শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার বিভিন্ন অর্থ আলােচনা করাে।

শিক্ষাপ্রযুক্তি বিদ্যার বিভিন্ন অর্থ

শিক্ষাপ্রযুক্তির দুটি দিক আছে শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিখন উন্নয়নের জন্য শিক্ষার প্রযুক্তিয়ান করা। বর্তমানে এই দুটি দিক সমন্বিত হয়ে শিক্ষা প্রযুক্তি নিজেই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত, যার পরিধি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা।

পাঁচটি M-এর সমন্বয়: শিক্ষাপ্রযুক্তি হল এমন এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে পাঁচটি 'M' (Machine, Materials, Media, Mass and Method)-এর সমন্বয়ে শিক্ষার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যপূরণে একত্রে কাজ করে। এ ছাড়া শিক্ষা প্রযুক্তি হল অধ্যয়নের একটি বিষয়, যার লক্ষ্য হল প্রযুক্তিবিদ্যা, তথ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, আচরণের বিজ্ঞান এবং মানব প্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষায় উৎকর্ষতা নিয়ে আসা।

শিক্ষা প্রযুক্তি অধ্যয়নের বিষয় : শিক্ষা প্রযুক্তি হল অধ্যয়নের একটি বিষয়, যার লক্ষ্য হল প্রযুক্তিবিদ্যা, তথ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, আচরণের বিজ্ঞান, মানব প্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষায় উৎকর্ষতা নিয়ে আসা।

ব্যপক অর্থে শিক্ষা প্রযুক্তি বিদ্যার প্রাথমিক ধারণা ছাড়া আরও তিনটি অর্থ পাওয়া যায়, তা হল —

(১) শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞান (১) (ET) (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে পাঠদান) : প্রথম ধারণাকে বলা হয় শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা-১ (ET)। এটি ভৌত বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি বিজ্ঞানের প্রয়োগকে বােঝায়। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ও শিখন পদ্ধতির সাহায্যে নির্দেশদান বা শিক্ষণ সম্ভব হয়। এগুলিকে হার্ডওয়্যার পদ্ধতি বলা হয়।

জেমস ও ফিন (১৯৬০)-এর শ্রবণ-দর্শন সহায়ক শিক্ষা উপকরণ এবং ইলেকট্রনিক যােগাযােগ শিল্পের অগ্রগতির সময় এই দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে। এই অর্থে ET, হল নির্দেশদান বস্তু সামগ্রী উপস্থাপন করার সহায়ক যন্ত্রপাতি যেমন—স্থির ও গতিশীল চিত্র, Projector (নীরব ও সরব), টেপরেকর্ডার, দূরদর্শন, শিক্ষণ মেশিন ও কম্পিউটারভিত্তিক শিক্ষণ ইত্যাদি।

(২) শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞান-২ (ET,) (পাঠদানে বিজ্ঞানভিত্তিক নীতি প্রয়ােগ) : এই ধারণায় বৈজ্ঞানিক নীতিগুলিকে নির্দেশদানের কাজে প্রয়ােগ করাকে বােঝায়। শিক্ষক প্রথমে বিষয়বস্তুকে আচরণগত উদ্দেশ্য অনুযায়ী তালিকাবদ্ধ করে। বাহ্যিক আচরণধারা কীভাবে পরিমাপযােগ্য হবে তা ঠিক করে নেন। সঠিক উত্তরদানে শক্তিদায়ক উদ্দীপক ও ফিডব্যাক সরবরাহ করেন। এগুলিকে সফটওয়্যার দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয়। মনােবিদ স্কিনার, গ্যাগনে এই ধারণার সমর্থক।

(৩) শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞান-৩ (ET,) (শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ যন্ত্র) : ডেভিস ও হার্টলি (১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে) এই ধারণার প্রবর্তক। এই ধারণায় ET, ও ET, এর সমন্বয় করে সিস্টেম দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে শিখন ও নির্দেশদান কাজে প্রয়ােগ করা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অর্থ হল শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি সিস্টেমের পরিকল্পনা করা। এখানে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ তন্ত্র(System) হিসেবে বিবেচিত হয় যার ৫টি অংশ হল যন্ত্র, উপকরণ, মাধ্যম, মানুষ ও পদ্ধতি। এগুলির যথাযথ প্রয়োগ করা ও তার মূল্যায়ন। এ ছাড়া বর্তমানে আরও দুটি ধারণা ব্যবহৃত হচ্ছে।

(৪) শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞান-৪ (ET) : শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞান-৪ (ET) বলতে শিক্ষা পরিকল্পনা করাকে বােঝায়। কোর্স, সম্পদকেন্দ্র, পাঠক্রম নির্মাণ ইত্যাদি কাজগুলি এই ধারণার অন্তর্ভুক্ত।

(৫) শিক্ষা প্রযুক্তি বিজ্ঞান-৫ (ET.) : এই ধারণায় অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে, খরচ সাশ্রয় করে শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখাকে বােঝায়। এর ফলে মুক্ত শিক্ষা, দূরাগত শিক্ষা, পত্রযােগে শিক্ষা ইত্যাদির গুরুত্ব বাড়ছে।