সর্বশিক্ষা অভিযান কী | সর্বশিক্ষা অভিযানের কারণ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লেখাে।

সর্বশিক্ষা অভিযান

ভারতীয় সংবিধানের ৪৫ নং ধারায় বলা হয়েছে, ৬-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুর জন্য অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক, প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সংবিধানের এই ধারাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করার জন্য নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাকে সর্বজনীন করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে উন্নিকৃয়াণ বনাম অন্ধপ্রদেশ মামলার রায়ের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষার অধিকারকে জীবনের শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলে। এই রায়ের ভিত্তিতে ৬-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুর শিক্ষার অধিকারকে সুনিশ্চিত করার নির্দেশাবলী প্রকাশ করা হয়। এটি কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা বিষয়ে কতকগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে এই উদ্যোগ আরও প্রবল হয়। সংবিধানের ৪৩ তম ধারা সংশোধন করে, প্রাথমিক শিক্ষার- ভিত্তিতে সর্বশিক্ষা অভিযান শুরু হয়।


২০০১ খ্রিস্টাব্দে সর্বশিক্ষা অভিযান পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং ২০০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সংস্থাগুলির যৌথ উদ্যোগে পরিকল্পিত একটি প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষামুখী সমাজ গড়ে তুলতে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য, ১০ বছরের মধ্যে, অষ্টম শ্রেণি অবধি শিক্ষা দেওয়ার যে কর্মসূচি গ্রহণ করে তাই, 'সর্বশিক্ষা অভিযান' নামে খ্যাত।

সর্বশিক্ষা অভিযানের কারণ


(১) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষাকে কার্যকরী করা।


(২) সারা দেশব্যাপী উন্নতমানের মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।


(৩) সামাজিক ব্যবধান দূর করা।


(৪) এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।


(৫) সমগ্র রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষার উপর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা।


(৬) ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।

সর্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্য


সর্বশিক্ষা অভিযানের প্রধান লক্ষ্য হল ২০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিশুর প্রারম্ভিক শিক্ষা সমাপ্ত করা।

সর্বশিক্ষা অভিযানের উদ্দেশ্য


(১) ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিদ্যালয়ে ভরতি সুনিশ্চিত করা: ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৬-১৪ বছর বয়সি সকল শিশুর জন্য বিকল্প অথবা পরিপূরক বিদ্যালয় এবং পর্ষদ স্বীকৃত বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা।


(২) ৪ বছরের শিক্ষা সুনিশ্চিত করা: ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সকল শিশুর চার বছরের প্রাথমিক শিক্ষা (প্রথম-চতুর্থ শ্রেণি) সুনিশ্চিত করা।


(৩) ২০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে সম্পূর্ণ করা: ২০১০  খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সকল শিশু যাতে ৮ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা (প্রথম-অষ্টম শ্রেণি) সম্পূর্ণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।


(৪) বিদ্যালয়ে ধরে রাখা: ২০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৬-১৪ বছর বয়সের সকল শিক্ষার্থী, যারা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল, তাদের ধরে রাখার সুনিশ্চিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


(৫) বৈষম্য দূরীকরণ: ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য-সহ নানাবিধ সামাজিক ব্যবধান দূর করা।


(৬) জীবনের উপযােগী শিক্ষার ব্যবস্থা করা: প্রারম্ভিক ও প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষাকে জীবনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।


(৭) গুণগত মান বজায় রাখা: প্রারম্ভিক ও প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে অবশ্যই গুণগত মান বজায় রাখতে হবে।


(৮) কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো: যে সকল শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল তাদের একটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।


সর্বশিক্ষা অভিযানের কর্মসূচি সফল হলে ভারতের নিরক্ষরতার অভিশাপকে অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভবপর হবে।