মূক ও বধির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের যে-কোন চারটি পদ্ধতি আলােচনা করাে | শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষণ পদ্ধতি আলােচনা করো।

মূক ও বধির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি

যেসমস্ত শিক্ষার্থী কানে খাটো বা অল্পমাত্রায় বধির তাদের জন্য যে-সমস্ত স্কুলে সমন্বয়ী শিক্ষার সুযোগ আছে সেখানে পড়তে পারে। তবে এদের শিক্ষাদানের জন্য কতকগুলি কর্মসূচির ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেমন— 
  • (১) শ্রবণ সহায়ক উপকরণের ব্যবহার শেখানো, 
  • (২) শ্রবণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, 
  • (৩) বাচনিক ত্রুটি সংশোধনের ব্যবস্থা (Speech Correction) ইত্যাদি।

যে-সমস্ত শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ বধির ও বোবা তাদের শিক্ষাদানের  জন্য কতকগুলি পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয়—

(১) কম্পন ও স্পর্শানুভূতি পদ্ধতি : ক্যাটি অ্যালকেন ও সোফিয়া অ্যালকন প্রথম স্পর্শানুভূতি সাহায্যে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করুন। সম্পূর্ণ বধির ও বোবা শিশুদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শিশু শিক্ষকের মুখের সামনে অথবা গলায় হাত দিয়ে স্পর্শ করে থাকে এবং এর ফলে যে কম্পনের সৃষ্টি হয়, তার মাধ্যমে শব্দ চিনতে পারে। এই পদ্ধতি বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যেমন- ‘b' এবং ‘p’ শব্দদুটির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে খুব অসুবিধা হয়। বারবার স্পর্শ করার পর কম্পনের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে।

(২) ওষ্ঠ পঠন: এই পদ্ধতিতে বক্তার ঠোট এবং মুখাবয়বের নড়াচড়া দেখে বক্তব্য অনুধাবন করতে হয়। এই পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন জয়ন পাবলো বুনেট (Juan Pablo Bonet)। যে শিক্ষার্থী ওষ্ঠ পঠন ক্ষমতা ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারে সে যে গতিতে কোন বিষয় মনে মনে পড়তে পারে, প্রায় একই গতিতে সে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় প্রকাশ করতে পারে। কিছু ওষ্ঠবর্ণ আছে যেমন— প, ফ, ব, য ইত্যাদি। বর্ণগুলি সরাসরি ওষ্ঠের উপর নির্ভর করে উচ্চারণ হয়। ফলে এই বর্ণগুলি সে সহজেই আত্মস্থ করতে পারে। আবার ক, খ, গ ইত্যাদি বর্ণমালা উচ্চারণের সময় সরাসরি ওষ্ঠের উপর নির্ভর করে না , সেগুলো বুঝতে পারা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

(৩) ইঙ্গিত প্রক্রিয়া বিভিন্ন অঙ্গের ঈশারার মাধ্যমে বর্ণ শেখা: স্পর্শ এবং দর্শন ইন্দ্রিয় ছাড়াও বিভিন্ন লিঙ্গের ইশারার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বর্ণ শেখে। এক্ষেত্রে মুখের নড়াচড়া, জিহ্বা, ওষ্ঠ প্রভৃতির চলন এবং সঞ্চালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী বর্ণ, শব্দ, বানান করতে শেখে। আমেরিকার ইঙ্গিত ভাষা পদ্ধতি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।

(৪) আঙুলর দ্বারা বানান শেখা পদ্ধতি: এই পদ্ধতির অপর নাম সালনমূলক পদ্ধতি। এই পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন পেরিয়ার। আঙুল সঞ্চালনের মাধ্যমে মূক ও বধির শিশুদের অক্ষর, শব্দ, বাক্য ও বানান। লেখা শেখানো হয়। ভারতে এই পদ্ধতি কর পল্লবী’ নামে পরিচিত।

(৫) দর্শনভিত্তিক উপকরণের মাধ্যমে: মূক ও বধির শিক্ষার্থীদের জন্য দর্শন ইন্দ্রিয়কে ভাষা শেখানাের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতীক ব্যবহার করা হয়। শিক্ষক প্রতীকের ব্যবহার তাদের শিখিয়ে দেবেন। তারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষকের মুখের ভঙ্গিমা অনুকরণ করে শব্দ উচ্চারণ করার চেষ্টা করবে। সাধারণত একটু বেশি বয়সে এই পদ্ধতি শেখানো হয়।

সবশেষে বলা যায়, উপরোক্ত পদ্ধতিগুলি সঠিকভাবে কার্যকর করতে গেলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধৈর্যশীল শিক্ষকের প্রয়োজন। তবে বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এদের শিক্ষাদানের জন্য চেষ্টা চলছে।