মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন রূপ এবং সর্বার্থসাধক উচ্চ বিদ্যালয় প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত সংক্ষেপে লেখা।

মুদালিয়র কমিশনের মতে, শিক্ষার্থীর চাহিদা, যোগ্যতা ও রুচি অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার পুনর্গঠন করে বর্তমান বিদ্যালয়গুলোর ছাড়া আরও কয়েক প্রকার মাধ্যমিক শিক্ষার বিদ্যালয় স্থাপন করা প্রয়োজন। যেমন -

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন রূপ

(১) মধ্য বিদ্যালয় বা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়: এরকম বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণি থাকবে, প্রাথমিক শিক্ষার পরে তিন বছরের জন্য শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ করবে।

(২) উচ্চবিদ্যালয় : সেই সময়ের দশম শ্রেণি বিশিষ্ট বিদ্যালয়গুলো এই বিভাগের অন্তর্গত।

(৩) উচ্চতর বিদ্যালয়ে রূপান্তর : এই বিদ্যালয়ের শিক্ষাকাল হবে চার বছরের। বর্তমানে মধ্যশিক্ষা বিদ্যালয়গুলিতে ধীরে ধীরে উচ্চতর বিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হবে। ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার এক বছর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং এক বছর যােগ হবে তিন বছরের ডিগ্রি কলেজের সঙ্গে।
 
(৪) কৃষি বিদ্যালয় : প্রত্যেক রাজ্যে গ্রামাণ্ডলে কৃষিবিদ্যালয় স্থাপনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাঠ্যবিষয়ের মধ্যে কৃষি ছাড়া উদ্যান নির্মাণ, পশুপালন এবং কুটিরশিল্প শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(৫) পাবলিক বিদ্যালয় : কমিশন বলে যে, বাস্তবের সঙ্গে সংগতি রেখেই পাবলিক স্কুল স্থাপন করতে হবে। বিদ্যালয়গুলিকে জাতীয় ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করতে হবে। সরকারি সাহায্য ও অনুদান কমিয়ে এনে বিদ্যালয়গুলোকে সাবলম্বী করতে হবে, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ ও সরকারি সাহায্য দানের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৬) বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় : যেসব অঞ্চলে সুযোগ পাওয়া যাবে, সেখানে বহুমুখী বা সর্বার্থসাধক উচ্চবিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। এইসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদা, রুচি, প্রবণতা, ক্ষমতা অনুযায়ী একাধিক পাঠ্যবিষয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

(৭) কারিগরি বিদ্যালয় : দেশে সার্থক শিল্পায়নের জন্য ব্যাপক সংখ্যায় কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করা প্রয়োজন। কারিগরি শিক্ষার সাহায্যে দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব। কারিগরি শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর জন্য শিল্পের সহযোগিতা বিশেষভাবে গ্রহণ করতে হবে।

(৮) শারীরিক ও মানসিক ত্রূটি সম্পন্ন ছেলেমেয়েদের জন্য বিদ্যালয় : শারীরিক ও মানসিক ত্রূটিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য বিভিন্ন রাজ্যে উপযুক্ত বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

(৯) আবাসিক বিদ্যালয় : যে-সমস্ত অভিভাবকের বদলির চাকরি করেন, তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য সময় দিতে পারেন না, সেই সব ছেলেমেয়েদের জন্য গ্রামাঞ্চলে আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

(১০) আবাসিক দিবা বিদ্যালয় : এই ধরনের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল আটটার মধ্যে উপস্থিত হবে এবং সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিদ্যালয় থাকবে। এখানে শিক্ষার্থীদের আহার এবং জলখাবারের ব্যবস্থা থাকবে। যে-সমস্ত অঞলে পিতা-মাতাকে কাজের জন্য সারাদিন বাইরে থাকতে হয় সেখানে এই ধরনের বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি।

(১১) বালিকা বিদ্যালয় : মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় এবং উপযুক্ত পাঠ্য বিষয় পড়ার বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়েদের জন্য গাহস্থ বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সংগীত প্রভৃতি বিষয়ের শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

(১২) আংশিক সময়ের বিদ্যালয় : ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা সম্পূর্ণ না করা শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে কমিশন। কাজের ফাকে ফাকে অবসর সময়ে শিক্ষামূলক চাহিদা পূরণের জন্য এই ধরনের বিদ্যালয় গঠনের সুপারিশ করে কমিশনের জন্য এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোনো বেতন প্রদানের প্রয়োজন হত না।

সর্বার্থসাধক উচ্চ বিদ্যালয় সম্পর্কে কমিশনের অভিমত

দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে বৃত্তি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন সর্বার্থসাধক বা বহুমুখী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেছে। এই ধরনের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ রুচি, চাহিদা, সামর্থ্য, প্রবণতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সুযােগ পায়। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক তৃপ্তি পায় এবং আমাদের মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। কারিগরি শিক্ষার উন্নতির জন্য একটি সর্বভারতীয় কারিগরি শিক্ষা পরিষদ (AICTE) গঠনের সুপারিশ করে কমিশন। এই ধরনের শিক্ষা শিক্ষার্থীদের যুক্তিবাদী করে তুলবে এবং ভবিষ্যৎ জীবনে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করবে বলে মনে করেছে কমিশন। শিক্ষার্থীদের চিন্তন শক্তি, বিচার ক্ষমতা, যুক্তিবোধের বিকাশ ঘটাতে এবং বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তিদান করতে এই ধরনের সর্বার্থসাধক বিদ্যালয় বা বহুমুখী বিদ্যালয় বা Multipurpose School-এর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

কমিশন উল্লেখ করে বর্তমানে প্রচলিত বিদ্যালয়গুলোকে চালু রেখে যতদিন না নতুন ধরনের বিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলিতে কমিশনের প্রস্তাবিত ভাবধারা ও মতামতগুলোকে চালু করতে হবে, পরে ধীরে ধীরে সমগ্র দেশে কমিশনের নির্ধারিত আদর্শ গুলো চালু করা হবে।

মুদালিয়র কমিশন শিক্ষক প্রসঙ্গে কী কী সুপারিশ করে? মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার সংগঠন ও পরিচালনা বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ গুলি সম্পর্কে লেখো।


মুদালিয়র কমিশনের প্রস্তাবিত মাধ্যমিক স্তরের ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে যা জানো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করো।


মুদালিয়র কমিশন প্রস্তাবিত বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধক বিদ্যালয় সম্পর্কে উদ্দেশ্যগুলি ব্যক্ত করাে। এই ধরনের ব্যবস্থা পরবর্তীকালে সফল হয়নি কেন?