প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ শিক্ষার প্রয়ােজন কেন হয়।

প্রতিবন্ধকতার মাত্রা এবং ধরন (অন্ধ, কালা, বোবা, মানসিক প্রতিবন্ধী ধরণ) অনুযায়ী প্রতিবন্ধী শিশুদের অবশ্যই কিছু বিশেষ চাহিদা আছে। দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য আমাদের বিশেষ বিশেষ কিছু উপকরণগত চাহিদা থাকে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় এখনও প্রতিবন্ধী শিশুকে সহজে কেউ মেনে নেয় না। এমনকি নিজের পরিবারের থেকেও উপযুক্ত গুরুত্ব পায় না। ফলে তারা একদিকে যেমন নিরাপত্তার অভাব বোধ করে তেমনি অন্যদের সঙ্গে অভিযোজন। করলেও এদের সমস্যা হয়। তাই প্রয়োজন প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ শিক্ষার। এই বিশেষ শিক্ষার উল্লেখযোগ্য কারণ গুলি হল—

প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা

(১) শিক্ষার্থীর সামগ্রিক চাহিদা পূরণে সহায়তা: প্রতিবন্ধী শিশুদের অ স্বাভাবিক শিশুদের মতো শারীরিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক চাহিদা লক্ষ করা যায়। তার প্রতিবন্ধী শিশুদের এই সমস্ত চাহিদা নিরসনের জন্য বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন হয়।

(২) হীনমন্যতা দূরীকরণ ও আত্মবিশ্বাস জাগরণে সহায়তা : প্রতিবন্ধী শিশুরা তাদের প্রতিবন্ধকতার জন্য সবসময় হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে। তাই তাদের উপযুক্ত শিক্ষার দ্বারা আত্মবিশ্বাসী করে ভােলা প্রয়োজন। তাই তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন।

(৩) আত্মবিশ্বাস জাগানো : প্রতিবন্ধী শিশুরা যেহেতু অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুর মতো স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না, পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয় তাই তারা হীনমন্যতায় ভোগে। নিজেকে সংকুচিত করে রাখে। ফলে তারা যেটুকু কাজ করতে পারত সেটুকু করারও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই এদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হল আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা। 'সেও পারবে' এই বোধ জাগিয়ে তোলা।

(৪) বিশেষ ক্ষমতার ব্যবহারে সহায়তা : কোনাে একটি দিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিক ক্ষমতার পরিচয় পেলে ভবিষ্যৎ জীবনে রুজিরােজগারের জন্য যে বিশেষ দিকটির বিকাশের জন্য বিশেষ শিক্ষা প্রয়োজন।

(৫) দৈনন্দিন জীবন যাপনে সহায়তার : দৈনন্দিন জীবনের বিশেষ প্রয়োজনীয় কাজগুলোর জন্য যাতে অন্যের উপর নির্ভর করে না হয়, নিজের কাজ যাতে নিজেই করতে পারে সেই উপযােগী শিখন কৌশল শেখানাে এই শিক্ষার বিশেষ উদ্দেশ্য। খুব ছােটো থেকেই এই কৌশল শেখালে দৈনন্দিন জীবনে তারা প্রায় স্বাভাবিক মানুষের মতা কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে।

(৬) যথাযোগ্য মনোভাব গঠন করা : এই শিক্ষার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হল প্রতিবন্ধী শিশুদের যথাযোগ্য মনোভাব গঠনে সাহায্য করে। তারা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, চেষ্টা করলে তারা সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে পারে এই মনোভাব তৈরি করা। এই শিক্ষা শিশুকে উপযুক্ত মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

(৭) বৃত্তিমুখী প্রশিক্ষণ দান : এই শিক্ষা শিশুকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার শিক্ষা দান করবে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে মানসিকভাবে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে‌।

(৮) জ্ঞান অর্জনে সহায়তা : এই শিক্ষা শিশুদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করবে। এতে তাদের উন্নত চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটবে।

(৯) বিভিন্ন সালনমূলক দক্ষতার বিকাশ : প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধকতার ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন সঞ্চালনমূলক দক্ষতার বিকাশ ঘটানাে এই শিক্ষার বিশেষ উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রাক্ষোভিক বিকাশ, শারীরিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, ভাষার বিকাশ প্রভৃতি যাতে যথাযথভাবে ঘটে সে বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফলে সে তার প্রতিবন্ধকতাকে সহজেই জয় করতে সক্ষম হবে।

(১০) মানসিক চাহিদার পরিতৃপ্তি : প্রত্যেক শিশুর মধ্যে মানসিক চাহিদা আছে। প্রতিবন্ধী শিশু তার ব্যতিক্রম নয়। তাই সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষার দরকার।

(১১) প্রক্ষোভিক বিকাশ : দৈহিক ত্রুটির জন্য তারা স্বাভাবিক প্রাক্ষোভিক আচরণ করে। এই ধরনের শিশুরা ভীষণ আবেগতাড়িত হয়। তাদের আবেগ ও অনুভূতির সঠিক বিকাশের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন।

(১২) সঙ্গতিবিধানে সহায়তা : প্রতিবন্ধী শিশুরা যাতে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারে, পরিবেশের সবার সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করে চলতে পারে, সেই ধরনের কৌশল শেখানো শিক্ষার একটি প্রধান উদ্দেশ্য। 

উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন আছে। এদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করলে দেশ তথা সমাজ পিছিয়ে পড়বে। নানান সমস্যা দেখা দেবে। দেশের উন্নতি ব্যাহত হবে। তাই এদেরকে যত্নসহকারে আপন ভেবে শিক্ষার  প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের সংশোধিত খসড়া (জনার্দন রেড্ডি কমিটি) তুলনামূলক আলােচনা করাে।


প্রতিবন্ধী কাদের বলা হয়? প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রেণিবিন্যাস করো।


ভিন্ন সক্ষমতা সম্পন্ন শিশু কাদের বলে? এই ধরনের শিশু সম্পর্কে আধুনিক ব্যাখ্যা দাও।