিন্দি ভাষায় যােগাযােগ: হিন্দি রাষ্ট্রভাষা এবং অধিকাংশ জনগণের যােগাযােগের ভাষা হওয়ার কারণে এই ভাষা প্রচারের ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে সচেষ্ট হওয়ার কথা কমিশন জানায়। তা ছাড়াও হিন্দি ভাষাভাষী নয় এমন এলাকাগুলোতেও হিন্দি ভাষা প্রসারের চেষ্টা করতে হবে।

(৫) হিন্দি ব্যতীত অন্যান্য ভাষা: হিন্দি ব্যতীত অন্যান্য আধুনিক ভারতীয় ভাষার আন্তঃপ্রাদেশিক যােগাযােগ রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে আধুনিক ভারতীয় ভাষা শিক্ষা দিতে হবে। 

ভাষা শিক্ষা

কোঠারি কমিশন ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে ত্রিভাষা সূত্রের কথা বলেছেন। প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ভাষার ব্যাপারে যে সুপারিশ করেছে তা হল一

(১) প্রাথমিক শিক্ষা :
  • নিম্নপ্রাথমিকে (I-IV বা V): একটি মাত্র ভাষা। মাতৃভাষা বা আলেক ভাষা।
  • উচ্চ প্রাথমিকে: দুটি ভাষার সুপারিশ করেছে। যথা (a) মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা এবং (b) হিন্দি বা ইংরেজি ভাষা।

(২) মাধ্যমিক শিক্ষা :
  • মাধ্যমিক স্তরে: তিনটি ভাষা আবশ্যিক। যথা- (a) মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, (b) সরকারি বা সহযোগী ভাষা হিন্দি বা ইংরেজি। (c) এ ছাড়া আরও একটি প্রাচীন ভাষাকে ঐচ্ছিক হিসেবে নিতে হবে।
  • উচ্চমাধ্যমিক স্তরে: এখানে দুটি ভাষা পড়তে হবে। (a) মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা বা আধুনিক ভারতীয় ভাষা, (b) যে-কোনাে একটি আধুনিক বিদেশি ভাষা, এটি প্রাচীন ভারতীয় ভাষা। এই তিনটির মধ্যে দুটি ভাষা অগ্রাধিকার পাবে।

(৩) উচ্চশিক্ষা :
  • উচ্চশিক্ষা স্তরে: উচ্চমাধ্যমিক স্তরে দুটি ভাষা পড়তে হয়। যথা— (a) মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা এবং (b) ইংরেজি ভাষা।

ত্রিভাষা সূত্রের গুরুত্ব

কোঠারি কমিশন সামাজিক দিক ও জাতীয় সংহতি বজায় রাখার জন্য ভাষা নীতির ক্ষেত্রে মাতৃভাষার গুরুত্ব হয়েছে। যথা— 

(১) মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা: প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার সবকটি স্তরে মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এর সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষাকে গ্রহণ করা হয়েছে।

(২) ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব: পঞ্চম শ্রেণি থেকে ইংরেজি শিক্ষা শুরু হবে বলে কমিশন মনে করে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ও গবেষণামূলক কাজে ইংরেজির গুরুত্ব অপরিসীম। ইংরেজি আমাদের দেশে যোগ রক্ষাকারী ভাষা।

(৩) হিন্দির গুরুত্ব: আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিন্দি। তাই হিন্দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অ-হিন্দি ভাষা এলাকায় হিন্দি ভাষার প্রচার করতে হবে।

কমিশন কী উদ্দেশ্যে সাধারণ বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে? এই ধরনের বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? কেন কমিশন বিদ্যালয় গুচ্ছের স্থাপনের সুপারিশ করে?


উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে আলােচনা করাে। বর্তমান ভারতে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।


কোঠারি কমিশন বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে যে সূত্র বিন্যাস করেছে, সেগুলি আলােচনা করাে এবং শিক্ষার স্তর অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বয়সসীমা উল্লেখ করো।