শিক্ষাক্ষেত্রে দূরদর্শনের ও শিক্ষণযন্ত্রের ভূমিকা আলােচনা করাে।

শিক্ষাক্ষেত্রে দূরদর্শনের ভূমিকা

দূরদর্শন হল শিক্ষাপ্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। দূরদর্শন শিক্ষার্থীর দক্ষতা ও উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে প্রথম দূরদর্শনের উপর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ভারত সরকার ১৯৭২-৭৩ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাপ্রযুক্তির উপর প্রকল্প গ্রহণ করে NCERT ও CIET-র সঙ্গে যুক্ত করে। শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ের উপর CIET সফটওয়্যার প্রস্তুত করে, যা দূরদর্শনের নির্দিষ্ট চ্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দেখে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

বিদ্যালয়ের সম্প্রচার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, দূরশিক্ষণ, ভাষা শিক্ষা। দূরদর্শনের সাহায্যে পাঠদান ইত্যাদি বিভিন্নভাবে দূরদর্শনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নীচে দূরদর্শনের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হল-

(১) বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান : দূরদর্শন যেসব তথ্য শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপন করে তার দ্বারা সে বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান অর্জন করতে সমর্থ হয়। জ্ঞান অর্জনে তাকে গল্প বস্তুর সাহায্য নিতে হয় না, বিষয়বস্তু মূর্তভাবে উপস্থাপিত হওয়ার জন্য শিক্ষার্থী বাস্তব ধারণা গঠন করতে পারে।

(২) জনশিক্ষার সহায়ক : জনশিক্ষার ক্ষেত্রে দূরদর্শনের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযােগ্য। এই মাধ্যমের সাহায্যে খুব সহজেই জনগণকে সচেতন করা যায়। এই মাধ্যমের সাহায্যে জনগণকে বিভিন্ন রােগ, কৃষিকাজ, সাক্ষরতা ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করা যায়।

(৩) প্রেষণা সঞ্চার : দূরদর্শনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রেষণার সঞ্চার ঘটে। এই প্রেষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ভাবে পাঠ গ্রহণে উৎসাহিত হয়।

(৪) গভীর প্রভাব : শিক্ষার্থীদের উপর দূরদর্শনের প্রভাব খুব গভীর। এই মাধ্যমে বিনোদনমূলক শিল্প ধর্মী মূল্য একযােগে শিক্ষার্থীর মনের উপর স্থায়ীভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এই ধরনের স্থায়ী ও গভীর প্রভাবের ফলে শিক্ষার্থী বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করে।

(৫) মূর্ত অভিজ্ঞতা : দূরদর্শন যে-কোনাে বিষয়বস্তুকে সজীব এবং বাস্তব করে দর্শকের সামনে হাজির করতে পারে।

শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষণযন্ত্রের ভূমিকা

শিক্ষণ যন্ত্র স্বয়ং শিখনের একটি কৌশল। শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষণযন্ত্রের একটি মিথস্ক্রিয়া ঘটে, যা সময় এবং অর্থ উভয়েরই সাশ্রয় ঘটায়।

টিচিং মেশিন বা শিক্ষণযন্ত্রের কার্যকারিতা : অধ্যাপক সিডনি প্রেসি ও বি এফ স্কিনারের মতে -

(১) পরিকল্পিত প্রশ্ন কৌশলে মেশিন স্থাপন করা হয়।
(২) শিক্ষার্থীরা বােতাম টিপে উত্তর দেয়। 
(৩) শিক্ষার্থীদের উত্তরের সাপেক্ষে মেশিন ঠিক বা ভুল এই ফিডব্যাকটি জানান দেয় ব্যাখ্যা-সহ। 

টিচিং মেশিনের মৌলিক নীতিগুলি হল -

(১) টিচিং মেশিন শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তা বাড়ায়।
(২) বিষয়বস্তুকে যুক্তিযুক্তভাবে প্রায় ত্রুটিহীনভাবে বিন্যাস করা হয়।
(৩) বিদ্যুৎ-এর সাহায্যে বা হাতের সাহায্যে চালানাে যায় এই মেশিন। 
(৪) টিচিং মেশিনের সাহায্যে পাঠদান ব্যক্তিকেন্দ্রিক।

শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। তার ফলে তারা বিমূর্ত ধারণাটিকে অনুধাবন করতে সমর্থ হয় এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।

সুতরাং দূরদর্শন এমন একটি মাধ্যম যা শ্রবণ-দর্শন-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। বিষয়বস্তুর সামগ্রিক জ্ঞান লাভ করতে পারে। অন্যদিকে শিখন যন্ত্র শিক্ষার্থীর মনােযােগ আকর্ষণ করে বিষয়বস্তুকে আরও সাবলীল ও সহজ করে তােলে।