উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কী | উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য, কাঠামো, পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের বক্তব্য উল্লেখ করাে, ছকের সাহায্যে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ দেখাও।

ড, ডি এস কোঠারি নেতৃত্বাধীন ভারতীয় শিক্ষা কমিশন (১৯৬৪-৬৬ খ্রি.) শিক্ষার প্রতিটি স্তরের মতাে মাধ্যমিক স্তরের উচ্চ পর্যায়, অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক স্তর সম্পর্কে বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করেছে।

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা

মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে পরবর্তী দু-বছরের শিক্ষাস্তর হল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা। দু-বছরের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে অন্তর্ভুক্ত থাকবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় মূর্ত ধারণা ও বিমূর্ত ধারণা বাস্তবমুখী হয় বলে আত্মপ্রত্যয়, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তন ক্ষমতা, মূল্যবোধ, অহং সত্তা, আত্মতুষ্টি প্রভৃতি বৃদ্ধি পায়। কমিশনে বলা হয়, এই স্তরের শিক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নামে স্বতন্ত্র সংস্থার উপর। 

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য

(১) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: কমিশনের মতে, এই স্তরের শিক্ষার লক্ষ্য হবে জাতীয় উৎপাদন বাড়ানাে। তাই তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক উভয় প্রকৃত শিক্ষা দিতে হবে। এজন্য শিক্ষাকে বৃত্তিমুখী করার উপর গুরুত্ব দিয়েছে।

(২) গণতান্ত্রিক নাগরিকতা বিকাশে : উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর হয়। আমাদের দেশে এই ১৮ বছর বয়সে ভোটাধিকার লাভ করে। তাই এই স্তরে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি সচেতন করে তুলতে হলে তাদের পাঠক্রমে গণতান্ত্রিক নাগরিকতা বিষয়-সহ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(৩) ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র বিকাশ : উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বিকাশে সহায়তা করে। যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ, প্রবণতা, মানসিক ক্ষমতা ইত্যাদি অনুযায়ী শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে।

(৪) আর্থিক স্বনির্ভরতা দান : উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে স্বনির্ভর হওয়ার পথ প্রশস্ত করে। ফলে শিক্ষার্থীরা আর্থিক দিক থেকে স্বনির্ভর হয়।

(৫) সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের বিকাশ : কমিশনের মতে, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটিয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে তাদের গড়ে তোলা।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামাে

বর্তমানে সরকারি  উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলিতে ১৫+ বছরের শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক পাস করার পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এই শিক্ষা স্তরকে +২ স্তরকে বলা হয়। এই শিক্ষা কাঠামোটি নিম্নে উল্লেখ করা হল— 
  • উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা হবে দু-বছরের একাদশ এবং দ্বাদশ।
  • এই স্তরে শিক্ষার্থীর সময়কাল হবে ১৬+ থেকে ১৭ বছর।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমকে দুটি ধারায় ভাগ করা যায়। যথা—

[1] সাধারণ ধারার পাঠক্রম :
  • ভাষা: এখানে দুটি ভাষা আবশ্যিক। তার মধ্যে একটি আধুনিক ভারতীয় ভাষা। অপরটি ইংরেজি/অন্যান্য।
  • আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়: এই বিষয়টি হিসেবে শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয় নিতে পারে, যেমন– বিজ্ঞান বিভাগ : পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, গণিত, জীববিদ্যা, ভূগোল, পুষ্টিবিদ্যা ইত্যাদি। কলাবিভাগ : ইতিহাস, শিক্ষাবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি।
  • অতিরিক্ত বিষয়: শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করার জন্য তাদের আর-একটি অতিরিক্ত বিষয় নিতে হয়।
  • সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী: এই কার্যাবলি বলতে কর্মশিক্ষা, শারীর শিক্ষা, সমাজসেবা প্রভৃতি কার্যাবলী বোঝায়।

[2] বৃত্তিমূলক ধারার পাঠক্রম :
  • ভাষা: এখানে ‘ক’ বিভাগে আছে— মাতৃভাষা বা আধুনিক ভারতীয় ভাষা এবং ‘খ’ বিভাগে আছে— ইংরেজি/অন্যান্য। তবে ইংরেজি ভাষা প্রথম বিভাগে না থাকলে, দ্বিতীয়তে থাকা বাধ্যতামূলক।
  • আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়: এখানে পরীক্ষাগার নির্ভর বিষয়গুলো হল— পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা প্রভৃতি। শিক্ষার্থীদের যে-কোনাে তিনটি বিষয় নিতে হয়। এ ছাড়াও থাকে একটি অতিরিক্ত ভাষার, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, তর্কবিদ্যা, মনোবিদ্যা, সমাজবিদ্যা, চারুকলা ইত্যাদি।
  • বৃত্তিমূলক বিষয়সমূহ: এই বিভাগের ক্ষেত্রগুলি হল কারিগরি শিক্ষার কৃষিবিজ্ঞান, বয়নশিল্প, প্যারামেডিক্যাল ইত্যাদি।
  • সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি: এই কার্যাবলিতে কর্মশিক্ষা, শারীর শিক্ষা, সমাজসেবা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীবিভাগ

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— (১) দায়িত্ব ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, (২) লিঙ্গভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, (৩) মাধ্যম ভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও (৪) মালিকানা ভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এই শ্রেণীবিভাগ নীচে ছকের সাহায্যে দেখানো হল—

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীবিভাগ