দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ভারত সরকারের পদক্ষেপ আলােচনা করাে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ভারত সরকারের পদক্ষেপ

ভারতে দৃষ্টিহীন শিশুদের জন্য নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা শুরু হয় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে। এই শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যেসকল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা হল

(১) কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ : ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে গঠিত কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ (Central Advisory Board of Education), CABE দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ভারতের দেরাদুনে অন্ধ সৈনিকদের জন্য ইংল্যান্ডের সেন্ট ডানস্টানের শাখা হিসেবে হোস্টেল স্থাপিত হয়েছে। এখানে বৃত্তি শিক্ষা দেওয়া হয় অন্ধ প্রাক্তন কর্মরত সৈনিকদের, তাদের যুদ্ধের কারণে অন্ধত্বের আঘাত থেকে বার করে পরিবেশে নিজেদেরকে পুনরায় উপস্থিত করার প্রেষণা দেওয়া হয়।

(২) বৃত্তিদানের ব্যবস্থা: দৃষ্টিহীন ছেলে মেয়েদের শিক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বৃত্তিদানের নীতি গ্রহণ করেছে।

(৩) সরকারি অনুদান: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার জন্য যে অর্থ ব্যয় করবে তার ৭৫% অর্থ সরকারি অনুদান হিসেবে মঞ্জুর করার নীতি গৃহীত হয়েছে।

(৪) সমন্বয়ী শিক্ষা: সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ বিদ্যালয়ে যাতে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে আংশিক দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ পায়, তার জন্য সমন্বয়ী শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেজন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

(৫) ভারতী ব্রেইল তৈরি: আমাদের দেশের দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য ভারত সরকারের বিভিন্ন ভাষায় ভারতীয় ব্রেইল’ তৈরির ব্যবস্থা করেছে। এজন্য বিশেষ গবেষণা সংস্থার সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

(৬) দৃষ্টিহীনদের জন্য জাতীয় সংস্থা স্থাপন: ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে দৃষ্টিহীনদের জন্য স্থাপিত হয়েছে ‘National Association for the Blind' I

(৭) Model School স্থাপন: ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি model school  স্থাপন করেছে।

(৮) গ্রন্থাগার স্থাপন: অন্ধদের জন্য জাতীয় গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ও ব্রেইল সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এখান থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ব্রেইল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়।

(৯) শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন: দৃষ্টিহীনদের শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষক-শিক্ষণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এরকম ৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হল দিল্লি, মুম্বাই এবং পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুর।

(১০) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দৃষ্টিহীনদের কর্মে নিয়োগের ব্যবস্থা: প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে ২% সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কর্মী নিয়োগের জন্য  পৃথক নিয়ােগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

(১১) পশ্চিমবঙ্গে দৃষ্টিহীনদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন: অন্যান্য রাজ্যের মতাে পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল— কলকাতার বেহালায় Life Home for the Blind, নরেন্দ্রপুর, সিউড়ি বিদ্যালয় আছে।

(১২) National Centre for the Blind প্রতিষ্ঠা: ভারত সরকারের National Centre for the Blind এখানে ব্রেইলের যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। উপযুক্ত কর্মশালার ব্যবস্থা আছে এবং দৃষ্টিহীনদের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

(১৩) প্রতিবন্ধী দিবস পালন : আমাদের দেশে প্রতি বছর ১৫ মার্চ দিনটিকে প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।