১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতির পশ্চাৎপট উল্লেখ করাে। উক্ত শিক্ষানীতির মূল বিচার্য বিষয় গুলো আলােচনা করে।

NEP-1986-এর পশ্চাৎপট

কোঠারি কমিশনের (১৯৬৪-৬৬ খ্রি.) রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর সুপারিশগুলি নিয়ে বিভিন্ন স্তরে দীর্ঘ আলােচনা হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার প্রথম জাতীয় শিক্ষানীতি রচনা করে। পরবর্তীকালে এই শিক্ষানীতি সংশোধিত আকারে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ওই সময় দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের ফলে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষানীতি কার্যকর করা যায়নি। এর কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর জাতীয় শিক্ষানীতির মূল্যায়ন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল।

গণতান্ত্রিক প্রশাসনিক কাঠামোতে এটা লক্ষ্য করা যায় যে, জাতীয় উন্নয়নমূলক কোন কোন নীতি, পরিকল্পনা, আইন অথবা নির্দেশাত্মক বিষয় পার্লামেন্টের কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে জনগণের থেকে নতুন কিছু বলার বা পরামর্শ প্রদানের সুযোগ থাকেনা। কিন্তু ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষানীতি প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দান পর বারবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বিভিন্ন ঘটনা প্রসঙ্গে নতুন শিক্ষানীতি বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে শিক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে তিনি বললেন, “The World is progressing tremendously rapidly. The only thing that can keep India abreast of this progress is a solid grounding in education for all our people.” এই ঘটনার পরই প্রকাশিত হল "Challenge of Education : A Policy Perspective.' এই গ্রন্থের মধ্যে ছিল অতীতের তথ্যভিত্তিক ত্রূটি বিচ্যুতি-সহ নানা প্রস্তাব। শিক্ষানীতি সম্পর্কে আরও বলা হয় যে, জাতীয় স্তরে তর্কবিতর্ক হােক— সকল স্তরের প্রস্তাব ও মতামত নিয়ে আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতি স্থিরীকৃত হবে। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এই প্রতিবেদনটি সংসদের উভয় সভায় অনুমোদন লাভ করে।

জাতীয় শিক্ষানীতির মূল বিচার্য বিষয়

একবিংশ শতকের  প্রেক্ষাপটে নতুন এই শিক্ষানীতিতে মৌলিক অংশ হবে সে চেষ্টায় শিক্ষা লাভের অবিরাম জীবনধর্মী প্রয়াস। জীবনে মানোন্নয়ন এমন ধারায় হওয়া প্রয়োজন যেন পরবর্তী বংশধর দের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুস্থতা নিয়ে স্বয়ম্ভর ও সম্পদশালী হতে পারে। অবশেষে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে যে শিক্ষানীতি প্রকাশিত হল তার বিষয়বস্তু নিম্নরূপ—

অংশ-1 : ভূমিকা (Introductory) : এই অংশে শিক্ষানীতি বিশেষজ্ঞরা শিক্ষা নীতি নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। এই প্রসঙ্গে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষানীতি ও তার ফলশ্রুতি সম্পর্কে এই অংশে আলোচনা করা হয়েছে। এই অংশে ব্যক্তির উন্নয়নে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ব্যক্তির রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক ও কারিগরি বিদ্যার বিকাশ, গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলে মধ্যবর্তী ব্যবধান হ্রাস সম্পর্কে বলা হয়েছে।

➧ ভারতের সম্পদ হল মানুষ। পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তার উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

➧ মহিলাদের মধ্যে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসংখ্যার হ্রাস ঘটাতে হবে।

➧ গ্রামের দুর্বল পরিকাঠামাের উন্নতি ঘটিয়ে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। শহরাঞ্চলের সঙ্গে গ্রামের যােগাযােগ সুদৃঢ় করতে হবে উন্নয়নের স্বার্থে। 

➧ শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতান্ত্রিক চেতনা ইত্যাদি জাগ্রত করতে হবে যাতে সুরাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন গড়ে ওঠে।

অংশ-2 : শিক্ষার উপাদান ও ভূমিকা :

2.1 : আমাদের জাতীয় অনুভূতিতে শিক্ষা হল সকলের জন্য। শিক্ষাই হল বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের মূলসূত্র।

2.2 : শিক্ষার সংস্কৃতি মূলক ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা আমাদের অনুভূতিকে এবং জাতীয় সংহতি সম্পর্কে ধারণা স্বচ্ছ করে। আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবধারা ও স্বাধীন মানসিকতা গড়ে তােলার জন্য শিক্ষার ভূমিকা অনন্য। জাতীয় শিক্ষার জন্যই আমাদের সংবিধানে সযত্নে লিখিত সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয় সংহতি ও গণতন্ত্রের ফলশ্রুতি বিষয়ক ধারণা সকলের নিকট স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

2.3 : অর্থনৈতিক বিভিন্ন স্তরের বা বিভাগের অনুকূল জনশক্তির (Manpower) সরবরাহে শিক্ষার ভূমিকা অনন্য। শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই গবেষণা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া পরিচালিত। তাই শিক্ষাই হল জাতীয় স্বনির্ভরতার স্তম্ভ স্বরূপ।

অংশ-3 : শিক্ষায় জাতীয় ব্যবস্থা :

3.1 : আমাদের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত মৌলিক সত্যের উপর ভিত্তি করেই জাতীয় শিক্ষা সম্পর্কিত ধারণা সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

3.2 : জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় এই কথা বলা হয়েছে যে, একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত জাতি-ধর্ম-অঞ্চল ও স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সমমানের শিক্ষা লাভ করবে।

3.3 : জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা মূলত সমগ্র জাতির জন্য একটা সাধারণ শিক্ষা কাঠামোর কথা ব্যক্ত করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে (১০+২+৩) কাঠামোটি বর্তমানে দেশের প্রায় সর্বত্র গৃহীত হয়েছে।

3.4 : মৌলিক বা আবশ্যিক সাধারণ পাঠক্রমের (Core Curriculum) অন্তর্ভুক্ত হবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং সাংবিধানিক কর্তব্য-সহ জাতীয় ভাবধারা বিকাশে সহায়ক অন্যান্য বিষয় নিয়ে। যেমন— ঐতিহ্য (সাধারণ সাংস্কৃতিক/কার্যভিত্তিক), গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা, নারী-পুরুষের সমান অধিকার, পরিবেশের সংরক্ষণ, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ।

3.5 : জাতীয় শিক্ষার একটি অপরিহার্য লক্ষ্য হল— আন্তর্জাতিক সমবায় ও বিশ্বশান্তি অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণাকে সুদৃঢ় করা।

3.6 : শিক্ষাক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে যাতে সকল ভারতীয় সমসুযোগ পেতে পারে— সেরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।

3.7 : গবেষণা ও উন্নয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এমন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ স্থাপিত হয়, যেন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিতে সম্পদ ও শক্তি বিনিময়ের সুযােগ সৃষ্টি হয়।

3.8 : শিক্ষাগত কর্মসূচির রূপায়ণের উদ্দেশ্যে শিক্ষা-সম্পদের আদান প্রদান, বৈষম্য দূরীকরণ, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা ও সাক্ষরতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের গবেষণা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে যাতে প্রত্যেকের মনে জাতীয় দায়িত্বের অনুভূতি জেগে ওঠে সেদিকে লক্ষ দিতে হবে।

3.9 : ভারতের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার শক্তি বৃদ্ধিতে যেসব সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যেমন—UGC, AICTE, MCI, NCERT, NIEPA ইত্যাদির কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা।

অংশ-4 : সাম্যের অনুকুলের শিক্ষা :

4.1 : নতুন শিক্ষানীতি বৈষম্য দূরীকরণের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করবে।

4.2 : নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও নারী জাতির কল্যাণে শিক্ষার একটি উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা স্থিরীকৃত হয়, যার প্রভাবে নারী শিক্ষার উদ্যম ও উৎসাহ ত্বরান্বিত হবে।

4.3 : নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরে তপশিলি ও বর্ণহিন্দুদের এবং তপশিলি উপজাতি শিক্ষায় যে বৈষম্য রয়েছে, তার অবসান ঘটিয়ে সর্বত্র সকলের জন্য সমসুযোগের ব্যবস্থা করার উপর কেন্দ্রীয় দৃষ্টি নিবন্ধ করা হবে।

4.4 : ভারতে এমন অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে যারা চলতি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত অথবা অনগ্রসর। সাম্য ও সামাজিক ন্যায়নীতির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই সব সম্প্রদায়ের প্রতি অধিক মনোযোগ দিতে হবে।

4.5 : জাতীয় শিক্ষানীতির অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হবে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীরা যে সাধারণ মনুষ্য সমাজের অংশীদার হিসেবে। সমন্বিত হতে পারে।

4.6 : শিক্ষা অজ্ঞতা ও নির্যাতন থেকে মানুষকে মুক্তির কৌশল শেখায়। আধুনিক যুগে এই শিক্ষা লেখা ও পড়ার সামর্থ্যকে নির্দেশ করে। কারণ লেখা ও পড়ার ক্ষমতা মানুষকে শিক্ষা লাভের ক্ষমতাবান করে। এখানে বয়স্কদের সাক্ষরতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অভিব্যক্ত।

অংশ-5: বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার পুনর্গঠন :

5.1 : শিশু সংক্রান্ত জাতীয় নীতি শিশুদের উন্নয়নে বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। যেসব জনগোষ্ঠীর বংশধরকে শিক্ষায় প্রথম অংশগ্রহণ করছে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

5.2 : পুষ্টি ও স্বাস্থ্য, সামাজিক, শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও প্রাক্ষোভিক উন্নয়ন ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ের স্বীকৃতি জানিয়ে ECCE (Early Childhood Care and Education) সমস্থা শিশুকল্যাণ কর্মসূচিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রয়োগ করা যাবে।

5.3 : প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত নতুন নীতি দুটি বিষয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে। যথা— (১) সমস্ত ছেলে মেয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা ও ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের শিক্ষার রাখা। (২) শিক্ষার গুণগত মানের প্রকৃত উন্নয়ন করা।

5.4 : স্কুলছুট ছাত্রছাত্রী, স্কুলবিহীন অঞ্চলের শিশুরা যারা স্কুলে যেতে না পেরে কাজ কর্মে নিয়োজিত, এরূপ শিশুৰ্মী ও গৃহকর্মে নিযুক্ত মেয়েদের জন্য বৃহদাকারে এবং বিধিবদ্ধ কর্মসূচি-সহ বিধিমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে।

5.5 : মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, মানবিক বিষয় ও সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন ভূমিকার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। শিক্ষার্থীদের মনে ঐতিহাসিক চেতনা, জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি, নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভের সুযোগ সৃষ্টি করবে মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর। 

5.6 : প্রতিভাবান অথবা বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্ন শিশুদের বিকাশ সাধন দ্রুততর করে তাদের আর্থিক অবস্থার বিচার না করে উচ্চ মানের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পথনির্দেশক বিদ্যালয় (Pacesetting school) অর্থাৎ নবােদয় বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।

5.7 : ব্যক্তিগত কর্মনিযুক্তির সুযোগ বৃদ্ধি, দক্ষ জনশক্তির চাহিদা ও জোগানের অসামঞ্জস্যতা দূরীকরণ ও উচ্চশিক্ষিতদের জন্য একটি পরিবর্তন (substitute) উপায় নির্ধারণের উদ্দেশ্যে বৃত্তিমুখী শিক্ষা বিষয়ক সুচিন্তিত অভিমত প্রতিফলিত হয়েছে এই শিক্ষানীতিতে।

5.৪ : উচ্চশিক্ষা মানুষকে জটিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক ইত্যাদি মানবাধিকারের সঙ্গে জড়িত অধিক সমস্যাবলির সমাধানে উদ্বুদ্ধ করে।

5.9 : উচ্চশিক্ষা বিষয়ক বিশেষ পরিকাঠামো গঠনের মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় উন্নয়নে সাহায্য করাই। হল এই শিক্ষানীতির অন্যতম লক্ষ্য। 

5.10 : শিক্ষায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং উচ্চশিক্ষার সুযােগ সকলের নিকট পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে এই শিক্ষানীতিতে। 

5.11 : যে-সমস্ত চাকরির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কোণ প্রয়োজন হয় না সেসব ক্ষেত্রে চাকরি ও ডিগ্রির মধ্যে সম্পর্কের অবসান গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।

5.12 : শিক্ষায় গান্ধীজীর আদর্শ অনুসারে নতুন ধাঁচের গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও বর্ধিত হবে। এ ছাড়া গান্ধিজির বুনিয়াদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে।

অংশ-6 : টেকনিক্যাল ও ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা :

সম্পর্কের নিবিড়তা ও পারস্পরিক নির্ভরতার পরিপ্রেক্ষিতে Technical এবং Management শিক্ষাকে একত্রে বিবেচনা করা প্রয়োজন। নতুন শতাব্দীর আগমনের সঙ্গে অর্থনীতি, সামাজিক পরিবেশ, উৎপাদন ও ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের প্রগতি এবং জ্ঞানের সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে  যে পরিবর্তনের চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তার সঙ্গে সংগতি রেখেই Technical ও Management শিক্ষাকে পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে এই শিক্ষানীতিতে।

অংশ-7 : শিক্ষাব্যবস্থাকে কার্যকরীকরণ :

শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মমুখর করার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে সকল কৌশল প্রতিপাদনের অঙ্গীকার করা হয়েছে সেগুলি হল— (১) শিক্ষকের আন্তরিক ও নিষ্ঠামূলক কর্মতৎপরতা এবং বাধ্যবাধকতা পালনের দায়িত্ব, (২) শিক্ষার্থীর কল্যাণ সূচক ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং আচার-আচরণের বাণী রীতিনীতি পালনের প্রতি লক্ষ্য নির্দেশ করা, (৩) প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অনুকূল যাবতীয় সুযোগ সুবিধার সৃষ্টি করা এবং (৪) জাতীয় অথবা রাজ্যস্তরে ধার্য শিক্ষার মান ও বিধি অনুসারে প্রতিষ্ঠানের গুণবিচারী রীতি প্রচলনের ব্যবস্থা করা।

অংশ-৪ : শিক্ষার বিষয়বস্তু ও পদ্ধতির পুনর্বিন্যাস :

8.1 : উন্নত শিক্ষা বিষয়সূচি ও পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সৌন্দর্য, ঐক্য ও শিষ্টাচার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির অনুকূলে শিশুদের সক্ষম করে তুলতে হবে।

8.2 : সামাজিক, নৈতিকতা ও শাস্ত্রগত মূল্যবোধের অনুশীলনের অনুকূলে পাঠক্রম সংগঠন করে শিক্ষাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

৪.3 : ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষানীতিতে ভাষা সংক্রান্ত প্রশ্নটি বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে। এর অত্যাবশ্যকীয় বিষয়গুলির বিশেষ পরিবর্তন ঘটানােও আর সম্ভব নয়। অতীতের মতাে আজও এর প্রয়োজন আছে। কিন্তু ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ধর্ম নীতির বাস্তবায়ন আজও অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। সুতরাং সেই নীতিকেই অধিক উদ্যমে ও উদ্দেশ্য-সহ রূপায়ণ করতে হবে।

8.4 : গণশিক্ষার সার্থকতার জন্য সকল স্তরের মানুষ যাতে স্বল্প মূল্যে সহজ পুস্তক সংগ্রহ করতে পারে, তার জন্য প্রয়াস চালানো প্রয়োজন।

8.5 : উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর ও ক্রিমের মধ্যে যোগসূত্র রচনার ক্ষেত্রে আধুনিক যােগাযােগ প্রযুক্তি বিশেষ শক্তিশালী। শিক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংবাদ সরবরাহ, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও বাঞ্ছনীয় মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য শিক্ষাগত প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হবে।

8.6 : স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষায় পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা অপরিহার্য। তাই এই পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়টি শিক্ষার সর্বস্তরে সমন্বিত হবে।

৪.7 : বিদ্যালয় স্তরে অঙ্ক ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে এমনভাবে সুসংগঠিত করতে হবে যাতে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর মনে সত্যানুসন্ধান, সষ্টিধর্মিতা, ব্যক্তি নিরপেক্ষতা প্রবণতা, প্রশ্ন করার সহজ এবং সৌন্দর্য প্রীতির মতো মূল্যবােধ জেগে ওঠে এবং এগুলো যেন অনুকুল সামর্থ্য অর্জনে সক্ষম হয়। বিদ্যালয়গুলিতে কম্পিউটার ব্যবস্থার প্রবর্তন শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত মানে পৌছে দেবে।

৪.৪ : খেলাধুলা ও শারীর শিক্ষা শিক্ষণ প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই এই বিষয়টি শিক্ষাকর্মের কৃতিত্ব মূল্যায়নের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হিসেবে গণ্য হবে। শারীরশিক্ষা, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য জাতীয় স্তরে একটি বিশেষ পরিবেশ গড়ে তোলা হবে।

৪.9 : কৃতিত্বের বিচার হল শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অঙ্গ। সুসংগঠিত শিক্ষা প্রয়াসের অঙ্গ হিসেবে পরীক্ষা ব্যবস্থাকে এমন ভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন এর মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত উন্নয়ন সম্ভব হয়।

অংশ-9 : শিক্ষক :

9.1 : যে-কোনাে সমাজের সামাজিক ও কৃষ্টিগত চরিত্রের দিকটি শিক্ষকের মর্যাদার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। সরকার এবং সমগ্র জনসমাজের পক্ষ থেকে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন, কেন তার শিক্ষককে সৃষ্টিমূলক কর্মে অনুপ্রাণিত করে।

9.2 : শিক্ষক সংগ্রহের প্রক্রিয়া পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন। কার্যকরী প্রয়োজন এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষাগত গুণ ও নিরপেক্ষ তাই হবে শিক্ষক সংগ্রহের ভিত্তি।

9.3 : শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং পেশাগত উন্নয়নে শিক্ষক সংঘ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 
9.4 : শিক্ষক-শিক্ষণ একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। শিক্ষক-শিক্ষণের নতুন কর্মসূচি নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেবে। প্রতিটি জেলায় District Institute of Education and Training (DIET) প্রতিষ্টিত হবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক, Non-formal এবং বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের চাকরিরত অবস্থায় অথবা চাকরি পূর্ব অবস্থায় শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে।

অংশ-10 : শিক্ষা ব্যবস্থাপনা : 

NEP-1986-তে বলা হয়েছে যে, শিক্ষা পরিকল্পনা ও পরিচালনার সর্বাধিক প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শিক্ষা পরিচালনা সম্পর্কে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তা নিম্নরূপ -

➤ শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার উদ্ভাবন এবং তার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ও জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা মধ্যে সমন্বয়সাধন।

➤ বিকেন্দ্রীকরণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা প্রসঙ্গে স্বায়ত্তশাসনের প্রবণতা সৃষ্টি।

➤ শিক্ষা পরিচালনায় বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী প্রয়াসের সঙ্গে জনগণকে যুক্ত করা।

➤ শিক্ষা প্রসঙ্গে ধার্যের উদ্দেশ্য ও আদর্শ পরিপ্রেক্ষিত বাধ্যবাধকতা পালনের নীতি নির্ধারণ করা।

অংশ-11 : সম্পদ ও পুনঃপরীক্ষা :

সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার ও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্য নীতি-সহ ব্যবহারিক উদ্দেশ্য এবং ভারতীয় সমাজ জীবনের উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্যের উপর NEP-1986 শিক্ষানীতিতে গুরুত্বারোপ করার কথা বলা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যপূরণের জন্য সুসংবদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে কর্মসূচির মাত্রা ও প্রকৃতি অনুসারে বিনিয়োগ করা হবে।

অংশ-12 : ভবিষ্যৎ :

ভারতে ভাবী শিক্ষাব্যবস্থার গঠন এত জটিল যে, একে সুস্পষ্ট রূপে অনুধাবন করা যায় না। তবুও আমাদের ঐতিহ্যের দিক থেকে শিক্ষা বুদ্ধিগত ও আধ্যাত্মিক কৃতিত্বের সর্বাধিক পুরস্কার প্রদান করে। সুতরাং, এটা আশা করা সমীচীন যে, NEP-1986 বা জাতীয় শিক্ষানীতি এই লক্ষ্যপূরণে নিশ্চয়ই সমর্থ হবে।

স্ত্রী শিক্ষা প্রসারে কোঠারি কমিশনের অভিমত কী? সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবােধ গঠনে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ ব্যক্ত করো।


অপচয় ও অনুন্নয়ন বলতে কী বোঝো? শিক্ষায় সমসুযোগের বৃদ্ধি করা, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা ও জাতীয় সংহতি রক্ষায় কোঠারি কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করাে।


কোঠারি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে যে জাতীয় শিক্ষানীতির ১৭ দফা বিষয়ে ঘোষণা করা হয়, তার মধ্যে যে-কোন চারটি বিষয় পর্যালোচনা করো।