১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রবর্তিত বয়স্ক শিক্ষা ও বিধিমুক্ত শিক্ষা | বয়স্ক শিক্ষা প্রসারের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬-এর বক্তব্য

বয়স্ক শিক্ষা প্রসারের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬-এর বক্তব্য

জাতীয় শিক্ষানীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হল সাম্যের জন্য শিক্ষা। অর্থাৎ তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, নারী, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

বয়স্ক শিক্ষা: সমাজের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেছিলেন ২ দেশের সর্বোত্তম উন্নতির পর্যায়ে পৌছায় এবং গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করতে হলে দেশের সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন।

জাতীয় শিক্ষানীতির (১৯৮৬ খ্রি.) চতুর্থ অংশে বয়স্কশিক্ষা সম্বন্ধে আলােচনা করা হয়েছে। এই কর্মসূচির জাতীয় লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য দূরীকরণ, জাতীয় সংহতি, পরিবেশ সংরক্ষণ, কৃষ্টিমূলক কাজে উৎসাহদান ইত্যাদি। বয়স্ক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা দুটি দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যায়— (১) ব্যক্তিগত উন্নতি ও (২) সামাজিক উন্নতি। অর্থাৎ ব্যক্তির নিজস্ব দৈহিক, সামাজিক, পেশাগত উন্নতির জন্য যেমন বয়স্ক শিক্ষার প্রয়োজন আছে, তেমনি সমাজের জাতীয় উৎপাদন, গণতন্ত্র, জাতীয় সংহতি প্রভৃতি বজায় রাখার জন্য বয়স্ক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

এই সমস্ত গুরুত্ব উপলব্ধি করে NPE-1986 বয়স্কশিক্ষা সম্পর্কে আলােচনা করে। সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ মানবশক্তি। বিভিন্ন বিকাশমূলক কর্মসূচিতে এই মানব শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। যেমন—দারিদ্র্য দূরীকরণ, কুসংস্কার দূর করা, জাতীয় সংহতি, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রভৃতি। তাই প্রথমেই যেটা করতে হবে তা হল— ১৪-৩৫ বছরের বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা। এই কাজে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, রাজনৈতিক দল ও তাদের সংগঠনগুলি, বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষক, ছাত্র, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, নিয়োগকর্তা ইত্যাদি সকলকে এই প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

শিক্ষা বলতে বোঝায় লেখা ও পড়া উভয় বিষয়ে দক্ষতা অর্জন। তাই বয়স্কশিক্ষা মানে শুধুমাত্র লেখা বা পড়া হলেই চলবে না। তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কার্যকরী জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বাস্তবসম্মত ধারণা গড়ে তুলতে হবে। বয়স্ক শিক্ষা ক্ষেত্রে সংশোধিত নীতি বা বয়স্ক ও প্রবহমান শিক্ষার (Continuing Education) কর্মসূচি গুলি হল—
 
(১) সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও নিয়োগকর্তাদের মাধ্যমে কর্মচারীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 

(২) গ্রামাঞলে বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা।

(৩) গ্রাম অঞ্চলের চলমান শিক্ষা কেন্দ্র (Centre of Continuing Education) স্থাপন করা।

(৪) মাধ্যমিক পরবর্তী স্তরের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন। 

(৫) বেতার, টিভি ইত্যাদি গণমাধ্যমগুলোকে এই শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা।

(৬) এদের জন্য বিশেষ পুস্তক প্রকাশ, লাইব্রেরি স্থাপন করা ও তার প্রসার ঘটানো।

(৭) শিক্ষার্থীদের নিজস্ব দল ও সংগঠন তৈরি করা।

(৮) দূরাগত শিক্ষার মাধ্যমে বয়স্ক শিক্ষার প্রসার ঘটানো।

(৯) বৃত্তি শিক্ষার উপযোগী কর্মসূচি তৈরি করা। 

(১০) শ্রমিকদের, কর্মচারীদের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়।

(১১) বয়স্ক শিক্ষার জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষা ও ডাকযোগে শিক্ষা ব্যবস্থা করা।

(১২) রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, শিক্ষিত জনসাধারণ আন্তরিকভাবে যাতে এই কাজে নিজেদের নিয়োগ করতে পারে, সে-কথা বলা হয়েছে।

(১৩) বয়স্কশিক্ষার কাজে নিযুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে।

বয়স্ক শিক্ষা প্রসারের জন্য দেশের আপামর জনসাধারণকে সক্রিয় ভাবে সহযোগিতা করতে হবে। সামাজিক কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূর করে যুক্তি ও বুদ্ধি সম্মত নাগরিক গড়ে তুলতে বয়স্ক শিক্ষা অপরিহার্য।

জাতীয় শিক্ষানীতি (১১৮৬খ্রি.) প্রবর্তিত বিধিমুক্ত শিক্ষা :

স্কুলছুট ছাত্রছাত্রী ও বিদ্যালয় শিক্ষার আঙিনায় পৌঁছাতে না পারা মানুষজনের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রিঃ.)-তে বিধি মুক্ত শিক্ষা সংস্থান রাখা হয়েছে। সংস্থানগুলি নিম্নলিখিত —

(১) বিদ্যালয় ছুট ছাত্র ছাত্রী বা স্কুলে না যেতে পেরে যারা কাজকর্মে নিয়োজিত এরূপ শিশু কর্মী ও গৃহকর্মে নিযুক্ত মেয়ে— এদের জন্য বৃহদাকারের এবং বিধিবদ্ধ কর্মসূচি-সহ বিধিমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে।

(২) বিধি মুক্ত শিক্ষা কেন্দ্র গুলির শিক্ষা পরিবেশের উন্নয়নকল্পে আধুনিক প্রযুক্তিগত উপকরণ ব্যবহার করা হবে। আঞ্চলিক প্রতিভাবান এবং উৎসর্গীকৃত যুবক ও যুবতীদের এসব কেন্দ্রে শিক্ষকতার জন্য নির্বাচন করা হবে এবং তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থাও গৃহীত হবে। উপযুক্ত বিবেচনায় এই শিক্ষকদেরকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। আনুষ্ঠানিক ও বিধি মুক্ত শিক্ষার গুণগত মানের সমতা রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গৃহীত হবে।

(৩) জাতীয় অত্যাবশ্যক পাঠ্যসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে বিধি মুক্ত শিক্ষার পাঠক্রম স্থিরীকৃত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হবে, তবে এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আঞ্চলিক প্রয়োজনীয়তার দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা-সহায়ক উপকরণ সরবরাহ করা হবে। বিধি মুক্ত শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের অনুকূল আকর্ষণীয় পরিবেশ, খেলাধুলার মতাে আনন্দদায়ক কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক কার্যাবলি, ভ্রমণ ইত্যাদি যুক্ত হবে।

(৪) ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে যাদের বয়স ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে, তারা যাতে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা আওতাভুক্ত হতে পারে, তার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।

(৫) স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও পায়ের মাধ্যমে বিধি মুক্ত শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনার অধিকাংশ দায়িত্ব অর্পিত হবে। সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্রের সামাজিক দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

(৬) জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রি.) স্কুলছুটদের শিক্ষার জন্য সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে। বিদ্যালয়ে যাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার রাখা যায় সেই উদ্দেশ্যে সমগ্র দেশের সর্বনিম্ন অংশ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার জন্য এই শিক্ষানীতিতে এক সুশৃঙ্খল উপায় অবলম্বন করা হবে। বিধি মুক্ত শিক্ষার উন্নয়নে এই প্রচেষ্টা সংবলিত হবে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে যাদের বয়স ১১ বছর হবে তারা যে পরবর্তী পাঁচ বছর বিদ্যালয়ে অথবা বিধি মুক্ত শিক্ষা কেন্দ্র পড়াশোনা করেছেন এই সম্পর্কে নিশ্চিত করবে এই শিক্ষানীতি। এ ছাড়া ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১৪ বছর বয়সী সকল শিক্ষার্থীদের জন্য অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।

কুসংস্কার, অনুন্নয়ন প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতা বয়স্ক শিক্ষা ও বিধি মুক্ত শিক্ষার কর্মসূচির অগ্রগতির পথে কিছু বাধা সৃষ্টি করে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা কর্মসূচির সাফল্য জাতির শিক্ষার উন্নয়ন অনেকটা পথ অগ্রসর হয়েছে।

মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখী করণ এবং কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য উল্লেখ করো।


উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬ খ্রি.)-তে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় | উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৯৮৬ ও ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের সুপারিশ গুলি কী কী ছিল?


মডেল স্কুল ও স্বশাসিত কলেজ সম্পর্কে লেখাে।