মুদালিয়র কমিশনের পাঠক্রম নির্ধারণের মূল নীতিগুলি আলোচনা করো।

মুদালিয়র কমিশনের পাঠক্রম নির্ধারণের মূল নীতিসমূহ

মুদালিয়র কমিশনের মতে, পাঠক্রম বলতে শুধুমাত্র গতানুগতিক পুথিগত শিক্ষা কে বোঝায় না। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, কর্মশালা এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তার সমন্বয় হল পাঠক্রম। কমিশনের মত অনুযায়ী, পাঠক্রম নির্ধারণের মূলনীতিগুলি হল—

(১) সক্রিয়তা নীতি : শিক্ষার্থীরা যাতে সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে হাতে কলমে কাজ করার সুযোগ পায় সেদিকে নজর রাখা মুদালিয়র কমিশন পাঠক্রম রচনার কাজে হাত দিয়েছিল।

(২) উদ্দেশ্য নীতি: মাধ্যমিক শিক্ষা পাঠক্রমের একটি সুপরিকল্পিত এবং সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল।

(৩) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র নীতি : পাঠক্রম রচনার সময় কমিশন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যর নীতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই নীতি মেনে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বিষয় নির্বাচনে সুযোগ পেত।

(৪) ব্যবহারিক নীতি : পাঠক্রমের বিষয়গুলো এমনভাবে নির্ধারিত ছিল যে, সেগুলি শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে এবং সমাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল।

(৫) বাস্তবমুখী নীতি : পাঠক্রম হবে বাস্তব জীবনকেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীর রুচি, আগ্রহ ও প্রবণতাকে গুরুত্ব দিয়ে তার চরিত্র গঠন ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে পাঠক্রম নির্বাচন করতে হবে।
 
(৬) চাহিদা নীতি : বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ চাহিদা, রুচি, পছন্দ, আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে পারত।

(৭) পরিবর্তনশীলতার নীতি : যেহেতু সমাজ পরিবর্তনশীল সে-কথা মাথায় রেখে পরিবর্তনশীল পাঠক্রম রচনা করা উচিত বলে মনে করেছে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন।

(৮) সহপাঠক্রমিক নীতি : বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই মুদালিয়র কমিশন নির্ধারিত মাধ্যমিক শিক্ষা পাঠক্রমে সহপাঠ ক্রমিক কার্যাবলী অন্তর্ভুক্ত ছিল।

(৯) গণতান্ত্রিক নীতি : শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে সে-কথা মাথায় রেখে পাঠক্রমের বিষয়বস্তু নির্বাচন ও সুষ্ঠু পরিচালনার প্রতি নজর দেওয়া হয়েছিল।

(১০) বৃত্তিমুখী নীতি : শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমুখী চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য এবং বাস্তব জীবনে জীবিকা নির্বাহের দক্ষতা অর্জনের জন্য মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমের বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার আয়োজন করেছিল।

(১১) অবসর যাপনের শিক্ষা : অবসরকালীন সময় সুন্দরভাবে অতিবাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা মাধ্যমিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

(১২) সৃজনশীলতার নীতি : মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সুপ্ত প্রতিভা, সৃজনাত্মক ক্ষমতার সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানাে। কমিশন পাঠক্রম রচনার সময় এ কথা মনে রেখেছিল।

(১৩) বৈচিত্র্যের নীতি : বহুমুখী ও বৈচিত্র্যময় পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে সাহায্য করে। তাই পাঠক্রম রচনার সময় সেদিকে নজর রাখা উচিত।

আলোচ্য নীতিগুলি মাধ্যমে পাঠক্রমের উৎকর্ষতা সাধন, শিক্ষার সংস্কার সাধনের কথা ভেবেছিল কমিশন।

মুদালিয়র কমিশন বর্ণিত সাধারণ শিক্ষার কাঠামো সংক্রান্ত সুপারিশগুলি আলােচনা করাে।


মুদালিয়র কমিশন কারিগরি শিক্ষা কাঠামো সম্পর্কে কী সুপারিশ করে? সহশিক্ষা সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি আলােচনা করাে।


প্রচলিত বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার (১৯৫০-এর পূর্বে) কাঠামোর সঙ্গে মুদালিয়র কমিশন প্রস্তাবিত বিদ্যালয় স্তরে শিক্ষার (১৯৫২-৫৩) কাঠামাের তুলনামূলক আলােচনা করো। সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার কাঠামাে ছাড়া কমিশন অন্যান্য বিদ্যালয় সম্পর্কে কী সুপারিশ করে?