ভারতবর্ষে সাক্ষরতা প্রসারের পথে বাধা বা সমস্যাগুলি আলােচনা করাে।

গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষ জনগণের সাফল্যের উপর নির্ভরশীল। তাই জনগণের সামাজিক, অর্থনৈতিক সব দিক থেকে সুযোগ্য নাগরিক হতে হবে। দেশের নাগরিক যত বেশি স্বাক্ষর হবে তত এই সাফল্য বৃদ্ধি পাবে। ভারতের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনগণের সুস্পষ্ট মতামত, চিন্তাভাবনার উপর নির্ভরশীল। জনগণ শাসক নির্বাচন করে, তাই একজন শিক্ষিত জনগণ উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচনের অভিমত প্রকাশ করতে পারে। তাই সাক্ষরতার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এতৎসত্ত্বেও ভারতবর্ষে সাক্ষরতা প্রসারের পথে বাধা বা সমস্যা দেখা যায়।

ভারতবর্ষে স্বাক্ষরতা প্রসারের পথে সমস্যাবলি

(১) দ্রুত জনসংখ্যাবৃদ্ধি: ভারতে প্রতি বছর যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই অনুপাতে সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।

(২) দরিদ্রতা : ভারতের জনসংখ্যার একটা অংশ এখনও দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে, যার কারণে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারে না। দরিদ্রতা স্বাক্ষরতা প্রসারের পথে একটি বড় বাধা।

(৩) অপচয় ও অনুন্নয়ন : বিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়ার পর বিদ্যালয় ছেড়ে দেয়, আবার কেউ কেউ বারবার একই শ্রেণিতে অনুত্তীর্ণ হয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করে।

(৪) শিক্ষকের অভাব : সাক্ষরতা কর্মসূচি সফল করতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রয়োজন।

(৫) সঠিক পরিকল্পনার অভাব : সাক্ষরতা প্রসারে কর্মসূচি গুলি সঠিকভাবে বা পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন হয় না।

(৬) শিশুশ্রম আইন প্রয়ােগের অভাব : আমাদের দেশে শিশুশ্রম আইন আছে কিন্তু তার বাস্তব প্রয়োগ নেই। সে কারণে দরিদ্র ঘরের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে না দিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে পাঠানো হয়।

(৭) অর্থনৈতিক সমস্যা : সরকারের আর্থিক দুরবস্থা সাক্ষরতা প্রসারের পথে বড় বাধা। সাক্ষরতা প্রসারে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়ােজন তার ও ঘাটতি রয়েছে যথেষ্ট।

(৮) সচেতনতার অভাব : নিরক্ষরতার কারণে সাক্ষরতা সম্পর্কে আমাদের দেশের একটা বড় অংশের মানুষের মধ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব, যা সাক্ষরতার পথে একটা অন্তরায়।

(৯) সামাজিক কুসংস্কার : সমাজে সবচেয়ে বড় বাধা কুসংস্কার। সামাজিক সংস্কার, কুপ্রথা সকল বিষয়গুলো থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে, তার জন্য বড়াে অস্ত্র সাক্ষরতা।

(১০) শিক্ষা উপকরণের অভাব : শিক্ষার প্রসার কে সফল করতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণের সরকারি উদ্যোগ, গ্রন্থাগার ও আর্থিক সাহায্যের অভাব রয়েছে।

(১১) শিশু শ্রম আইন প্রয়োগে সমস্যা : আমাদের দেশে শিশু শ্রম আইন সঠিকভাবে বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়নি। ফলে অভিভাবকগণ তাদের সন্তানের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে কোনো পেশাগত কাজে নিয়োগ করতে ভয় পান না।

(১২) অভিভাবকদের উদাসীনতা : অভিভাবকদের উদাসীনতা, ভারতে সাক্ষরতা প্রসারের পথে একটি বড় সমস্যা। শিক্ষার উপযোগিতা বা গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক অভিভাবকগণ এখনও সচেতন নন, বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তারা উদাসীন মনোভাব পোষণ করেন।

(১৩) কর্মসূচির বাস্তবায়নের সমস্যা : সাক্ষরতা প্রসারের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও সেগুলি বাস্তবায়নের সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ফলে কর্মসূচি গুলো সম্পূর্ণ সাফল্য লাভ করতে পারেনি।

উপরোক্ত বিভিন্ন সমস্যা গুলোর কারণে সাক্ষরতার মাপকাঠিতে ভারত আজও পিছিয়ে আছে। উপরোক্ত সমস্যা গুলো দূর করা গেলে সাক্ষরতার হার দ্রুত গতিতে বাড়বে বলে আশা করা যায়।

নিরক্ষরতাকে অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেন। নিরক্ষরতা দূরীকরণ বিষয়ে ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা কোঠারি কমিশনের সুপারিশ গুলি উল্লেখ করো।


সাক্ষরতা কাকে বলে? এই প্রসঙ্গে জাতীয় সাক্ষরতা কর্মসূচির সূচনা, লক্ষ্য ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করাে।


ভারতবর্ষে কেন সাক্ষরতা প্রয়ােজন?