শ্রেণিকক্ষে সমস্যামূলক আচরণ বা অন্যকে উৎপীড়নমূলক আচরণের কারণ, বদমেজাজের কারণগুলি লেখাে। এগুলির প্রতিকারের উপায়গুলি লেখাে।

কোন আচরণ যখন সমাজের নির্দিষ্ট মানদণ্ড মাপকাঠিতে অবাঞ্চিত বলে বিবেচিত হয় তখন এই জাতীয় আচরণকে বলে সমস্যামূলক আচরণ

শ্রেণিকক্ষে অন্যকে উৎপীড়নের কারণ

(১) অহংসত্তার জটিলতা: মনােসমীক্ষকদের মতে, যেসকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে অহংসত্তার জটিলতা (ego complex) দেখা যায়, তারা এই ধরনের আচরণ করে। অর্থাৎ নিজেরা অবহেলিত হওয়ার দরুন অন্যকেও তারা সহ্য করতে পারে না, বিরক্ত করে।

(২) পিতা-মাতার অবহেলা : বাড়িতে পিতা-মাতা ও অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা অবহেলিত হলে শিশুর অন্যদের উৎপীড়ন করার প্রবণতা বাড়ে।

(৩) শিক্ষকের অবহেলা : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের থেকে যেসকল শিক্ষার্থী অবহেলিত হয় খারাপ পারদর্শিতার জন্য, তারা বেশি করে অন্যদের বিরক্ত করতে থাকে।

(৪) নেতৃত্ব দান : শ্রেণিকক্ষে নেতৃত্ব করার বাসনা থাকে এই ধরনের আচরণের জন্ম হয়।

শ্রেণিকক্ষে অন্যকে উৎপীড়নের প্রতিকার

(১) শিশুর প্রতি বাবা-মায়ের গুরুত্ব : বাবা-মা যথেষ্ট স্নেহশীল, ধৈর্যশীল হবেন। সন্তানকে গুরুত্ব দেবেন। তার খােলার সঙ্গী হওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু কোনো ভুল করলে প্রাথমিকভাবে তাকে শাসনও করবেন।

(২) শিক্ষকের ভূমিকা : খারাপ পারদর্শিতার জন্য শিক্ষক ছাত্রদের কখেনই দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন না। শিক্ষকের উচিত শ্রেণিকক্ষে সব শিক্ষার্থীর প্রতি সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া। এতে তাদের খারাপ আচরণ করার প্রবণতা কমবে।

(৩) মনশ্চিকিৎসকের পরামর্শ : সমস্যার গুরুত্ব বুঝে মনশ্চিকিৎসকের সাহায্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বদমেজাজের কারণ

যারা খুব অল্পতেই রেগে যায়, তাদের বদমেজাজি বলে। বদমেজাজ হল ক্রোধের আক্রমণাত্মক বহিঃপ্রকাশ। শৈশবে বদমেজাজ স্বাভাবিক আচরণের মধ্যে পড়ে। কিন্তু পরবর্তীকালে এই আচরণ দেখা গেলে তা অবশ্যই সমস্যামূলক আচরণ।

(১) পিতা-মাতার অবহেলা : বদমেজাজের প্রধান কারণ হল পিতা-মাতার অবহেলা। মা-বাবার থেকে যথেষ্ট ভালােবাসা ও গুরুত্ব না পেলে শিশুরা বদমেজাজি হয়ে ওঠে। শিক্ষক-শিক্ষিকার থেকে অবহেলিত হলেও এরূপ ঘটে।

(২) নিজেকে প্রকাশ করতে না পারা : নিজের ক্ষমতাকে স্বাভাবিক উপায়ে প্রকাশ করতে না পারলে সে রেগে যায়।

(৩) স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ না থাকা : শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে তারা রেগে যায়।

(৪) তিরস্কার করা : শিশুকে কাজে উৎসাহ না দিয়ে প্রতিটি কাজে তিরস্কার করলে শিশু বদমেজাজি হয়ে ওঠে।

(৫) চাহিদা পূরণ না হলে : শিশুর আকাঙ্ক্ষা বা চাহিদা পূরণ না হলে শিশু মেজাজ হারিয়ে ফেলে।

(৬) আত্মপ্রকাশের সুযোগ : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী যদি আত্মপ্রকাশের সুযোগ না পায় তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ধরনের আচরণ পরিলক্ষিত হয়।

শ্রেণিকক্ষে বদমেজাজের প্রতিকার

(১) ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদান : শিশুর গৃহ পরিবেশ ও বিদ্যালয় পরিবেশ আনন্দদায়ক হওয়া প্রয়ােজন। বাবা-মা ও বিদ্যালয়ে শিক্ষকের আচরণ যেন ভালোবাসা ও সহানুভূতি পূর্ণ হয়।

(২) আত্মপ্রকাশের সুযোগ : শিক্ষার্থীকে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য। বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী তে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে। এইসব কার্যাবলিতে যুক্ত থাকলে শিশুর মেজাজ হারানাের সম্ভাবনা অনেক কম হবে।

(৩) স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ : কাজে বাধা না দিয়ে বরং তাকে স্বাধীনভাবে বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। এতে তার সৃষ্টি ক্ষমতা প্রকাশ পাবে। তেমনি মেজাজ দেখানোর সুযোগ পাবে না।

(৪) সামর্থ্য অনুযায়ী কাজের সুযোগ : অযথা তার উপর অতিরিক্ত  চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। বরং তার ক্ষমতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ দিলে শিক্ষার্থীদের কাজের পারদর্শিতা মান বাড়ে।

(৫) পরামর্শদানের ব্যবস্থা : কারণে-অকারণে শিক্ষার্থীর মেজাজ হারালে পরামর্শদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়ােজন।

(৬) মনশ্চিকিৎসার ব্যবস্থা : অনেক সময় দেখা যায় নিজের পারদর্শিতার অত্যন্ত খারাপ হওয়ার ফলে, যার পারদর্শিতার মানে ভালাে তার প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে বদমেজাজ দেখায়। এরকম হলে মনশ্চিকিত্সকের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।

এই সমস্ত আচরণগত সমস্যা সমাধানের জন্য পিতা-মাতাকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে। গোটা সমাজকে এই সমস্যা নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া সুষ্ঠু সমাধানের জন্য প্রয়ােজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে।