শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে শিক্ষকের ভূমিকা আলােচনা করাে।

বিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হল শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটিয়ে ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতি ঘটানো। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অনেক শিক্ষার্থী নানান ধরনের সমস্যামূলক আচরণ করে থাকে। শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যা সমাধানে শিক্ষকের ভূমিকা নিচে আলোচিত হল—

শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে শিক্ষকের ভূমিকা

(১) সুসম্পর্ক স্থাপন: বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের সুসম্পর্ক থাপন করতে হবে। তারপর তাদের সমস্যাগুলি জেনে সমাধানের পথ তৈরি করতে হবে।

(২) শিক্ষার্থীর সম্পর্কে দৃষ্টি রাখা : শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সমস্যাগুলি কী প্রকৃতির সে ব্যাপারে শিক্ষক সর্বদা দৃষ্টি রাখবেন।

(৩) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর ব্যবস্থা : তাত্ত্বিক শিক্ষা ছাড়াও খেলাধুলা, নাচ-গান, আবৃত্তি প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক দিকে উৎসাহ দিতে হবে। তার ফলে তাদের মন থেকে ভয় দূর হবে, বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

(৪) শিশুমনস্তত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা : শিক্ষকের শিশু মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। শৈশব ও বাল্য কালে কী ধরনের সমস্যা হয়, কেন হয়, সাধারণ উপায়ে এর প্রতিকার কীভাবে সম্ভব এগুলি সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত হওয়া প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষে কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করলে শিশুর মনােযােগ থাকে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, শিক্ষার্থী ও অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা স্বাভাবিক হওয়া প্রয়োজন, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত হবেন।

(৫) জীবনশৈলী (Lifestyle) শিক্ষা ব্যবস্থা : জীবনশৈলী শিক্ষা হল সেই শিক্ষা, যে শিক্ষা শিক্ষার্থীদের জীবনে পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করে চলতে ও উন্নত মনস্ক করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় এবং বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার উপযোগী শিক্ষা দেবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা যাতে গড়ে ওঠে, সে ব্যাপারে লক্ষ রাখবেন। শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন, যৌন শিখন ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করাবেন।

(৬) শিল্প ও সাহিত্য সৃষ্টি : শিল্প ও সাহিত্য সৃষ্টির দ্বারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাতে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে, শিক্ষকের সেদিকে বিশেষ উৎসাহ দেওয়া উচিৎ-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মানসিক চাপ হ্রাস পায়।

(৭) শিক্ষার্থীর গুরুত্ব প্রদান : শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে কাজ করার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। শিক্ষক এমন পরিবেশ তৈরি করবেন যেখানে শিক্ষার্থী নিঃসঙ্কোচে সব কথা শিক্ষককে বলতে পারেন।

(৮) শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি : শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির প্রতি আগ্রহ সারে সচেষ্ট হবেন।

(৯) নৈতিক শিক্ষা : শিক্ষার্থীর ভাল-মন্দের বোধ তৈরি হওয়া খুবই প্রয়োজন। ভালো-মন্দের বৌধ, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

(১০) শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা প্রদান : শিক্ষক মহাশয় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের তাদের মতামত প্রকাশে স্বাধীনতা দান করবেন।

(১১) শ্রেণিকক্ষে মানসিক সম্পর্ক : শিক্ষক মহাশয় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সঙ্গে মানবিক সম্পর্ক গঠন করবেন এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আলােচনা করবেন।

উপরে আলােচিত পদ্ধতি ছাড়াও রয়েছে আলােচনা পদ্ধতি, ফিল্ম ও স্লাইড শাে প্রভৃতির মাধ্যমে একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা একজন শিক্ষার্থীর পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন।