কার্যকরী বা ব্যাবহারিক সাক্ষরতার উদ্দেশ্য গুলি লেখাে | আধুনিক ভারতে ব্যাবহারিক সাক্ষরতার পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করো।

কার্যকরী বা ব্যাবহারিক সাক্ষরতা

যে মাত্রার সাক্ষরতা ব্যক্তিকে সামাজিক ও পেশাগত জীবনে উপযুক্ত করে তোলে, তাকে কার্যকরী সাক্ষরতা বলে।

সাধারণ অর্থে সাক্ষরতা বলতে লিখতে, পড়তে ও সাধারণ পাটিগণিত জ্ঞানকে বোঝায়। কিন্তু কার্যকরী বা ব্যাবহারিক সাক্ষরতা বলতে বোঝায় দৈনন্দিন জীবনে স্বাক্ষরতা কি কাজে লাগানো, যে সাক্ষরতা মানুষকে তার নিজের জীবনে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে সক্রিয়তা কি আরও উন্নততর স্তরে পৌছে দিতে সাহায্য করে।

কার্যকরী বা ব্যাবহারিক সাক্ষরতার উদ্দেশ্য

(১) ভাবের আদানপ্রদান: কার্যকরী সাক্ষরতার মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিত দু-ভাবেই ভাবের আদানপ্রদান করতে হবে।

(২) দেশের উন্নতি : দেশের উন্নয়নে এই শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের জনগণের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক বিষয়ে সচেতনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে।

(৩) সমস্যার মোকাবেলা : এই শিক্ষা জনগণকে সক্ষম করে বিভিন্ন সমস্যার আন্দাজ পেতে ও সমাধানের পথ খুঁজে তার মোকাবিলা করতে।

(৪) জাতীয় ঐক্যচেতনা : এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল জনগণের পারস্পরিক ভাবের আদান প্রদান, যােগাযােগ, সংহতি বোধ গড়ে তোলা।

(৫) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে অংশগ্রহণ : ব্যবহারিক সাক্ষরতায় স্বাক্ষর মানুষজন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করবে।

(৬) পরিবেশ সচেতনতা : পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ, দূষণ রোধ, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, সম্পদের অপচয় হ্রাস, অরণ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যাবহারিক সাক্ষরতার মাধ্যমে সম্ভব।

(৭) কুসংস্কার দূরীকরণে : মানুষের মনে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার মূলক দৃষ্টিভঙ্গির অবসান ঘটানাে সম্ভব কার্যকরী সাক্ষরতার মাধ্যমে।

(৮) আদব কায়দা, রীতিনীতি শেখা : কার্যকর শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রীতিনীতি, সামাজিক আদবকায়দা, মর্যাদা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়। মানুষ অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়, লিঙ্গ বিদ্বেষ দূরীভূত হয়।

(৯) দক্ষতা বৃদ্ধি : যে ব্যক্তি যে পেশায় যুক্ত আছে সেই সম্পর্কে পেশাগত ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণ করলে, দক্ষতা ও সক্রিয়তা বাড়ে তার সঙ্গে পেশাগত উন্নতি সম্ভব হয়।

আধুনিক ভারতের কার্যকরী সাক্ষরতা বা ব্যাবহারিক সাক্ষরতার পদক্ষেপসমূহ

(১) কৃষকদের শিক্ষাদান : কার্যকরী সাক্ষরতার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল কৃষকদের শিক্ষা। ১০০টি বাছাই করা জেলায় এই ব্যাবহারিক শিক্ষা দেওয়া হয় কৃষকদের। প্রত্যেক কৃষককে যাতে উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার সম্পর্কে শেখানো যায় তার জন্য এক বিশাল অঞ্চলে রেডিয়ামের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয়। এরূপ শিক্ষাদান ১৯৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনটি জেলায় এবং ১৯৬৮-৬৯ খ্রিস্টাব্দে তা প্রসারিত হয় ১০টি জেলায়।

(২) বৃত্তিমূলক শিক্ষা : ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে Gram Shikshan Mohim (গ্রাম শিক্ষণ মহিম)-এর মাধ্যমে কার্যকরী সাক্ষরতা শুরু হয়।

(৩) বয়স্ক মহিলাদের জন্য : ১৯৭৫-৭৬ খ্রিস্টাব্দে বয়স্ক মহিলাদের জন্য এই শিক্ষা শুরু হয়। যার ফলে অশিক্ষা দূর করে মহিলাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিবার পরিকল্পনা, সচেতন মনোভাব তৈরি করতে পারে।

(৪) শ্রমিকদের জন্য শিক্ষা : ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে বৃত্তিমূলক বা পেশাভিত্তিক শিক্ষা শুরু হয় যাতে তারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে। এর জন্য শ্রমিক বিদ্যাপীঠ’ তৈরি হয়।

(৫) প্রথাগত শিক্ষা : ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫-৩৫ বছরের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা শুরু হয়, যা কার্যকরী শিখনের অন্তর্গত।