নিরক্ষরতাকে অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেন । নিরক্ষরতা দূরীকরণ বিষয়ে ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা কোঠারি কমিশনের সুপারিশ গুলি উল্লেখ করো।

দেশ তথা রাষ্ট্রের উন্নয়ন নির্ভর করে জনগণের বিচার বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও দক্ষতার উপর। দেশের জনগণ শিক্ষিত না হলে বিচার বিশ্লেষণ ক্ষমতা গড়ে ওঠে না। কথায় আছে নিরক্ষর মানুষ মৃত মানুষের সমান। সমাজ কিংবা দেশের কোন খারাপ পরিস্থিতিতে নিরক্ষর মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অক্ষম। নিরক্ষর মানুষ একদিকে যেমন নিজের উন্নতি করতে পারে না তেমনি সমাজের অগ্রগতিতে কোনাে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে না, তাই নিরক্ষরতা হল অভিশাপ।

নিরক্ষরতাকে অভিশাপ বলার কারণসমূহ

(১) হীনম্মন্যতাবােধ: নিরক্ষর ব্যক্তিরা সবসময় হীনমন্যতায় ভোগে, কারণ তাদের সঙ্গে শিক্ষিত মানুষ কোনাে বিষয় নিয়ে আলােচনা করে না, ফলে একটা দূরত্ব তৈরি হয়, যা থেকে নিরক্ষরদের মধ্য হীনম্মন্যতা জন্মায়।

(২) চিন্তাশক্তি ও মানসিক বিকাশ হয়না : নিরক্ষর মানুষদের চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে না। কারণ শিক্ষা মানুষের চিন্তন ক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়ে ব্যক্তিকে নানা সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এমন ব্যক্তির কল্পনাশক্তির বিকাশ, ভাষার বিকাশ, যুক্তি ও বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বিকাশে সাহায্যে করে।

(৩) নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত : নিরক্ষর মানুষরা রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষিত নাগরিক অধিকার গুলি সুযোগ সুবিধা নিতে পারে না, কারণ অধিকার সম্পর্কে কোন সচেতনতা তৈরি হয় না।

(৪) দরিদ্রতা : দরিদ্রতা নিরক্ষর মানুষদের নিত্যসঙ্গী হয়।

(৫) জাতীয় উৎপাদনে শামিল হতে পারে না : নিরক্ষর মানুষ কখনও আধুনিক উৎপাদন কৌশল ব্যবহার করে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় না।

(৬) জনসংখ্যা বৃদ্ধি : দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করে। নিরক্ষর মানুষরা সরকার পরিচালিত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বা পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিগুলো গ্রহণ করে না বলে অপরিকল্পিতভাবে জনসংখ্যা বাড়লে, দারিদ্রতা বাড়ে।

(৭) জাতীয় নিরাপত্তা বোধ ও সংহতি স্থাপনে অপারগ : জাতীয় অসঙ্গতির মূল কারণ হলো নিরক্ষরতা। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশের প্রতিটি মানুষের যে অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ আছে সে সম্পর্কে কোন বাঁধ তৈরি হয় না একজন নিরক্ষর মানুষের। তাই সমাজের সার্বিক সমৃদ্ধি ও উন্নতি প্রতিটি মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা বিশেষ কর্তব্য।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ

নিরক্ষরতা একটি অভিশাপ। দেশ থেকে এই অভিশাপ দূর করার জন্য ১৯৬৪-৬৬ খ্রিস্টাব্দে কোঠারি কমিশন বা ভারতীয় শিক্ষা কমিশন কয়েকটি সুপারিশ করে সেগুলি নিম্নলিখিত -

(১) ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র সফল করার জন্য নিরক্ষরতা দূর করা প্রয়োজন।

(২) প্রতিটি ৫-১১ বছরের শিক্ষার্থীদের ৫ বছরের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ন্যূনতম প্রাথমিক শিক্ষা বা সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

(৩) জাতীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির জন্য বৃত্তি শিক্ষা ও কর্ম উপযোগী শিক্ষা দিলেন জাতীয় উৎপাদন বাড়বে।

(৪) উপযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষা প্রণালীর দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

(৫) ১১-১৪ বছরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা স্কুল-ছুট বা শিক্ষা থেকে অন্য কোনো ভাবে বঞ্চিত, তাদের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষক ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

(৬) প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করতে হবে।

(৭) ১৫-৩০ বছর বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষা বা বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৮) প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করে অপচয় ও অনুন্নয়ন রােধ করতে হবে।

(৯) যারা আংশিক সময়ের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে না, তাদের জন্য ডাকযোগে শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে। সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে মাঝে শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে।

(১০) নিরক্ষরতা দূর করতে পাঠাগারের ব্যবস্থা করতে হবে, যার ফলে সকলে সহজে বই পেতে পারে।

(১১) কোঠারি কমিশন প্রস্তাবিত সুপারিশ গুলোর যথাযথ সমন্বয়সাধন ঘটাতে পারে এবং দেশের শিক্ষিত মানুষেরা এগিয়ে আসলে এই নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে সর্বোতভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

প্রবহমান শিক্ষা কাকে বলে? প্রবহমান শিক্ষা প্রকল্পের লক্ষ্য গুলি উল্লেখ করো।


প্রবহমান শিক্ষাকে কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে কী কার্যক্রম স্থির করা হয়েছে বিবরণ দাও।


কার্যকরী বা ব্যাবহারিক সাক্ষরতার উদ্দেশ্য গুলি লেখাে। আধুনিক ভারতে ব্যাবহারিক সাক্ষরতার পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করো।