কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে শিখনের গুরুত্ব লেখাে।

সুদূর অতীতে শিক্ষা বৌদ্ধিক বিকাশের শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু বর্তমানে সংগ্রামমুখর জীবনে তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে শ্রমভিত্তিক জ্ঞানের সংমিশ্রণ ঘটেছে এবং কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্ব

(১) কর্ম দক্ষতা অর্জন ও মানবসম্পদ সৃষ্টি: কর্মে দক্ষতা অর্জনের ফলে শ্ৰম ও সময়ের সঠিক ব্যবহার হয়। কাজের গুণগত ও পরিমাণগত মান বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সৃষ্টি হয় মানবসম্পদ। অপরপক্ষে মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ফলে জাতীয় উন্নয়ন ঘটে। উন্নত মানবসম্পদ-এর দ্বারা কর্ম সম্পাদনের ফলে সময়, অর্থ ও শ্রমের সাশ্রয় ঘটে।

(২) শ্রমের প্রতি মর্যাদাবৃদ্ধি : কর্মের জন্য শিখন শুধু দক্ষতা বৃদ্ধি করে না, মানুষের মনে শ্রমের প্রতি মর্যাদার সার ঘটায়। শ্রমের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।

(৩) দলগত মনােভাব সৃষ্টি এবং সামাজিক মূল্যবােধের বিকাশ : যৌথভাবে কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃষ্টি হয় সহযােগিতা ও সহমর্মিতার বােধ। এরই সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তাবােধ ও ঐক্যবােধেরও সঞ্চার ঘটে। ফলে সমাজ সচেতনতা গড়ে ওঠে শিক্ষার্থীর মধ্যে।

(৪) সৃজনশীলতার বিকাশ : প্রতিটি মানুষই নিজস্ব সৃজনশীলতা নিয়ে জন্মায়। কর্মসম্পাদন ও শিক্ষার মাধ্যমে সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশ ঘটে। 

(৫) উন্নত সমাজ তৈরি : কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষার দ্বারা উন্নত সমাজ তৈরি হয়।

(৬) সমাজসেবা : কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সমাজসেবামূলক কাজের প্রতি দায়িত্ববান করে গড়ে তােলে।

(৭) ব্যক্তিত্ব গঠন : সমাজচেতনা, দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মনিপুণতা ইত্যাদি সুব্যক্তিত্ব গড়ে তােলে।

(৮) মূল্যবোধ সৃষ্টি : কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধের বিকাশ ঘটায়। যেমন—সহযোগিতা, সহানুভূতি, শ্রদ্ধাবােধ, নৈতিকতাবােধ প্রভৃতির বিকাশ ঘটে।

ডেলর কমিশন মনে করে, উন্নত এবং উন্নয়নশীল সব দেশেই কর্মের জন্য শিক্ষা-এই নীতিশিক্ষার উদ্দেশ্য প্রয়ােগ করা আবশ্যক। এই সম্পর্কে হার্টশােন বলেছেন, বৃত্তি শিক্ষা হল এমন একটি ফলপ্রসূ শিক্ষা, যার অভাবে শিক্ষার্থীরা সারা জীবন দুঃখ ভোগ করে।