আব্রাহাম মাসলো চাহিদার উর্ধ্বক্রম পিরামিড বিশ্লেষণ করো।

আত্মথার্থীকরণ তত্ত্বের জনক মনােবিজ্ঞানের অধ্যাপক আব্রাহাম ম্যাসলাে (Maslow)-এর মতে, মানুষ শুধু সমাজ বা পরিবেশের জন্য কাজ করে না নিজের চাহিদার জন্যও কাজ করে। তিনি বলেছেন, চাহিদা ও প্রেষণা পরস্পর তিনটি মূল কারণকে ভিত্তি করে সম্পর্কিত- (১) বেদনার পরিহার, (২) উত্তেজনাকে প্রশমন এবং (৩) সুখের চাহিদা। ম্যাসলাের মতে, একটি চাহিদার পরিতৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে অপর আর-একটি চাহিদার জন্ম হয়।

ম্যাসলাে চাহিদাগুলিকে প্রধান দু-ভাগে ভাগ করেন। যথা— (1) প্রাথমিক চাহিদা এবং (2) বৃদ্ধির চাহিদা বা আত্মযথার্থীকরণ।

(1) প্রাথমিক চাহিদা : নিরাপত্তা, ক্ষুধা, তৃয়া, শ্রদ্ধা, ভালােবাসা।

(2) বৃদ্ধির চাহিদা : মানুষ যখন নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে চায় তাকে বলে বৃদ্ধির চাহিদা বা আত্মযথার্থীকরণ।

ম্যাসলাের মতে, একটি চাহিদার পরিতৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে অপর আর-একটি চাহিদার জন্ম হয়।

ম্যাসলাে চাহিদা


মাসলো এর প্রেষণা তত্ত্বে ব্যক্তির সাত প্রকার চাহিদাকে পিরামিডের আকারে প্রকাশ করেছেন।

(১) শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বা অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা : পিরামিডের প্রথম স্তরে অর্থাৎ সর্বাপেক্ষা নীচের স্তরে রয়েছে শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বা অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা। বেঁচে থাকার জন্য এই চাহিদাগুলি একান্তভাবে প্রয়ােজনীয়। মজার বিষয় হল এই চাহিদাগুলি পূরণ না হলে পরবর্তী চাহিদাপূরণের জন্য প্রেষণা সৃষ্টি হয় না। এই কারণে শারীরবৃত্তীয় চাহিদাগুলিকে অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। শারীরবৃত্তীয় চাহিদাগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল— জল, আলাে, বাতাস, খাদ্য, আশ্রয়, নিদ্রা ইত্যাদি। উদাহরণ— শিশুর খিদে পেলে সে নানারকম আচরণ করতে থাকে। যা হল শারীরবৃত্তীয় চাহিদা। এগুলিকে নিম্নগামী কার্যও বলা হয়।

(২) নিরাপত্তার চাহিদা : নীচের দিক থেকে পিরামিডের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে নিরাপত্তার চাহিদা। মনােবিদ ম্যাসলাের মতে, অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদার মতাে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হল নিরাপত্তার চাহিদা। নিরাপত্তার চাহিদার আবার দুটি ভাগ আছে। যেমন— দৈহিক ও মানসিক। এই চাহিদার অন্তর্গত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল—সামাজিক সুরক্ষা, ভয় থেকে মুক্তি, উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি, অস্তিত্ব রক্ষা ইত্যাদি। উদাহরণ- শিশুদের নিরাপত্তা দেন পিতা-মাতা যাতে তাদের কোনাে ক্ষতি না হয়। বড়াে হলে মানুষ নিজের নিরাপত্তার জন্য টাকা ব্যাংকে জমায়, এল আই সি করে ইত্যাদি হল নিরাপত্তার চাহিদা।

(৩) যুথবদ্ধতা বা অন্তর্ভুক্তির চাহিদা : পিরামিডের তৃতীয় স্তরে রয়েছে অন্তর্ভুক্তির চাহিদা। অন্তর্ভুক্তির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির মধ্যে যেসকল প্রেষণা জাগ্রত হয়, সেগুলি তাকে সামাজিক আদর্শের নিরিখে কর্মসম্পাদনে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই চাহিদার অন্তর্গত বিষয়গুলি হল— ভালােবাসা, একাত্মতা ইত্যাদি। উদাহরণ- শিশুদের মধ্যে অভিভাবকেরা যুথবদ্ধতা জাগিয়ে তােলেন। এটি জাতীয়তাবােধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

(৪) আত্মশ্রদ্ধার চাহিদা : পিরামিডের চতুর্থ পর্যায়ে আছে আত্মশ্রদ্ধর চাহিদা। মনােবিদ ম্যাসলাের মতে, আত্মসচেতনতামূলক চাহিদার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আত্মশ্রদ্ধার চাহিদা। এই চাহিদা থেকে আত্মশ্রদ্ধার প্রেষণা জাগ্রত হয়। এই প্রেষণা জাগ্রত হলে ব্যক্তি আত্মসম্মান রক্ষার জন্য সচেষ্ট হন। আত্মশ্রদ্ধার প্রেষণা জীবনের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন হয়। কৈশােরকালে এই প্রেষণা সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মান, আত্মােপলব্ধি এগুলি ব্যক্তির নিজের বােধ। তবে শ্রদ্ধা, সম্মান, স্বীকৃতি, যশ হল অন্যের থেকে পাওয়া চাহিদা।

(৫) জ্ঞানমূলক চাহিদা : পরবর্তী পর্যায়ে অর্থাৎ পিরামিডের পঞ্চম স্তরে রয়েছে জ্ঞানমূলক চাহিদা। এই চাহিদা ব্যক্তির জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে এবং ব্যক্তিকে অনুসন্ধিৎসু করে তােলে। জ্ঞানমূলক চাহিদার অন্তর্গত বিষয় হল- বােধগম্যতা, অনুসন্ধান ইত্যাদি।

(৬) সৌন্দর্য সম্ভোগের চাহিদা : ষষ্ঠ পর্যায়ে রয়েছে সৌন্দর্য সম্ভোগের চাহিদা। এই ধরনের চাহিদা ব্যক্তিকে সত্য ও সুন্দরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়। এই চাহিদার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল— বিন্যাস, সংগঠন ইত্যাদি।

(৭) আত্মপ্রকাশের চাহিদা : পিরামিডের সর্বশেষ পর্যায়ে রয়েছে আত্মপ্রকাশের চাহিদা। মনােবিদ ম্যাসলাে (Maslow) বলেছেন, আত্মশ্রদ্ধার চাহিদা, জ্ঞানমূলক চাহিদা, সৌন্দর্য সম্ভোগের চাহিদা পূরণের পর ব্যক্তির মধ্যে যে চাহিদাটি পূরণ করার দরকার হয় তা হল আত্মপ্রকাশের চাহিদা। আত্মপ্রকাশের চাহিদা আত্মপ্রকাশের প্রেষণা সৃষ্টি করে। আত্মপ্রকাশ আলাদা কোনাে বিষয় নয়, অন্তর্নিহিত সুপ্ত সম্ভাবনার বহিঃপ্রকাশ হল আত্মপ্রকাশ।

উপরােক্ত স্তরগুলির মাধ্যমে ম্যাসলাে বিভিন্ন ধরনের চাহিদার উল্লেখ করেছেন। আত্মপ্রকাশের চাহিদা হল ম্যাসলাের চাহিদা তত্ত্বের চরমতম পর্যায়।

বিকলাঙ্গ শিশুদের শ্রেণিকক্ষের সমস্যাবলী সমাধানকল্পে শিক্ষক ও পিতা-মাতার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় বলে তুমি মনে করো।


শ্রেণিকক্ষের সমস্যা গুলোর তালিকা করো।


উদাহরণ-সহ শ্রেণিকক্ষে সাধারণ আচরণগত সমস্যা কাকে বলে লেখ। এই প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সাধারণ আচরণগত সমস্যার কারণগুলো উল্লেখ করো।